তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি: সুজন

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়নি উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন বলেছে অসঙ্গতি ও অনিয়মে ভরা এই নির্বাচন কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একইসঙ্গে নির্বাচন পদ্ধতি ও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপক সংস্কারের ব্যাপারে এখনই সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন: কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জনাব জাকির হোসেন ও সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে প্রার্থীদের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে প্রত্যাশা ছিল- একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, অর্থবহ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বিরাজমান অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে একটি স্বস্তিময় পরিবেশে ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো তা আশাবাদী মানুষগুলোকে হতাশ করার পাশাপাশি জন্ম দিলো অনেক বিতর্কের। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সুজন অন্যান্য পর্যবেক্ষক সংস্থার মতো নির্বাচনের দিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে না। তাই সুজনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। তবে আমরা জানি যে, সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশসহ বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য তুলে ধরেছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ, টিআইবি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, জাতিসংঘ, অধিকার, প্রথম আলো প্রভৃতি সংস্থার প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়ন, আইনে সার্চ কমিটি গঠনের বিধান রাখা এবং আইনানুযায়ী স্বচ্ছতার সঙ্গে সৎ, দক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগদান, সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী আইনকে আরও শক্তিশালী করা, প্রার্থী প্রদত্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চালু করা, অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের মনোনয়ন বাতিলের বিধান কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং তাদের ফৌজদারি আইনের বিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা, ভবিষ্যতে আইনী বিধি-বিধানসমূহ কঠোরতার সঙ্গে প্রয়োগ করা প্রভৃতি। উপস্থাপিত প্রবন্ধে আরও বলা হয়, সুজন মনে করে, বিধ্বস্ত একটি নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ করে সঠিক পথে আনা, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করা এবং নির্বাচনী আইনের সংস্কার ছিল জাতিগতভাবে আমাদের বড় অর্জন। নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা, নিরপেক্ষতার অভাব এবং নির্বাচনী আইন ও বিধি-বিধান প্রয়োগে নমনীয়তা এবং কোথাও কোথাও পক্ষপাতদুষ্টতা সেই অর্জনকে বিসর্জন দিতে বসেছি, যা আমাদের কাম্য ছিল না।
এখনই যদি আমরা যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তবে নির্বাচন পদ্ধতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আজকের এই সংবাদ সম্মেলন অতীতের কাজেরই ধারাবাহিকতা। আমরা সকল নির্বাচনেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও বিজয়ীগণের তথ্য বিশ্লেষণ গণমাধ্যমের সহযোগিতায় তুলে ধরেছি। তিনি আরও বলেন, প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষমুক্ত করার জন্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। হলফ করে মিথ্যা তথ্য প্রদান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। নির্বাচন কমিশন যদি হলফনামা যাচাই-বাছাই করে তবে অনেক বসন্তের কোকিল নির্বাচন অঙ্গন থেকে বিতাড়িত হবে। দুর্নীতিবাজদেরও নির্বাচন থেকে দূরে রাখা সম্ভব

No comments

Powered by Blogger.