মালয়েশিয়ায় ১৩৯ গণকবর ২৮ বন্দিশিবিরের সন্ধান

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি জঙ্গলে বন্দিশিবির -এএফপি
জড়িতদে বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা * নেয়া হবে : নাজিব রাজাক
মালয়েশিয়ায় আরও গণকবরের সন্ধান মিলেছে। দু’একটি নয়, ১৩৯টি। আর এর মধ্যে রয়েছে পচাগলা লাশ, কঙ্কাল ও হাড়গোড়। ধারণা করা হচ্ছে গণকবরগুলোর মধ্যে কয়েকশ’ জনকে চাপা দেয়া হয়েছে। তারা সবাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী। শুধু গণকবর নয় মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলে অন্তত ২৮টি শিবির পাওয়া গেছে, যেগুলোর মধ্যে পাচার হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের রাখা হতো। রোববার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম মালয়েশিয়ায় ৩০টি গণকবর পাওয়ার খবর দেয়। কিন্তু এর পরদিনই দেশটির কর্তৃপক্ষ আরও ১০৯টি গণকবর পাওয়ার কথা জানায়। ভয়াবহ এ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। যারা এ ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ মাসের শুরুর দিকে থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত গহিন জঙ্গলে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আটকে রাখা ও গণকবরের সন্ধান মেলে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় কমপক্ষে ২৬টি মৃতদেহ। এরপরই আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে থাকে মানব পাচারের ভয়াবহ, বিভীষিকাময় চিত্র। খবর এএফপি, বিবিসি ও সিএনএনের।
মালয়েশিয়ায় ১৩৯ গণকবর, ২৮ বন্দিশিবির : থাইল্যান্ড সীমান্ত সংলগ্ন মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলে ১৩৯টি গণকবর ও ২৮টি মানব পাচার সংশ্লিষ্ট বন্দিশিবির পাওয়া গেছে।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির জাতীয় পুলিশ বাহিনীর প্রধান খালিদ আবু বকর এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ মাসের শুরুর দিকে দেখা দেয়া অভিবাসী সংকটের পর এবারই প্রথম মালয়েশিয়ায় গণকবর ও বন্দিশিবিরের সন্ধান মিলল। ধারণা করা হচ্ছে, এসব গণকবর ও বন্দিশিবির সাগরপথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অভিবাসীদের। এর আগে থাইল্যন্ডের জঙ্গলে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেলে মানবপাচারের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আলোচনায় চলে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে খালিদ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত ১৩৯টি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে। এর প্রতিটিতে ঠিক কত লাশ রয়েছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া আরও ২৮টি বন্দিশিবিরের সন্ধান মিলেছে। এতে কয়েকশ’ লোক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা ভয়ানক এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।’
চলতি মাসের শুরুর দিকে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের গণকবর ও বন্দিশিবিরের সন্ধান পায় থাইল্যান্ডের পুলিশ। তখন মালয়েশিয়ায় গণকবর ও বন্দিশিবির থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে দেশটির কর্মকর্তারা।
পুলিশপ্রধান বলেন, জংলি ও পাহাড়ি এলাকায় এ গণকবর ও বন্দিশিবিরের সন্ধান মিলেছে। এসব এলাকা খুবই দুর্গম।
এসব গণকবর ও বন্দিশিবিরের সন্ধান পাওয়ার ঘটনা এ অঞ্চলের মানব পাচার বাণিজ্যের ভয়ংকর দিকটি তুলে ধরে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ কারা হয়েছে।
নাজিব রাজাকের উদ্বেগ : নিজ দেশের মাটিতে অভিবাসীদের গণকবর ও বন্দিশিবির পাওয়ার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। তিনি বলেন, ‘যারা এ ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে।’ জাপান সফরত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সোমবার মানব পাচার বন্ধে জাপানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মানব পাচার একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই আন্তর্জাতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে।
মালয়েশিয়ার পুলিশ চলতি মাসের শুরু থেকেই থাই সীমান্ত সংলগ্ন পেদাং বেসার ও ওয়াং কেলিয়ান এলাকায় পাচারকারীদের আস্তানার খোঁজ পেলেও বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে রোববার। এদিন ১৭টি পরিত্যক্ত ক্যাম্পে ৩০টি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি। পরদিন এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য দেন দেশটির পুলিশপ্রধান।
আশ্রিত বাংলাদেশীদের শিগগিরই ফেরত পাঠাবে ইন্দোনেশিয়া : ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রিত বাংলাদেশীদের শিগগিরই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে দেশটির একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন। আচেহ প্রদেশে ৭শ’ বাংলাদেশী অভিবাসীকে আশ্রয় দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। আন্দামান সমুদ্রে তাদের বহনকারী নৌকা পাচারকারীরা ফেলে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক চাপে তাদের উদ্ধার করে ইন্দোনেশিয়া।
আচেহ প্রদেশে এক সফরে ইন্দোনেশিয়ার সামাজিক সম্পর্ক মন্ত্রী খোফিফাহ ইন্দার পারাওয়ানসা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তার সরকার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। খুব শিগগিরই বাংলাদেশীদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করা হবে। আগামী ৩-১০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশীরা ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেয়ে যাবে। এরপর উত্তর সুমাত্রা প্রদেশের রাজধানী মেদান থেকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রস্তুত হওয়ার ২-৩ মাসের মধ্যেই তাদের বিমান টিকিট হাতে পাওয়া যাবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের ভ্রমণের সব খরচ আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) বহন করবে।

No comments

Powered by Blogger.