আইনি সহায়তার জন্য এপিপি পাচ্ছেন ডিসিরা

ডিসি সম্মেলনের শেষ দিন: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত আলোচনায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে সে জন্য ডিসিদের মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজার বিষয়ে আপিল নিষ্পত্তিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রতি জেলায় একজন করে সহকারী সরকারি কৌঁসুলিকে (এপিপি) দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সম্মেলনে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ডিসিদের উদ্দেশে বলেছেন, সরকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করবে। এ জন্য ডিসিদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
গত কয়েক বছরের ডিসি সম্মেলনে ডিসিদের মূল দাবি ছিল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা বাড়ানো। সেই দাবি অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা বাড়িয়ে গত (জুন) মাসে আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এই সংশোধনীর ফলে দোষ স্বীকার না করলেও ম্যাজিস্ট্রেট চাক্ষুষ ঘটনা, সাক্ষীদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দিতে পারবেন। বর্তমানে ভ্রাম্যমাণ আদালত কেবল অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকার করলেই দণ্ড দিতে পারেন।
এবারের ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে ডিসিদের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগের দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে ডিসিদের যুক্তি হলো, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজার বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আসামিপক্ষের আপিল মামলায় সরকারি কৌঁসুলি না থাকায় সেখানে অনেক দোষী ব্যক্তি অব্যাহতি পেয়ে যান।
গতকাল আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় তাঁদের (ডিসি) আইনি সহায়তা দিতে একজন করে এপিপি দেওয়া হবে। মামলার জট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষকে উৎসাহিত করা এবং এ বিষয়টি প্রচারের জন্য তৎপর হতে ডিসিদের অনুরোধ জানান আইনমন্ত্রী।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে গুরুত্ব: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত আলোচনায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে সে জন্য ডিসিদের মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সম্মেলন শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা নীতিনির্ধারণীর বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর আগে বিষয়টি বলেছেন। এখন জনপ্রশাসনমন্ত্রীও বললেন। সুতরাং তাঁরা (সরকার) এটা চান। বিকেন্দ্রীকরণের জন্য স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য প্রস্তুতিও নিতে হবে।
সম্মেলনের একটি সূত্র বলেছে, চাকরিজীবনে একজন কর্মকর্তার সচিবালয়ে ও মাঠ প্রশাসনে পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে একটা নীতিমালা করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানানো হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আলোচনা শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, ডিসিদের বলা হয়েছে, যুগ পাল্টেছে, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যাঁরা জনপ্রশাসনে আছেন তাঁদের গণমাধ্যমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে, গণমাধ্যমবান্ধব হতে হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়বিষয়ক আলোচনায় ডিসিদের নদী দখল রোধে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ডিসিদের বলা হয়েছে, প্রতিটি নদীর সীমানা চিহ্নিত করে দখল রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
সম্মেলন শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, সার্বিকভাবে এ সম্মেলন নিয়ে তাঁরা খুব খুশি। সম্মেলনের জন্য মোট ২৫৩টি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিরা। এর সঙ্গে তিন দিনের আলোচনায় আরও ২৮১টি প্রস্তাব উঠে এসেছে। এর মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.