মানব পাচার- ৪ দূতকে ঢাকায় ডেকে আনা হয়েছে বৈঠক আজ by মিজানুর রহমান

অবশেষে মানব পাচার ইস্যুতে কাজ শুরু করেছে পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে এটি ঠেকানো কিংবা পুরোপুরি বন্ধে নয়, বিভিন্ন দেশে পাচারের শিকার হওয়া ‘বাংলাদেশী’দের দ্রুত ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন দেশীয় কূটনীতিকরা। গতকাল এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ‘বাংলাদেশী’দের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়া এবং তাদের ফেরত আনার বিষয়ে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিতে ওই চার দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের জরুরি ঢাকায় ডেকে আনা হয়েছে। ব্যাংককে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম ও কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম গতরাতেই ঢাকায় পৌঁছেছেন। নেপি’ডতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান এবং জাকার্তায় নিযুক্ত বাংলাদেশের দূত নাজমুল কাওনাইনের আজ বিকালের মধ্যে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্রের দাবি, সন্ধ্যায় দূতদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন পররাষ্ট্র সচিব। অভ্যন্তরীণ ওই বৈঠকে দুনিয়া তোলপাড় করা ওই ইস্যু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে। সেখানে দূতরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। একই সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিবেন। পররাষ্ট্র সচিবের আহ্বানে রাষ্ট্রীয় একটি অতিথি ভবনে অনুষ্ঠেয় সন্ধ্যার নীতি-নির্ধারণী ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেরিতে হলেও পাচারের শিকার বাংলাদেশীদের দ্রুত দেশে ফেরানোর বিষয়ে ওই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত বা দিকনির্দেশনা আসতে পারে বলে আশা করা করা হচ্ছে। এদিকে পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং মানবিক ওই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে সরকারের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে অনীহা ছিল। কেউই এর দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছিল না। রুলস অব বিজনেসে মানব পাচারে বিষয়টি পররাষ্ট্র দপ্তরের না থাকায় এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্তরাও তা এড়িয়ে চলেছেন। কিন্তু যেহেতু বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচণ্ড চাপ আসছে, তা ছাড়া ওই ভিকটিমরা বিদেশের মাটিতে রয়েছে তাই পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের ফেরত আনার কাজটি পুরোপুরি সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছে। রাষ্ট্রদূতদের জরুরি ভিত্তিতে ডেকে আনা এবং তাদের সঙ্গে পুরো বিষয়টি শেয়ার করতে বৈঠক আয়োজন সেই উদ্যোগের অংশ বলে জানান এক কর্মকর্তা। তবে তিনি একটি বিষয় বেশ জোর দিয়ে বলেন তা হলো- মানব পাচারের মতো গুরুত্ব অপরাধ ঠেকানোর দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেই কাজটি তাদেরই করতে হবে। এখানে পররাষ্ট্র দপ্তরের পরামর্শ দেয়া ছাড়া তেমন কিছুই করার নেই। রুলস অব বিজনেস মতে এটি যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত নয় মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে সেটি পররাষ্ট্র সচিবও উল্লেখ করেন।
পাচার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ চায় উদ্বিগ্ন ইইউ: এদিকে বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এবং বাঙালিদের বিভিন্ন দেশে পাচার করার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল দিনের শুরুতে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুনের নেতৃত্বে ঢাকায় থাকা ওই জোটের প্রতিনিধিরা পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৈঠক সূত্রের খবর ইইউ দূতরা এ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও করণীয় জানতে চেয়েছেন। গুরুতর ওই অপরাধ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের বন্ধু এবং উন্নয়ন সহয়োগী ওই দূতরা। আফ্রিকাসহ বিভিন্ন গরিব দেশ থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ভেসে লোকদের নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ‘দুশ্চিন্তা’র বিষয়টি তুলে ধরে ২৮ রাষ্ট্রের ওই জোটের প্রতিনিধিরা মানব পাচারের রুট বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশের তরফে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি ইইউ দূতদের কছে পুনরুল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা মনে করি রোহিঙ্গা সমস্যার সামাধান না হলে পাচার বন্ধ হবে না। আর ওই সমস্যার সামাধান ঢাকায় নয়, নেপি’তে খোঁজতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.