মানব পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি টিআইবির

মানব পাচারকারীদের দ্বারা হাজার হাজার বাংলাদেশীর জীবন বিপন্ন হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে এজন্য দায়ী চক্রকে চিহ্নিত করে কোন প্রকার করুণা না দেখিয়ে এবং ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক রিজওয়ান-উল-আলমের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়। অন্যদিকে এ দুরবস্থার জন্য অভিবাসন খাতে সুশাসনের ঘাটতি, যোগসাজশের দুর্নীতি ও আইন প্রয়োগের দুর্বলতাকে দায়ী করেছে তারা। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বর্তমানে সাগরে ভাসমান কয়েক হাজার বাংলাদেশী উদ্ধারে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে মানব পাচারের ওপর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি সুস্পষ্ট যে, অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, পাচারকারীদের পাশাপাশি এক শ্রেণীর ক্ষমতাবান ব্যক্তি, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশের দুর্নীতির ফলে অভিবাসনে ইচ্ছুক বাংলাদেশের নাগরিকরা এরূপ নির্মম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় আরও একবার প্রতীয়মান হলো যে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতে ব্যর্থতা শুধু আর্থ-সামাজিক ক্ষতিই করে না বরং মানুষের জীবন বিপন্ন করে, দুর্নীতি নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও বিজিবি সতর্ক ও দায়িত্বশীল হলে এত বড় মানবিক বিপর্যয় এড়ানো যেত। ক্রসফায়ারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পাচারকারী অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের ক্রসফায়ারের শিকার হওয়া সমস্যার সমাধান হওয়া দূরে থাকুক, বাস্তবে প্রকৃত অপরাধী, বিশেষ করে ক্ষমতাধর কুচক্রী মহলকে সুরক্ষা প্রদানের সমতুল্য কি না এমন প্রশ্ন উত্থাপন হওয়াই যৌক্তিক। পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে সমস্যার মূলোৎপাটন অসম্ভব। অন্যদিকে কিছুদিনের মধ্যেই ২০৮ জন বাংলাদেশীকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনার জন্য সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ড. জামান বর্তমানে সাগরে ভাসমান সকল বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। জাতিসংঘ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া এবং ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে মানব পাচারের শিকার বাংলাদেশী নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। এই সমস্যার দুটি দিক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন এর একটি সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের এবং চাহিদাকারী হিসেবে পাচারকৃত দেশের কুচক্রী মহল। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দক্ষতা ও কার্যকরিতা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট খাতে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের সম্পৃক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগেরও আহ্বান জানান তিনি। বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, টিআইবি’র ২০১২ সালের জাতীয় খানা জরিপের ১৪টি সেবা খাতের মধ্যে শ্রম অভিবাসন খাতে দুর্নীতির শিকার হওয়ার মাত্রা ছিল সর্বাধিক। জরিপ অনুযায়ী শ্রম অভিবাসন খাতে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ দেয়ার হার ছিল ৭৭% এবং নিয়ম বহির্ভূত অর্থের গড় পরিমাণ ছিল প্রায় দুই লাখ টাকা। প্রতিবেদনের তথ্য ও সুপারিশমালা ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও দুঃখের বিষয় সংশ্লিষ্ট মহল দুর্নীতি প্রতিরোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

No comments

Powered by Blogger.