ইতিহাসের খলনায়ক by শামীমুল হক

আমরা সবাই রাজা, আমাদেরই রাজার রাজত্বে। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের খেলার শেষ ওভারে সবাই ভেবেছিল বল করতে দেয়া হবে পেসার রুবেলকে। কিন্তু তা না করে সেদিনের অধিনায়ক মানে রাজা সাকিব আল হাসান নিজেই তুলে নিলেন বল। শেষ আশাজাগানিয়া ওভারের দুই বলেই নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নেয়। বাংলাদেশ উল্লাসের বদলে চুপসে যায়। সঙ্গে তুলাধুনা করতে থাকে সাকিবের নাম নিয়ে। নানাজনের নানা কথা। একজন বলে সাকিব কত টাকা খেয়েছে? কেউ বলে সাকিব ৪ উইকেট নিয়েছে ওই খেলায়। আর এক উইকেট নিলে মাহমুদুল্লাহকে পেছনে ফেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে পারতো। তাতো হয়নি বরং নিজেই নিজের কপালে এঁকে দিলেন অভিযোগের তীর। আবেগি দর্শক কি আর কোন কথা শুনে। তাদের একটা কথা এটা করলে ওটা হতো। যেমন আগের ম্যচের কথাই ধরা যাক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে শেষ দিকে কে হারবে কে জিতবে তা নিয়ে যখন টান টান উত্তেজনা, তখনই অধিনায়ক মাশরাফি বল করতে দেয় রুবেলকে। রুবেলও অধিনায়কের দেয়া চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে এগিয়ে যায়। প্রথম বলেই বোল্ড আউট। দ্বিতীয় বল মাঝখানে। তৃতীয় বলে ফের বোল্ড আউট। এর সঙ্গে সঙ্গে শেষ উইকেট তুলে নেয় রুবেল। এবং জয়ের নায়ক হয়ে যায় রুবেল। অথচ ওই ম্যাচে এক ওভার আগে ক্যাচ মিস করে খলনায়কে পরিণত হতে বসেছিল তামিম। একেবারে নিশ্চিত ক্যাচ মিস করে তিনি বিশ্বকে অবাক করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তামিমকে গালমন্দ করা। তামিমেরও কপাল ভাল। যদি সেদিন রুবেল দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয় এনে না দিত তাহলে বাঙালি জাতি তাকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করত। ইতিহাসের খলনায়ক হিসাবে ঠাঁই করে নিতো সবার মাঝে। আসলে এরই নাম খেলা। খেলাতে হারজিৎ আছে। কিন্তু আমরা কোন খেলাতেই হারতে চাই না। বুঝতে চাই না কাউকে না কাউকেতো হারতেই হবে। সেদিন বাংলাদেশ হারলে ছিটকে পড়তো বিশ্বকাপ থেকে। যেমনটি হয়েছে ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে। প্রথম রাউন্ড থেকে ইংল্যান্ড বাড়ি ফেরায় সেখানকার মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। একটি ট্যাবলয়েডে লিখেছে বাংলাদেশী পোনাদের সঙ্গে হেরে বাড়ি ফিরেছে ইংল্যান্ড দল। যাকগে। ক্রিকেট খেলার কথা বাদ দিলাম। আর বাদইবা দিই কি করে? ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিতো প্রথমেই ক্রিকেটীয় শুভেচ্ছায় বাজিমাত করে দিয়েছেন। খেলে দিয়েছেন আসল খেলা। তিনি উপমহাদেশের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোন করে সাফল্য কামনা করেছেন। মোদি নিজেও জানেন সাফল্য একটি দলই পাবে। তারপরও সবার সাফল্য কামনা করা একটি খেলা মাত্র। রাজনীতিতেও এমন খেলেই ভারতবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। যার বদৌলতে বিশ্বকে চমকে দিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে তার দল। অন্যদিকে খেলায় হেরে একেবারে ব্যাকফুটে চলে গেছে কংগ্রেস। সোনিয়া গান্ধী এবার তার পুত্র রাহুল গান্ধীকে সামনে এনেও লজ্জাজনক পরাজয় ঠেকাতে পারেননি। বিশেষ করে সোনিয়া নিজের চরকায় তেল দেয়ার চেয়ে অন্যের চরকায় তেল দিতে বেশি ভালবাসেন। এ ভালবাসার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে। এখন নিজেই নিজের মাথার চুল ছিঁড়লেও কোন লাভ হবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশে হাসিনার চালে হতবাক খালেদা। তিনি কখনও ভাবেননি পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেবেন হাসিনা। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন করে ফেলবেন সেটাও ছিল খালেদার ভাবনার বাইরে। এসব ভাবনার বাইরের কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে করেছেন। সংসদে তার মেজরিটি আছে। দেশের প্রধান দল হিসাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে রয়েছে। ফলে নির্ভয়ে কাজ করে যাচ্ছেন হাসিনা। আর হাসিনার এসব কাজ নিয়ে যখন খালেদা ভাবতে বসেন তখন তার মাথা ঠিক থাকে না। এলোমেলো হয়ে যায়। চলতি বছর ৫ই জানুয়ারি ঘিরে ফের বেকায়দায় পড়েন খালেদা। সে থেকে একঘরে দিন কাটছে তার। এর মধ্যে অনেক খেলা হয়ে গেছে। দেশবাসী সবই জানেন। সবই বুঝেন। কিন্তু খালেদা ভেবে পাচ্ছেন না কিভাবে হাসিনার চালে তিনি কাবু হয়ে পড়েছেন। রাজনীতিটাই আসলে এমন। সময় ও সুযোগ বুঝে চাল দিতে পারলে প্রতিপক্ষকে অনায়াসে ঘায়েল করা যায়। সময় আর সুযোগ বুঝেও ভুল চাল দিলে নিজেকেই ফাঁদে পড়তে হয়। সে ফাঁদ থেকে বেরুতে হাজার চেষ্টা করলেও ফল তেমন হয় না। অপেক্ষা করতে হয় সময় ও সুযোগের। যদি প্রতিপক্ষ সেই ব্যবস্থা করে দেয়। প্রতিপক্ষ যদি সদা সজাগ থাকে তাহলে সময় আর সুযোগ পেতে যুগ যুগ অপেক্ষা ছাড়া আর করার কিছুই থাকে না।

No comments

Powered by Blogger.