আন্দোলন থেকে নির্বাচনে, মিশ্র প্রতিক্রিয়া জোটসঙ্গীদের

টানা তিন মাসের আন্দোলনের ফল নিয়ে বিএনপি-জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ আন্দোলনের কোনো ফল খুঁজে না পেলেও কারও কারও চোখে কিছু সাফল্য ধরা পড়েছে। তিন মাস আন্দোলনে থাকার পর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোযোগী হওয়াকে কৌশল হিসেবে দেখছেন শরিকদের অনেকে। অবশ্য বিএনপির সূত্র জানায়, তিন মাস ধরে যে আন্দোলন চলছে, তাতে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর তেমন কোনো ভূমিকা নেই। জোটের বড় শরিক জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য শরিক দলগুলো সেভাবে রাস্তায় থাকে না। বেশির ভাগ দলের সামর্থ্যও সীমিত।
৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের এক বছরের মাথায় নতুন নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ শুরু করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। কার্যকারিতা না থাকলেও সে অবরোধ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো স্থগিত করা হয়নি। এর আগে জোটের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা করা হয়েছিল, বিজয় না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে জোটনেত্রী খালেদা জিয়াও বলেছিলেন, জোটের আন্দোলন ‘যৌক্তিক পরিণতিতে’ না পৌঁছানো পর্যন্ত চলবে। কিন্তু তিন মাসের আন্দোলনে সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলতে পারলেও নিজেদের প্রধান দাবি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচন বা এ লক্ষ্যে সংলাপের কোনো আশ্বাস সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি বিএনপি-জোট। এখন অবরোধ কর্মসূচি ‘নামমাত্র’ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এখন বরং বিএনপি-জোট আন্দোলনের চেয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে বেশি মনোযোগী। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ছেড়ে বাসায় যাওয়া; ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকে অনেকে আন্দোলনের আপাতত ‘এক্সিট’ হিসেবে দেখছেন। এ অবস্থায় তিন মাসের আন্দোলনের অর্জন কী, তা নিয়েও বিচার বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।
এই তিন মাসের আন্দোলনে জোটের প্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে ২০-দলীয় জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনের এটা লক্ষ্য ছিল না যে এর কারণে জানমালের ক্ষতি, সহিংসতা বা জনজীবনে কষ্ট বাড়ুক। লক্ষ্য ছিল, একটি বিষয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, তা হলো, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও ভোটারবিহীন ছিল না, এটি ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর আড়াই বছর আগে আরেকটি উদ্দেশ্যমূলক কাজ করা হয়েছিল। আদালতের রায় অবজ্ঞা করে মিস ইউজ ও মিসকোট করে পঞ্চদশ সংশোধনী বাস্তবায়ন করা হয়। এই তিন মাসের আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সচেতন মহল এ দুটি কাজ সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। ইবরাহীম মনে করেন, সরকার বিএনপি-জোটের আন্দোলন স্তিমিত করিয়ে দিতে সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়েছে। তবে এই নির্বাচনে যে-ই জিতুক না কেন, কৌশলগত বিজয় হবে ২০ দলের।
ইবরাহীমের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে জোটের শরিক অন্য একটি দলের মহাসচিব বলেন, ‘কিছু বলতে হলে তা আমাদের বিপক্ষে যাবে, শেষে হজম করা যাবে না। আন্দোলনের প্রাপ্তি শূন্য। এখন আন্দোলন ফেলে নির্বাচন করা হচ্ছে, ৫ জানুয়ারি তাহলে নির্বাচনে গেলাম না কেন-এমন প্রশ্নও সামনে আসছে।’
বিএনপির সূত্র জানায়, টানা তিন মাসের আন্দোলনে নেতা-কর্মীরা ক্লান্ত। ঢাকায় এবারও কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা যায়নি। নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই আছেন আত্মগোপনে। আন্দোলন কার্যকারিতা হারিয়েছে। এখন হুট করে আন্দোলন থেকে পিছু হটাও হবে বড় রাজনৈতিক পরাজয়। এ অবস্থায় বিএনপি মনে করছে, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীরা আবার সংগঠিত হতে পারবেন। এর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলেও চলে আসতে পারে। আপাতত আন্দোলন থেকে বের হওয়ার একটি পথ হিসেবে সিটি নির্বাচনকে দেখছেন নেতাদের কেউ কেউ। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিএনপির আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনে স্থবিরতার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি-জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী প্রথম আলোকে বলেন, কৌশলগত কারণে রাজনীতিতে কখনো কখনো পিছু হঠতে হয়। এটাও একটা কারণ হতে পারে। তিনি জানান, যেহেতু জোটের বৈঠক করার মতো পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় ধরে নেই, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জোটের পক্ষ থেকে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে। তিনি যা ভালো মনে করেন, তা করছেন। আবদুল লতিফ নেজামী মনে করেন, এবারের দীর্ঘ আন্দোলন একটি মাইল ফলক। এখনো অবরোধ চলছে। সফলতা আসবে।

No comments

Powered by Blogger.