এবার ট্রাকে ধর্ষণের অভিযোগ

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে মাইক্রোবাসে তুলে এক আদিবাসী তরুণীকে গণধর্ষণের দু’দিনের মাথায় এবার ট্রাকে আরেক নারী শ্রমিককে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোয় তার অসুস্থ স্বামীকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়। ভুক্তভোগী নারী ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন ওই নারী। আর তার স্বামী আমিনুল ঢাকার মিরপুরে রিকশা চালান। শনিবার রাতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় ডাক্তার দেখাতে যান। পরে ওই রাতেই তারা বাসায় ফিরতে সড়কে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও কোন গাড়িতে উঠতে পারছিলেন না তারা। একপর্যায়ে গাজীপুরগামী একটি ট্রাক আসলে তাদেরকে গাজীপুরে পৌঁছে দেবে বলে কথা হয়। পরে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ওই ট্রাকে উঠেন । ট্রাকযোগে বাসায় ফেরার পথে ট্রাক চালক তাদের কৌশলে কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশা জাতীয় বস্তু মিশিয়ে খাওয়ান। এতে তারা দু’জনেই অচেতন হয়ে পড়েন। পরে মহিলার স্বামীকে ট্রাকের পেছনের অংশে উঠায় চালক এবং ট্রাকচালক ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ তোলা হয়। রাতেই গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় স্বামী-স্ত্রীকে ফেলে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায় চালক। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা-মোবাইল সেটও নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে। শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় তাদেরকে রোববার সকালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। এদিকে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুস সালাম সরকার জানান, প্রাথমিক পরীক্ষায় ওই নারীকে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। আলামত নেয়া হয়েছে। চুড়ান্ত পরীক্ষার পর সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
‘আদিবাসী তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় সরকার নির্বিকার’ -বিএনপি
মাইক্রোবাসে আদিবাসী তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় সরকার জড়িতদের গ্রেপ্তার না করে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বলেছেন, আমাদের মা-বোনদের রাস্তায় বের হওয়ার নিরাপত্তা নেই। রাজধানীতে চলন্ত মাইক্রোবাসে একজন গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এটা গোটা জাতির জন্য লজ্জার। আমরা আশা করেছিলামÑ সরকার জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনবে। কিন্তু এ নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। এই ঘটনায় তারা জড়িতদের গ্রেপ্তার না করে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। পহেলা বৈশাখের ঘটনার এতদিন পরও বিচার না হওয়ায় এধরনের ঘটনা আবারও ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আজ বিকালে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সরকার একগুঁয়েমি ও একরোখা নীতি অবলম্বন করছে অভিযোগ করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপিদের ধারণাÑ ভোট  ছাড়াই ক্ষমতায় থাকা যায়। তাই তারা ২০১৯ সালেও ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচন করার কথা বলছেন। কিন্তু তারা যদি এই স্বপ্ন দেখেন তাহলে আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ বিনা ভোটে নির্বাচন করলে সরকারের পায়ের তলায় মাটি থাকে না। সেই নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয় না। সরকার কৃষক ধ্বংসের নীতিতে মেতে উঠেছে অভিযোগ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে কৃষকরা ধান-চালের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকরা ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে। তাদের বাঁচানোর জন্য প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের আহ্বান জানান তিনি। রিপন বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, নারীর সম্ভমহানীর অসংখ্য ঘটনা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ধান-চাল-গম সরকারিভাবে সংগ্রহের নীতি মার খাওয়ায় শাসকদলীয় মধ্যসত্ত্বভোগীদের দাপটে দেশে কৃষককূল আজ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। বেকারত্ব, কর্মের সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ায় আন্তর্জাতিক দালাল চক্রের প্রলোভন-প্রতারণায় এখন সাগর বক্ষে হাজারও নিরীহ বাংলাদেশী মানুষ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এরই মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় কয়েকটি দেশে ভাগ্যান্বেষী বাংলাদেশীদের লাশ গণকবর থেকে উত্তোলিত হচ্ছে ক্রমাগত।  তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে দেশে বিনা ভোটের সরকার নির্বিকার ভূমিকা পালন করে চলেছে। কিন্তু বিরোধী দলের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোর পথ ছেড়ে সবাইকে নিয়ে ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কিভাবে বাঁচানো যায়-তা নিয়ে সরকারের যেন কোন মাথা ব্যথা নেই। দেশে এমন এক অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে- কারণ দেশে কোন জবাবদিহিমূলক সরকার নেই এবং জাতীয় সংসদেও কোন বিরোধী দল নেই। রিপন বলেন, জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল ইস্যুতে বিএনপি বরাবরেই মতো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে এবং তার বক্তব্য দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবে। আমরা বারবার বলেছি, ঘৃণ্য সহিংসতা গণতন্ত্রের পথ নয়। আমরা জনগণের পক্ষে জনস্বার্থ-রাষ্ট্রস্বার্থ সকল ইস্যুতে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা অব্যাহত রাখবো। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার বিরোধী মতকে সহ্য করে বিরোধীদের তাদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলো চর্চার জন্য পথকে সংকুচিত করার নীতি থেকে সরে আসবেন। অতি দ্রুত দেশে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপিসহ সকল দলগুলোর সঙ্গে একটি অর্থবহ সংলাপের আন্তরিক সূচনার সূত্রপাত ঘটাবেন।  সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল এইচ খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহীন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.