হলদে বাসন্তী by সৌরভ মাহমুদ

দেয়ালে জন্মানো গাছে ফুটে আছে হলদে বাসন্তী ফুল। বরিশাল শহরের
নাজির মহল্লা সড়কের একটি বাড়ির দেয়াল থেকে তোলা ছবি l লেখক
বন–ফুলে তুমি মঞ্জরি গো।
তোমার নেশায় পথিক–ভ্রমর ব্যাকুল হ’ল গুঞ্জরি গো।
তুমি মায়ালোকের নন্দিনী নন্দনের আনন্দিনী...
—বিদ্রোহী কবি
বাংলাদেশের বনফুল নিয়ে কাজ করছি অনেক দিন ধরে। দেশের পথে-প্রান্তরে, বনে-জঙ্গলে, সাগরের কিনারে কিংবা পাহাড়ের চূড়ায় যখন যেসব বিরল ও দুর্লভ বনফুলের দেখা পেয়েছি, সেটির ছবি তুলে রেখেছি। সংগ্রহ করেছি নমুনা। তবে সেসব বনফুলের নব্বই ভাগ নিয়ে লেখা হয়নি। প্রজাতিভেদে গাছপালার বিশেষ বিশেষ বসতি রয়েছে। কোনো কোনো উদ্ভিদ প্রজাতি উঁচু পাহাড়ে (নীল বনলতা), কোনোটি পাহাড়ের ঢালে (গাওছা লতা), কোনোটি সমুদ্রের বেলাভূমিতে (ছাগলক্ষুর), কোনোটি জলে (শাপলা), কোনোটি অন্য গাছের কাণ্ডে (ধাইরা), কোনোটি আবার সমতল ভূমিতে (বাসক) জন্মে।
গত অক্টোবরে বরিশাল শহরের নাজির মহল্লা সড়ক দিয়ে হাঁটার পথে একটি বাড়ির ইটের দেয়ালে জন্মানো হলুদ রঙের ফুলের দেখা পাই। দেয়ালে জন্মানো প্রতিটি গাছই হলুদ ফুলের জড়োয়ার পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে পথিককে আকৃষ্ট করছে। গাছগুলোর প্রধান শাখা দেয়ালকে আঁকড়ে ধরলেও কিছুটা বাঁকিয়ে হেলে পড়েছে। বাতাস পেলে পাতার সঙ্গে হলুদ ফুলগুলো দোলা দিচ্ছে। শরতের প্রকৃতিতে ফুলের আনাগোনা কম। সবাই যেন কাশফুলের মধ্যেই নিজেকে হারিয়ে ফেলে। হলুদ রঙের এ ফুলটি হলদে বাসন্তী নামে পরিচিত। কেউ কেউ বাসন্তী নামেও চেনে। হলুদ ও বাসন্তী রঙের আভা আছে বলেই হয়তো এ নাম। এ ছাড়া এ ফুলের নামকরণের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ফুলের গাছ শুধু পুরোনো দেয়ালের ইটের ফাঁকে, ফাটলে জন্মায়। বাতাসের মাধ্যমে বীজ ছড়িয়ে পড়ে। দেয়ালের আলো-ছায়াময় ফাটলে, ফাঁকে আটকে থাকা বীজ থেকে বর্ষাকালে চারা গজায়। তার পরই ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। কখনোই বাসন্তী ফুলের গাছকে ভূমিতে দেখিনি। তবে ভূমিতে জন্মাতেও পারে যেখানে ইট-পাথর-মাটির মিশেল আছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই হলদে বাসন্তী দেখা যায়। বরিশাল শহরে এদের ঢের দেখেছি। বাংলাদেশ বাদে এ বনফুলের গাছ মিয়ানমার, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া ও নেপালে জন্মে।
হলদে বাসন্তী এক বর্ষজীবী, ছোট এবং বীরুৎ জাতীয় গাছ। কাণ্ড রোমশ, ১০-৪০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতা ছোট এবং খাঁজকাটা, ১ থেকে ৩ সেন্টিমিটার লম্বা। প্রতিটি পাতার গোড়া থেকে একটি করে কলিতে নিঃসঙ্গ ফুল ফোটে। ফুলের বৃতি ৬ মিলিমিটার লম্বা, পুংকেশর চারটি। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফুল ফোটে। এ উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Lindenbergia indica। পরিবার স্ক্রুফুলিরিয়েসি। এ গাছের কাণ্ড ও পাতার রস ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বালু-সিমেন্টের প্লান্টারবিহীন পুরোনো দেয়ালের আলো-ছায়া পরিবেশে গাছটি ভালো জন্মে। তবে ইদানীং এ ধরনের দেয়াল কমে যাওয়ায় গাছটি দিন দিন কমে যাচ্ছে। গাছটি সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.