কাতারে কাফেলাপদ্ধতি বদলানো সম্ভব?

কাফেলা স্পনসরশিপ নিয়ে কাতারে কাজ করছেন
এসব বিদেশি শ্রমিক। কাজের ফাঁকে খাবার খাচ্ছেন তাঁরা
কাতারের কাফেলা স্পনসরশিপ নিয়ে বিতর্ক চলছেই। অভিযোগ রয়েছে, এতে বিদেশি শ্রমিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব হয়। তাঁদের অপব্যবহার করা হয়। এই স্পনসরশিপ সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মহল কাতারের ওপর চাপ দিচ্ছে। এসব সমালোচনা ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাতার সরকার সম্প্রতি যোগাযোগবিষয়ক একটি কার্যালয় খুলেছে। সেখানে কাফেলাব্যবস্থা নিয়ে জনগণ তাঁদের মতামত দেবেন। কাফেলা স্পনসরশিপ নিয়ে বিদেশি শ্রমিকেরা কাতার, লেবানন, বাহরাইন, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। এসব শ্রমিক বেশির ভাগই নির্মাণ ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেন। এই পদ্ধতিতে অদক্ষ শ্রমিকদের চাকরিদাতারা স্পনসরশিপ দেন। তাঁদের ভিসা ও আইনগত দিকের দায়িত্ব নেন চাকরিদাতারাই। এতে চাকরিদাতারা অনেক সময় শ্রমিকদের পাসপোর্ট আটকে দেন। তাঁদের হয়রানিতে ফেলেন। সমালোচকেরা বলছেন, কাফেলা হচ্ছে এক ধরনের আধুনিক দাসপ্রথা। কাতারের দ্য কাউন্সিল অব মিনিস্টারস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা কাফেলা স্পনসরশিপ আইন সংস্কারের জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করেছে। এটি এ বছরের শেষের দিকে শেষ হবে। শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন সালেহ আল খুলাইফি এই সময়সীমা নির্ধারণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, কাফেলা স্পনসরশিপ নিয়ে
কাতারে যেসব শ্রমিক কাজ করছেন, তাঁরা
নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ছবি: এএফপি
তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উপসাগরীয় গবেষক নিকোলাস ম্যাকগিহান এএফপিকে বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে এ রকম কোনো ঘোষণা শুনতে পাবেন বলে তিনি মনে করেন না। কারণ এর আগেও কাতার এ রকম সময়সীমার ঘোষণা দিয়েছিল। গত বছরের নভেম্বর মাসে শ্রম এবং সামাজিক কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের শুরুতেই কাফেলা স্পনসরশিপ সংস্কারের ঘোষণা দেয়। ওই সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পর মন্ত্রণালয় আবার মে মাসের শুরুতে সংস্কার হবে বলে জানায়। এখন এটি ডিসেম্বর মাসে গিয়ে ঠেকেছে। কাফেলা সংস্কারে প্রথম আপত্তি তোলে কাতারের প্রধান উপদেষ্টা পরিষদ শুরা কাউন্সিল। তারা সংস্কারের জন্য আরও আলোচনা করা প্রয়োজন বলে দাবি তোলে। এতে মানবাধিকার সংস্থা ও শ্রমিক সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। কাতার অবশ্য দাবি করেছে, কাফেলা আইনের অনেক সমর্থক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ক্ষমতাধর। মানবাধিকার সংস্থার উপসাগরীয় গবেষক নিকোলাস ম্যাকগিহান বলেন, কাফেলাপদ্ধতির সংস্কার নিয়ে রক্ষণশীল ও অতিরক্ষণশীলদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
কাফেলা স্পনসরশিপ নিয়ে কাতারে কর্মরত
এক বিদেশি শ্রমিক। ছবি: এএফপি
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো মাইকেল স্টেপহেনস বলেন, কাফেলাপদ্ধতির সংস্কারকাজ কঠিন হয়ে পড়ছে। এর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা এর পরিবর্তন চান না। কাতারের প্রভাবশালী আইনজীবী ইউসুফ আহমেদ আল জামান বলেন, কাফেলাপদ্ধতি নিয়ে সংস্কার প্রস্তাবের দুটি অনুচ্ছেদ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এই দুটি অনুচ্ছেদ হলো ৭ ও ২১। অনুচ্ছেদ ৭ অনুসারে কাতারের ১৬ লাখ বিদেশি শ্রমিকেরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানোর পর সে দেশ ছাড়তে পারবেন। কিন্তু এ জন্য অবশ্যই তাঁদের চাকরিদাতার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। অনুচ্ছেদ ২১ অনুসারে শুরা কাউন্সিল বিদেশি শ্রমিকদের চাকরি পরিবর্তনের অনুমতি দিতে পারবে। এ জন্য তাঁদের চাকরিদাতার অনুমতি না নিলেও চলবে।
আন্তর্জাতিকভাবে কাতারের কাফেলা স্পনসরশিপ নিয়ে আরও অনেক কিছু করার আছে বলে মনে করেন মানবাধিকার সংস্থার উপসাগরীয় গবেষক নিকোলাস ম্যাকগিহান। তিনি বলেন, বিদেশি শ্রমিকদের নিয়ে নতুন আইন করলে দেশের শ্রমিকদের ওপর কী প্রভাব পড়বে, এটিও কাতারের ভেবে দেখার বিষয়। এএফপি অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.