‘গুজরাটে হিন্দু, মুসলমানের জন্য আলাদা বসতি’

ভারতে গুজরাটের ভাডোদারাতে প্রায় সাড়ে চারশ’ মুসলিম পরিবারকে শহরের একটি হিন্দুপ্রধান এলাকায় পুনর্বাসন করার প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এই গরিব মুসলিম পরিবারগুলো থাকতো দুটি বস্তি এলাকায়, যা গত নভেম্বর মাসে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। -খবর বিবিসি বাংলা।
ভাডোদারার পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের একটি নতুন আবাসন প্রকল্পে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও সেখানকার বাসিন্দারা স্মারকলিপি দিয়ে বলেছেন, ‘সমস্যা তৈরি করবে’ এমন লোকজনকে তারা এলাকায় থাকতে দিতে চান না। গুজরাটের ভাডোদারা শহরে হিন্দু ও মুসলিম সমপ্রদায়ের সহাবস্থান শত শত বছর ধরে, আবার সেখানে সামপ্রদায়িক বিদ্বেষ ও হিংসার ইতিহাসও বেশ পুরনো। সমপ্রতি সেখানে কল্যাণনগর ও কামাতিপুরা বস্তির বেশ কয়েকশ’ আশ্রয়চ্যুত গরিব মুসলিম পরিবারকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়তে হয়েছে, কারণ শহরের অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা তাদেরকে নিজেদের এলাকায় ঘেঁষতে দিতে চাইছেন না। ভাডোদারা পৌর কর্পোরেশন এই মুসলিমদের জন্য শহরের কালালি ও সয়াজিপুরা এলাকায় নতুন আবাসনও তৈরি করেছে, কিন্তু বিজেপির স্থানীয় কাউন্সিলর দাদুভাই গাধভির নেতৃত্বে এলাকার বাসিন্দারা তাতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গুজরাটে হিন্দু এবং মুসলিম এলাকার মধ্যে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। বিজেপি নেতা গাধভি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, অনেক লোকে বলছে কল্যাণনগর বস্তির লোকরা যেখানে ছিলো সেখানেই থাকুক। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের এ ব্যাপারে কোনও বক্তব্য নেই, তবে স্থানীয় লোকরা যা বলছেন আমি শুধু সেই কথাটা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি বা বাধা দান থেকে মি. গাধভি নিজেকে দূরে রাখতে চাইলেও ঘটনা হলো, কর্পোরেশনে তার নামেই স্মারকলিপিটি জমা পড়েছে এবং দল হিসেবে বিজেপিও তাতে সায় দিচ্ছে বলে জানা গেছে। আসলে বস্তি থেকে আশ্রয় হারানোদের জন্য যে নতুন বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, তার খুব কাছেই প্রোমোটার ও বিল্ডাররা নিউ মঞ্জিলপুর নামে অভিজাত একটি আবাসন প্রকল্পও তৈরি করেছেন। গরিব মুসলিমরা সে এলাকায় আসলে ওইসব ফ্ল্যাটের দাম কমে যাবে, এই আশঙ্কা থেকেই বিল্ডার লবি তাতে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। তবে এক্ষেত্রে ঘটনা যাই হোক, ভাডোদারাতে হিন্দু-মুসলিম ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন সম্পূর্ণ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন এম.এস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ ইফতিকার খান। তিনি বলেন, ‘শহরে হিন্দু-মুসলিমদের আলাদা বসতি বা ঘেটো বানিয়ে থাকার প্রক্রিয়া চলছিলো আগে থেকেই, তবে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পর থেকে সেটা যেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে।’

No comments

Powered by Blogger.