পরমাণু ইস্যুতে ঐতিহাসিক সমঝোতা- ওবামার স্বাগতম, উল্লাস ইরানে, নেতানিয়াহুর শঙ্কা

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানসহ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সমঝোতায় ইরানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়েছেন দেশটির নাগরিকরা। রাস্তায় তাদের উল্লাস প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। ওবামা যখন এই সমঝোতাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছেন তখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার দেশের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে চূড়ান্ত চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক চুক্তির কার্যকারিতা নিয়েও পশ্চিমা বিশ্ব হুঁশিয়ারি দিয়েছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ানের।
ইরান পারমানবিক শক্তি এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনলে পর্যায়ক্রমে পশ্চিমা অবরোধ তুলে নেয়ার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের লুজানে ৮ দিনের ম্যারাথন দরকষাকষির পর হওয়া সমঝোতা অনুযায়ী ইরান তার ইউরেনিয়ামের ভান্ডার দুই তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনবে। আন্তর্জাতিক এটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) ইরানের পারমানবিক সব ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করতে পারবে। অব্যবহূত ইউরেনিয়াম এই এজেন্সির হাতে তুলে দেবে ইরান। এর বিনিময়ে পর্যায়ক্রমে ইরানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেবে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে ইরান এসব শর্ত ঠিকমত না মানলে আবার অবরোধ আরোপ করা হবে।
হোয়াইট হাউসে এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ওবামা এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দেন। ওবামার এই ভাষণটি ইরানে সরাসরি সমপ্রচার করা হয়। তেহরানের রাস্তায় নামে উল্লসিত জনতার ঢল। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ব নিরাপদ হবে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এখন দেশটি ও ছয় বিশ্বশক্তি চুক্তিটি চূড়ান্ত করার দিকে মনোযোগ থাকবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, এটা একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হবে। তাছাড়া দেশটি যদি চুক্তির বরখেলাপ করে, বিশ্ব সেটি জানবে। তিনি আরো বলেন, অনেক পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে একটি সামগ্রিক সমঝোতায় পৌঁছানো হলেও এটি হয়েছে মূলত বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে। তাছাড়া এর মধ্য দিয়ে আমাদের নিরাপত্তার একটি অন্যতম হুমকির সুরাহা করা যাবে এবং সেটা আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই করবো, বলেন ওবামা। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, দুই পক্ষই পারস্পরিক অবিশ্বাস নিয়ে এতদিন  কাটিয়েছে। কিন্তু এবার তাতে পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে।
নেতানিয়াহুর মুখপাত্র মার্ক রেগেভ এক টুইটার বার্তায় বলেন, শুক্রবার ওবামাকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, চুক্তির রূপরেখা বাস্তবায়ন হলে ইসরাইলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। টেলিফোনে নেতানিয়াহু ওবামকে বলেন, চুক্তির ফলে ইরান পারমানবিক বোমা তৈরির পথ থেকে সরে আসবে না, বরং ভয়াবহ যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াবে। হোয়াইট হাউস জানায়, এয়াফোর্স ওয়ান থেকে টেলিফোনে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলাপকালে ওবামা চুক্তির পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনা করেন। ইসরাইলের কর্মকর্তারা এর আগে চুক্তির রূপরেখাকে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ এবং ‘বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। সমঝোতার খসড়ার ব্যাপারে তেহরান ও বিশ্বশক্তি সম্মত হলেও এর খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আরো আলোচনা চলবে। এরপর আগামী ৩০ জুনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইরানের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়টি নির্দিষ্ট হয়নি। আর এই চুক্তির কার্যকারিতা না থাকলে সব চেষ্টা ভেস্তে যেতে পারে। লুজানের বেউ-রিভেজ প্যালেস হোটেলে ছয় বিশ্বশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের এ আলোচনা চলে। ৩১ মার্চ মঙ্গলবার আলোচনা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চুক্তির পথে আলোচনা অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ায় সময় দুইদনি বাড়ানো হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.