পোশাকশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অনেক লক্ষ্য অর্জন বাকি

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের তৈরী পোশাকশিল্পে বেশ কিছু অগ্রগতি হলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক লক্ষ্য অর্জন বাকি। ভয়াবহ ওই ভবন ধসের ২য় বর্ষপূর্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে একথা বলেছে। এতে, হতাহতদের প্রতি সমবেদনা বার্তা জানানোর পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি একাধিক আহ্বান জানানো হয়েছে। রানা প্লাজা ভবন ধসের পর গত দুবছরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত উদ্যোগ ও অগ্রগতির বিষয়গুলো উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাস্টেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট ফর বাংলাদেশ’ এর লক্ষ্য অর্জন করার জন্য উল্লেখযোগ্য কাজ বাকি রয়েছে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরী পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওই সাস্টেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের ঘোষণা দেয়। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আইএলও’র সঙ্গে নিবিড় পরামর্শ বজায় রেখে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম আইন সংস্কার অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা, তৈরী পোশাক শিল্পের সকল কারখানার নিরাপত্তা পরিদর্শন সম্পন্ন করা এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে স্বচ্ছ ও সময়োচিত উপায়ে নিবন্ধিত করার প্রচেষ্টাগুলোকে আমরা উৎসাহ ও সমর্থন জানাই। আর কালক্ষেপণ না করে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদ-ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধিগুলো বাস্তবায়ন করতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। এ ছাড়াও, যৌথ বিবৃতিতে ইকনোমিক প্রসেসিং জোনের ওপর আইন পাস করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যেখানে শ্রমিকরা জোনের বাইরের শ্রমিকদের যথোপযুক্ত অধিকার নিশ্চিত থাকবে। গত দুবছরে অগ্রগতির প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার অ্যাসোসিয়েশনের স্বাধীনতা, যৌথ দরকষাকষি এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু দিক জোরদার করতে শ্রমিক আইন সংশোধন করেছে। সরকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন পরিদর্শক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেয়া, অগ্নি ও নির্মাণগত নিরাপত্তা পর্যালোচনা এবং কারখানা নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে পোস্ট করার কাজগুলো শুরু করেছে। শ্রমিকদের উদ্বেগ জানানোর জন্য স্থাপন করেছে একটি হটলাইন। আর ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুমানিক ৩০০টি নতুন ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন করেছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স উদ্যোগ দুটির অগ্রগতির প্রশংসা করেছে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র। পক্ষান্তরে, অনৈতিক শ্রম চর্চা, সহিংসতা, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে হয়রানির ঘটনাগুলোতে বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে উল্লেখ করেছে তারা। শ্রমিকরা অধিকার চর্চা করতে না পারলে আর তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও উদ্বেগ তুলে ধরার জন্য একত্র হতে না পারলে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকার দুর্বল ও অস্থায়ী থাকবে। বিবৃতির শেষে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি দৃঢ় ও টেকসই/স্থায়ী। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীল উন্নয়ন যেন শ্রমিক নিরাপত্তা ও অধিকারের সঙ্গে একযোগে উন্নয়ন হয় তা নিশ্চিত করতে আইএলও’র ওতোপ্রোত সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করা অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র।
বিবৃতি স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তারা হলেনÑ ফ্রেডেরিকা মঘারিনি (ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট), সেসিলিয়া ম্যালমস্ট্রম (ইউরোপীয় কমিশনের বাণিজ্য বিষয়ক কমিশনার), নেভেন মিমিকা (আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক ইইউ কমিশনার), মেরিয়্যান থাইসেন (নিয়োগ, কর্ম দক্ষতা, লেবার মোবিলিটি ও সামাজিক বিষয়ক ইইউ কমিশনার), জন কেরি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী), মাইকেল বি.জি. ফ্রোম্যান (মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি), আলফোনসো ই. লেনহারডট (ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক) এবং থমাস ই. পেরেজ (মার্কিন শ্রমমন্ত্রী)।

No comments

Powered by Blogger.