সিদ্ধান্ত বদলে ৩ কমিশনার

তিন সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন কমিশনার সীমিত পরিসরে সেনা মোতায়েনের নোট দিয়েছিলেন। অন্য দু’জন কমিশনার তাতে সায় দেন। এ কারণেই মূলত নির্বাচনী কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে পরোক্ষভাবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই সেনাবাহিনী চেয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে দেয়া ইসির চিঠি সংশোধন করে পুনরায় পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বুধবার দ্বিতীয় দফায় পাঠানো ইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয় ‘প্রতি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এক ব্যাটালিয়ন করে সেনাবাহিনীর সদস্য আগামী ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল চার দিন দায়িত্ব পালন করবেন। তারা মূলত সেনানিবাসের অভ্যন্তরেই রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবেন এবং রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন।’ অথচ একদিন আগে মঙ্গলবার পাঠানো চিঠিতে ওই অংশে বলা হয়েছিল, ‘সেনাবাহিনী মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রিটার্নিং অফিসার ডাকলেই তারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন।’ পরের চিঠিতে সেনা সদস্যদের ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
ক্যান্টনমেন্টকে ঢাকার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে ওই স্থান থেকে সবদিকে সহজেই যাওয়া যায়- এমন বিবেচনায় সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ। তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকালীন সেনাবাহিনীর জন্য ‘বেস্ট পজিশন’ ক্যান্টনমেন্ট (সেনানিবাস)। সেনা মোতায়েনে প্রথম চিঠিতে ভুল-ত্র“টি হয়ে থাকতে পারে উল্লেখ করে পরে আগের চিঠিটি সংশোধিত আকারে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
আর নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন, ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী চিঠি দেয়া হয়েছে। ‘সেনাবাহিনী কোথায় থাকবে, ওই (মঙ্গলবার পাঠানো চিঠি) চিঠিতে উল্লেখ ছিল না। যেহেতু নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট রয়েছে। যে জন্য সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করার জন্য বলেছি। তারা সেখানেই প্রস্তুত থাকবে। তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। রিটার্নিং অফিসারের দরকার হলে তাদের কাজে লাগাবেন। সেনা সদস্যরা নির্বাচনে টহল দেবেন না বলেও জানান তিনি।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগের নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়। এবারই প্রথম ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সেনা সদস্যদের আবদ্ধ রাখা হল। সেনা সদস্যরা মাঠে না থাকায় ভোটারদের মধ্যে আতংক থেকে যাবে বলেও মনে করছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, যে প্রক্রিয়ায় পুনরায় চিঠি তৈরি ও পাঠানো হয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয়েছে যে, সেনা মোতায়েন না করার বিষয়ে ইসির ওপর এক ধরনের চাপ ছিল। বুধবার সন্ধ্যায় ইসির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী হাতে হাতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চিঠিটি পৌঁছে দেন।
যদিও কোনো মহলের চাপে দ্বিতীয় দফা চিঠি পাঠানো হয়নি বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কোনো চাপে আমার বিন্দুমাত্র পিছিয়ে যাইনি। সেনাবাহিনী নিয়োগে যে চিঠি দেয়া হয়েছে তাতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু সেনাবাহিনীর অবস্থান কোথায় হবে- তা সুনির্দিষ্ট করেছি। যাতে সবাই জানতে পারেন- সেনাবাহিনী কোথায় রয়েছে, কিভাবে রয়েছে, কিভাবে তারা বের হবেন।
রাতে কমিশন সচিবালয় ত্যাগ প্রাক্কালে সিইসি বলেন, সেনাবাহিনী সবসময় রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকে। এবারের নির্বাচনেও তাই থাকবে। তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্ট হল ঢাকা সিটির কেন্দ্রবিন্দু। মিরপুরে যেতে গেলেও ক্যান্টনমেন্ট বেটার, উত্তরায় যেতে গেলেও ক্যান্টনমেন্ট বেটার। সেনা সদস্যদের তো এক জায়গায় থাকতে হবে? আমরা মনে করেছি, ক্যান্টনমেন্ট তাদের জন্য ‘বেস্ট পজিশন’। তবে তাদের ডাকা হলেই তারা মুভ করবে। তিনি বলেন, ‘কৌশলগতভাবে ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুভ করাটা সেনাবাহিনীর জন্য সহজ হবে। রিটার্নিং অফিসাররা ডাকা মাত্রই তারা চলে আসবে। ম্যাজিস্ট্রেটও তাদের সঙ্গে থাকবে।’ তাই কোনো সমস্যা হবে না বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে নির্বাচনে সেনা সদস্যদের টহল দেয়ার প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে মো. শাহনেওয়াজ আরও বলেন, আমি আগেও বলেছি, আজকেও বলছি, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ র‌্যাব, বিজিবি, আনসার টহল ও অবস্থান নেবে। সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রেখেছি, যখনই প্রয়োজন হবে রিটার্নিং অফিসারা বলার সঙ্গে সঙ্গে মুভ করবে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রয়োজনের তুলনায় এ নির্বাচনে আইনশৃংখলা বাহিনী অনেক বেশি। তাই আলাদাভাবে সেনাবাহিনীর টহল আপাতত প্রয়োজন হবে না। তবে প্রয়োজন হলে যে কোনো মুহূর্তে তারা টহল দেবেন।
শাহনেওয়াজ বলেন, ‘তিন সিটি নির্বাচনে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের যার যেখানে অবস্থান থাকা উচিত, সেখানে রাখা হবে। যাতে ভোটাররা সুন্দর সুশৃংখলভাবে ভোট দিতে পারেন। এ নিয়শ্চতার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত হিসেবে সেনাবাহিনীকেও রেখেছি। চিঠির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, মূলত আমাদের এবং সেনাবাহিনীর অবস্থান বুঝাবার জন্যই চিঠি দেয়া হয়েছে। কোনো পরিবর্তন বা আলাদা কিছু নয়, জনগণের মনে যাতে সন্দেহ না থাকে। এ কারণেই আমার বলা, সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেই কাজ করবে। তবে রিটার্নিং অফিসার চাইলে তারা কাজ করবে। সেনাবাহিনীর ভূমিকা সঠিকভাবে থাকবে।
মাঠে না রেখে ক্যান্টনমেন্টে রাখা বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পড়ে না। তবে ক্যান্টনমেন্টের চার পাশেই সিটি কর্পোরেশন এলাকা। কাজেই ধরে নেয়া যায়, তারা সিটির মধ্যেই অবস্থান করবে। স্বস্তির জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে সিইসি মঙ্গলবার জানান। কিন্তু সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে রাখলে জনমনে ওই স্বস্তি থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগেও বলেছি, সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স তখনই দরকার হয়, যখন রিটার্নিং অফিসাররা প্রয়োজন মনে করেন। তিনি বলেন, নিয়মিত আইনশৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখে জনমনে স্বস্তি থাকবে। এছাড়াও প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী থাকবে। কাজেই যারা ভোট দেবেন ও ভোট প্রার্থনা করবেন কারোর সমস্যা হবে না।
এছাড়া আমাদের ভোটার ও ভোট প্রার্থনাকারীরা এত উত্তেজিত নয় যে, তাদের পাহারা দিতে হবে। তারপরও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রেখেছি। চট্টগ্রামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাশেই তাদের ক্যান্টনমেন্ট রয়েছে। কাজেই সমস্যা হবে না। তারা ক্যান্টনমেন্টে থাকবেন।

No comments

Powered by Blogger.