সাহসী জননী, বিবেকি মানুষ- জনগণের সক্রিয় নজরদারিই নিরাপত্তার ভরসা

সামিউল রাজনের হত্যায় যে শোক ও ক্রোধ জন্ম নিয়েছিল, তা রূপ নিয়েছে মানবিকতার জাগরণে। দুই মা তাঁদের ঘাতক সন্তানদের আটকের পথ দেখিয়েছেন, সৌদি আরবে পলাতক একজনকে ধরিয়ে দিয়েছেন প্রবাসী ভাইয়েরা, এলাকাবাসী উদ্যোগী হয়ে আটক করেছে আরও দুজনকে। সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সপ্তাহজুড়ে চলছে অমানবিকতার বিরুদ্ধে গণজাগরণ। আবারও প্রমাণিত হলো, মানুষ পরাজিত বা পতিত হয়, কিন্তু মানবতা টিকে থাকে।
রাজনের হত্যাকারীদের আটকের বেলায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আসামিকে অর্থের বিনিময়ে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগও জোরালো। কিন্তু মানুষ বসে থাকেনি। সামিউলের লাশ গুম করার প্রচেষ্টা জনগণের হস্তক্ষেপেই ভেস্তে যায় এবং আটক হয় আসামি মুহিত। খুনিদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলাকাবাসী সচিত্র পোস্টার প্রকাশ করেছে। মহাসড়কে মিছিল হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ ময়দানে জমায়েত হয়ে বিচার দাবি করেছে। দেশময় স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ এবং সামাজিক মাধ্যমের চাপ সরকারকেও তৎপর হতে চাপ সৃষ্টি করেছে। রাজনের ঘাতকেরা মানুষ হিসেবে আমাদের ছোট করে দিয়েছিল, জনতার আন্দোলন মনুষ্যত্বের শক্তির প্রতি আস্থা ফেরাল। যে দুই মা রাজনের মায়ের সমব্যথী হয়ে খুনি সন্তানদের ধরিয়ে দিলেন, তাঁরা মাতৃত্বের বেদনা ও গৌরব একসঙ্গে অনুভব করলেন। সন্তানকে পরিত্যাগ করার বেদনা সয়ে তাঁরা নিহত রাজনের মায়ের দুঃখের শরিক হলেন। তাঁদের জানাই অভিবাদন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন ব্যর্থ বা সুবিধাবাদী, আইনের শাসন যখন ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে, তখন সাধারণ মানুষই দায়িত্ব পালন করল। অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করা, এমনকি অপরাধীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। এ ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়: অন্যায়-অধঃপতনের বিরুদ্ধে নিচুতলার মানুষ শেষ রক্ষাকবচ। বাংলাদেশে এখন যে প্রায় নৈরাজ্যকর অন্যায়-অনিয়ম চলছে, তাতে জনগণের নজরদারি ও সরব হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.