প্রভু! বিচারককে ক্ষমা কর সে জানে না কী করেছে

২২ বছরের প্রলম্বিত তর্ক-বিতর্ক, সাজা মওকুফের আবেদন আর টানাহিঁচড়ার অবসান ঘটলো বৃহস্পতিবার। ৫৪তম জন্মদিনেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলল ১৯৯৩ সালের ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ মুম্বাই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত ইয়াকুব মেমন। ফাঁসি হবে কি হবে না তা নিয়ে রাতভর নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে সকাল সাড়ে ৬টায় মহারাষ্ট্রের নাগপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ভারতে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের ঘটনা খুবই কম। দেশটিতে ২০০৪ সাল থেকে মাত্র তিন জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ভারতের কয়েকশ’ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, আইন বিশেষজ্ঞ এবং সিপিএম-এনসিপি-বিজেপিসহ বিভিন্ন দলের এমপিরা সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখে বলেছেন, তার ফাঁসির সাজা মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া যেতে পারে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় সুপ্রিমকোর্ট ফাঁসি স্থগিত করতে ইয়াকুবের শেষ মুহূর্তের আবেদন নাকচ করেন। ইয়াকুবের শেষ মুহূর্তের আবেদন নিয়ে শুনানির জন্য নজিরবিহীনভাবে গভীর রাতে সুপ্রিমকোর্ট খোলা হয়। সর্বোচ্চ আদালত শুনানি শেষে তার আবেদন খারিজ করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বুধবার ইয়াকুবের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দেন এবং তার আগে তার ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্ট।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে পরপর বিস্ফোরণে তৎকালীন বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) শহরে ২৫৭ জন নিহত ও ৭০০ জন আহত হয়েছিল। তদন্তে প্রমাণিত, বিস্ফোরণের পুরো পরিকল্পনাই করেছিল মেমন পরিবার। ঘটনার আগে পরিবারের অধিকাংশই দেশ ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে ইয়াকুব আত্মসমর্পণ করে। সেই আত্মসমর্পণ শর্তাধীন ছিল কি-না (অর্থাৎ ইয়াকুবকে প্রাণদণ্ড দেয়া হবে না), এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ২০০৬ সালে প্রথম ফাঁসির রায় শুনে ইয়াকুব চিৎকার করে বলেন, হে প্রভু! বিচারককে ক্ষমা কর, সে জানে না- কী করেছে।’ সর্বশেষ তার প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে ইয়াকুব বলেন, ‘নিরপরাধ মানুষদের সন্ত্রাসী বানানো হচ্ছে।
শেষ ইচ্ছে মেয়ের সঙ্গে কথা
বুধবার রাতেই নাগপুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন ইয়াকুব মেমনের দুই ভাই সুলেইমান এবং উসমান। তারা রাতে হোটেলে ছিলেন। মুম্বাইয়ের মাহিমের বাড়িতে ছিলেন ইয়াকুবের স্ত্রী ও কন্যা। জানা গেছে, ফাঁসির আগে শেষ ইচ্ছে হিসেবে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চায় ইয়াকুব। সেই ইচ্ছা মঞ্জুর হয়। টেলিফোনে দুই মিনিট মেয়ের সঙ্গে কথা হয় তার। এভাবেই টেলিফোনে কথা বলে শেষ ইচ্ছা পূরণ হয় মেমনের।

No comments

Powered by Blogger.