আর্মেনীয় গণহত্যার শতবর্ষ উদযাপন

২৪ এপ্রিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত বুকে নিয়ে সারা বিশ্বে স্বজনদের গণহত্যার শতবর্ষ পূর্তির দিনটি পালন করছে আর্মেনীয়রা। শুক্রবার দেশটিতে স্মরণানুষ্ঠানের পাশাপাশি হাজার হাজার লোক শোভাযাত্রা সহকারে রাজধানী ইয়েরেভানের উপকণ্ঠে স্থাপিত একটি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করার কথা রয়েছে। পরে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিদেশী নেতাদের মধ্যে রাশিয়া ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান তুর্কিদের হাতে বহু আর্মেনীয় নিহত হয়। আর্মেনীয়রা একে গণহত্যা আখ্যায়িত করলেও তুরস্ক এ ব্যাপারে বরাবর তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে। কয়েক শতাব্দীর পারস্য ও বাইজানটাইনের শাসনের পরে ১৯ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ রুশ ও তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যে বাস করছিল আর্মেনীয়রা। অটোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে ১৭ থেকে ২৩ লাখ আর্মেনীয় বাস করত। ১৯ শতকের শেষের দিকে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে অটোমান কর্তৃপক্ষ আনুগত্যের প্রশ্নে আর্মেনীয়দের সন্দেহের চোখে দেখতে থাকে। অটোমান শাসক সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের রাজত্বকালে এক থেকে তিন লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করা হয়। ১৯১৪ সালে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের পক্ষ নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয় তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্য।
যুদ্ধ চলাকালে অটোমান কর্তৃপক্ষ আর্মেনীয়দের ‘ঘরের শত্র“’ বলে প্রচারণা চালাতে থাকে। ১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল অটোমান সরকারের শত্র“ বলে সন্দেহে আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের কয়েকশ’ নেতা ও বুদ্ধিজীবীকে কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমান ইস্তাম্বুল) বন্দি করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের বেশির ভাগকেই হত্যা ও নির্বাসিত করা হয়। আর্মেনীয়রা এই ২৪ এপ্রিল দিনটিকেই গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ‘গণহত্যা’ বলছে জার্মানিও : একশ’ বছর আগে তুর্কি অটোমান শাসকদের নৃশংসতায় প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয় হত্যার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলছে জার্মান সরকারও। জার্মানির পার্লামেন্ট শুক্রবার বিস্ময়কর এক ভোটে আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাবনা অনুমোদন করেছে। এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তুরস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক বিবাদে জড়ানোর ঝুঁকিতে পড়ল দেশটি।

No comments

Powered by Blogger.