ছাদে মাছ ও সবজি চাষ by নাজিব মুবিন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ সালাম বাংলাদেশে প্রথম বাড়ির ছাদে সমন্বিত মাছ ও সবজি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এর মাধ্যমে একই সাথে ট্যাঙ্কে ও মাচায় মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করা যাচ্ছে। মাছ ও সবজি চাষের এ পদ্ধতিকে বলা হয় একোয়াপনিক্স। ২০১১ সালে আমেরিকা থেকে হাতে-কলমে হাইড্রোপনিক্সের উপর গবেষণ করেন অধ্যাপক ড. এম এ সালাম। পরে দেশে ফিরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিজ বাড়ির ছাদে হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি ব্যয়বহুল হওয়ায় নিজ উদ্দ্যোগে একোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে গবেষণ শুরু করেন। এর সাফল্য পান ২০১২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে।
এ পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা আঙিনাতে মাছ ও সবজি একই সাথে চাষ করা সম্ভব হয়েছে। মাছ চাষের জন্য প্রয়োজন পড়বে খাদ্যের কিন্তু সবজি চাষের জন্য অতিরিক্ত কোন প্রকার সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন নেই। ফলে উৎপাদিত মাছ ও সবজি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু। মানও বাজারের যেকোন মাছ বা সবজি থেকে অনেক বেশি। আর উলম্ব পদ্ধতিতে সবজির চাষ করলে অল্প জায়গায় পাওয়া যাবে অধিক ফলন।
অধ্যাপক ড. এম এ সালাম জানান, একোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই সবজি চাষ করা সম্ভব। ট্যাঙ্কে মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত ওই পানি ব্যবহার করে শাক-সবজি উৎপাদন করা হয়েছে। তাই কোন প্রকার রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না। খরা ও উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলের জন্য এ পদ্ধতি খুবই উপযোগী। কারণ, এতে প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ পানি কম লাগে। যেকোন আকারের প্লাস্টিক ট্যাঙ্ক অথবা ড্রামের মধ্যে পানি দিয়ে সেখানে তেলাপিয়া, মাগুর, কই, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের মাছ চাষ করা যায়। মাছ চাষের ওই পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি শাক-সবজি বিশেষ করে টমেটো, চেরী টমেটো, স্ট্রবেরী, শসা, করলা, শিম, ব্রকলি, পুদিনা, বেগুন, দেশি লেটুস, আমেরিকান লেটুসের ফলন বেশ ভালো হয়। এভাবে একটি টমেটো গাছ থেকে প্রায় দুই কেজি টমেটো পাওয়া সম্ভব।
বাড়ির আঙিনায় বা বাসার ছাদের আয়তনের উপর নির্ভর করে সবজি চাষের জন্য একটি কাঠের আলনা তৈরি করতে হবে। আলনায় নির্দিষ্ট দূরত্বে উলম্বভাবে বড় আকারের পাইপ বসাতে হবে। পইপের ভিতর নুড়ি পাথর ও হালকা করে নারিকেলের ছোবলা দিয়ে পাইপের গায়ে ছিদ্র করে সবজির চারা রোপণ করতে হবে। পাইপের ভিতর দিয়ে নিদিষ্ট মাত্রায় ফোটায় ফোটায় সাইফোন পদ্ধতিতে ওই মাছ চাষের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হয়। এতে করে পানি চারার গোড়ায় পৌঁছাবে এবং আবার নির্দিষ্ট পথে ফেরত গিয়ে পূনরায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হবে। বিশেষ করে মাছের ট্যাঙ্কের অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ভেঙে গাছের খাদ্য উপযোগী নাইট্রেটে পরিণত করে পানিকে দূষণমুক্ত করে। এভাবে বিভিন্œ আকারের প্লাষ্টিকের চৌবাচ্চা, গোলাকার পাত্রে এ পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। সবজি চাষের জন্য বাড়তি কোনো ধরনের সার বা মাটির প্রয়োজন না হলেও মাছের জন্য মাছের ব্যবহৃত সাধারণ খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। আর গাছে যাতে ছত্রাক আক্রমণ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।
তিনি আরও জানান, যে কোন কেউ ইচ্ছা করলে অল্প জায়গায় কম খরচে ওই চাষের ব্যবস্থা করতে পারে। আর এর মাধ্যমে পরিবেশেরও অনেক উপকার হয়। বিশেষ করে ঢাকার মত ব্যাস্ত শহরগুলোতে গরমকালে বাসার ছাদে এই রকম চাষ করলে ওই এলাকায় গরম অনেকাংশেই কমে যাবে।
অধ্যাপক ড. এম এ সালামের একান্ত ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, আমি এ পদ্ধতিকে আরও বৃহত্তর আকারে প্রাসারের জন্য একটি গবেষণাগার স্থাপনা করব। এ কাজে বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে সাহায্য করলে আমি দেশের মানুষের জন্য আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারব।

No comments

Powered by Blogger.