সরকার সমর্থকদের সুবিধা দিতে ইসি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে -খালেদা জিয়া

অব্যাহত হামলার পরও ষষ্ঠ দিনের মতো গতকাল সিটি নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে ইলেকশন কমিশনে ইউটার্নের সমালোচনা করে বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা বলেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েন জরুরি। সেনা মোতায়েন হলে ভোটাররা ভয়হীনভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। আমাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মর্যাদা উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। এর পরও তারা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সাহস পাচ্ছে না। ইসিকে সরকারের আজ্ঞাবহ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের নির্দেশে ইসি সেনা মোতায়েন না করে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীকে হারানোর নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েনে ভয় পায় কেন? সেনারা ক্যান্টনমেন্টে বসে থাকলে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে পারবেন না। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময়েও সরকার সেনাবাহিনীকে আসতে দেয়নি। সেই কারণে ৫৭ জন চৌকশ সেনাকর্মকর্তা হত্যা হয়েছে। এ সরকার একটি খুনি, জালেম সরকার। সরকার সেনাবাহিনীর ইমেজ ধ্বংসের চক্রান্ত করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরপর তিন দিন হামলা করা হয়েছে। পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি ভয় পাই না। আমি পিছু হটবো না, প্রচারণা চালিয়ে যাবো। ওপরে আল্লাহ আছেন। ভোটারদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন, ভয় পাবেন না। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন, সন্ত্রাসী কর্মকা- চালালে সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। গুম-খুন-নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ঢাকা সিটি উত্তরে আমাদের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে বাস মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করুন। এর পরে রাজধানী বারিধারা, নতুনবাজার, মধ্যবাড্ডা, লিংকরোড, গুলশান-১, গুলশান-২, প্রগতি সরণি, যুমনা ফিউচার সড়ক, বাড্ডা সড়ক, গুলশান লিংক সড়ক, বনানী, মহাখালী, বনানী ইউএই মৈত্রী (লাল) মার্কেটের প্রত্যেক দোকানে গিয়ে তাবিথ আউয়ালের পক্ষে ভোট চান খালেদা জিয়া। ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বাসায় গাড়ি মার্কায় ভোট চান তিনি। এ ছাড়া তার গাড়িবহর থেকে হ্যান্ড মাইকে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি লিফলেট বিলি করা হয়। এর আগে ৫ দিন প্রচারণা চালিয়ে ৪ দিনই সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত গাড়ি ও তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী সিএসএফের গাড়ি। এ সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হন। শনি থেকে বুধবার প্রতিদিনই প্রচারে বেরিয়ে খালেদা জিয়া হামলার শিকার হন। সোমবার কাওরান বাজার, বুধবার বাংলামটর মোড়ে সরকার সমর্থকদের ব্যাপক হামলার মুখে পড়েন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। অব্যাহত হামলার পর গতকাল খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে ঘিরে ছাত্রদলকর্মীদের ছিল বাড়তি তৎপরতা। কয়েক শ মোটরসাইকেল ও পায়ে হেঁটে খালেদা জিয়ার গাড়ি ঘিরে রাখেন ছাত্রদলকর্মীরা। বিএনপি চেয়ারপারসন বাসা পর্যন্ত ছাত্রদলকর্মীদের তার গাড়ি ঘিরে রাখেন। বিকাল সাড়ে ৫টায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এক পথসভায় বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। এ সময় ৩ সিটিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান। বনানী বাংলাদেশ ইউএইউ মৈত্রী কমপ্লেক্স (লাল মার্কেট) নিচতলা ১৫-২০টি দোকানে তাবিথের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারপত্র বিলি করেন। এ সময় পুরো মার্কেটে কয়েক শ লোক খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য ভিড় জমায়। প্রায় আঘা ঘণ্টা প্রচারপত্র বিলি করার পর ফের গাড়ির বহর মহাখালীর উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় ছাত্রদলকর্মীরা শ-খানেক মোটরসাইকেল নিয়ে গাড়ি বহরের সামনে দিয়ে যান। ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান ও সেক্রেটারি আকরামুল আহমেদকে পুরো শোডাউনের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। পরে খালেদা জিয়া মহাখালী ফ্লাইওভার হয়ে জাহাঙ্গীর গেট হয়ে গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা হন। রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি তার বাসায় পৌঁছান। এ সময় ছাত্রদলকর্মীরা তাবিথের পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করেন। পথচারীদের কাছে তার পক্ষে ভোট চান। খালেদা জিয়ার প্রচারকালে পুরো এলাকায় রাস্তার দুই পাশে সাধারণ পথচারী দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান। এ সময় খালেদা জিয়াও গাড়িতে বসে হাত নাড়েন। উল্লেখ্য, হামলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ফলে গাড়ির সংকটে বৃহস্পতিবার প্রচারণায় বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া।

No comments

Powered by Blogger.