ড. কামালের নেতৃত্বে রাজনৈতিক প্লাটফরম গঠনের আহ্বান

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক প্লাটফরম গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। যারা দেশকে ভালোবাসেন, গণতন্ত্র, সুশাসন চান এবং রাজনীতিতে একটি আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারবেন তাদের নিয়ে এই প্লাটফরম গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ ধরনের একটি প্লাটফরম গঠন করে সুনিদিষ্টভাবে কর্মপন্থা নিয়ে রাজনৈতিকভাবে সবধরনের সমস্যা মোকাবেলার পরামর্শ দেন তারা।
রাজধানীর কাকরাইলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের কাছে এই আহ্বান জানান।
চাচক্রে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব:) মান্নান, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া, জেএসডি সাধারণ সম্পাক আবদুল মালেক রতন, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম ও সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সার এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ ডা: মিলনের মা সেলিনা আক্তার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জি এম কাদের বলেন, জনগণ রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়েছে। এখন দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি অনুপস্থিত। এজন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য প্লাটফরম দরকার। বর্তমান পশ্চাৎমুখী রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তিনি ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘আমি ড. কামাল হোসেনের সাথে আছি। এর পাশাপাশি একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম গঠনে ড. কামাল হোসেনকে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এরশাদের ছোটভাই জি এম কাদের আরো বলেন, আমাদের এখন আরেকটা সংগ্রাম করার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘আলোচনা করে আর কোনো সমাধান হবে না। যেকোনো আন্দোলনের জন্য একজন নেতা দরকার। ছোট হলেও একটি গ্রহণযোগ্য এজেন্ডা নিয়ে আমাদের বসতে হবে। তারপর আমাদের আন্দোলনে নামতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ব্যাপারে ড. কামাল চাইলেই তাকে পাশে পাবেন বলে তিনি জানান। ২০১৩ সালের নভেম্বরে তখনকার বাণিজ্য মন্ত্রী জি এম কাদের মহাজোট সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এভাবে দুই দলের মধ্যে জনগণকে আর ঘুরপাক খেতে দেয়া যায় না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, জনগণ রাজনীতিবিদদের ভয় পায়, সম্মান করে না। তিনি বলেন, জনগণকে ভুলপথে ভুলভাবে পরিচালিত করা হচ্ছে। এখন জনগণের আস্থা অর্জনে একটি নির্ভরযোগ্য আস্থাশীল প্লাটফরম করতে হবে।
সেলিনা আক্তার বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি ব্যথিত, মর্মাহত ও ফ্রাসটেটে আশাহত। তিনি বলেন, জাতির এই অবস্থার জন্য ডা: মিলন রক্ত দেয়নি। তিনি বলেন, দেশে দুর্নীতি যেন না থাকে এটা চেয়েছে জনগণ। তারা চেয়েছে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। এখন রাজনীতিবিদদের সেই আস্থা অর্জন করতে হবে।
আলোচনার শুরুতে বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণ গুম, খুন, অপহরণের ভয়ে ভীত। দেশে এ অবস্থা চলতে থাকলে গণতন্ত্র সমূলে ধ্বংস হতে বাধ্য। তবে আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ কোনো অব্যবস্থাপনাকে বেশি দিন মেনে নেয় না। তিনি বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে দেশের জণগণের মধ্যে কখনই দ্বিধা বিভক্তি ছিল না এখনো নেই। জনগণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতি ও দলীয়করণ কখনই চায় না। তিনি বলেন, এমন একটি সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে কার্যকর গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয় ভূমিকা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.