বিদেশী মিডিয়ায় কামারুজ্জামানের রায়

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আপিলে হেরে গেছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। সুপ্রিম কোর্ট আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় এখন তার ফাঁসি কার্যকরের পথ পরিষ্কার হয়েছে। তিনি নিয়ম অনুযায়ী আইনি সময়সীমার মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে অথবা চাইলে তা প্রেসিডেন্ট যদি প্রত্যাখ্যান করেন তাহলে যেকোন সময় তার ফাঁসি কার্যকরে কোন বাধা নেই। তবে তার ফাঁসির আদেশ বহাল রাখায় দেশে চলমান অস্থির পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ একটি যুদ্ধাপরাধবিষয়ক আদালত ২০১৩ সালের মে মাসে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির রায় দেয়। বিরোধী দলগুলো দাবি করছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্যদিকে মানবাধিকারবিষয়ক গ্রুপগুলো দাবি করেছে, এ বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা হয় নি। মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল সুপ্রিম কোর্টে প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর পরই বিশ্ব মিডিয়ায় এ নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি’র রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের করা আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্য দিয়ে তার ফাঁসি কার্যকরের শেষ আইনি বাধা দূর হয়েছে। গতকাল প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার রিভিউ পিটিশন প্রত্যাখ্যান করেন। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে নির্যাতন, অপহরণ, গণহত্যা সহ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। তার গণহত্যার কারণে একটি গ্রামের নাম হয়েছে ‘বিধবাদের গ্রাম’। এসবের বিরুদ্ধে আদালত তাকে ফাঁসির নির্দেশ দেন। এ নিয়ে একটি আপিল কোর্ট ওই রায় গত বছরের নভেম্বরে বহাল রাখেন। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় কোন নেতার ফাঁসি হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জামায়াতের আরেক নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ওদিকে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামানকে ধরার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতের কাছে তিনি ধরা পড়েছেন। সম্ভাব্য দ্রুত সময়ের মধ্যে তার ফাঁসি হবে বলে আমরা আশা করি। বিবাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, কামারুজ্জামান এখন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন। এটা এখন তার নিজস্ব ব্যাপার। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, তিনি প্রাণভিক্ষা চাইলে যদি তা প্রেসিডেন্ট প্রত্যাখ্যান করেন তাহলে তার ফাঁসি যেকোন সময় কার্যকর করা যাবে। অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস লিখেছে, বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ যুদ্ধাপরাধ আদালত কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের মে মাসে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সর্বোচ্চ আদালত সেই রায় বহাল রেখেছেন। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, যেমনটা দেখা গিয়েছিল জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করার পরে এক অস্থিরতা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বলছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে যে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাতে যে ক্ষত রয়ে গেছে এ বিচার সেই ক্ষতকে পূরণ করবে। ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই লিখেছে, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের যে রায় হয়েছিল তা বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাকে ২০১৩ সালের মে মাসে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অনলাইন বিবিসি লিখেছে, কামারুজ্জামানের রিভিউ পিটিশন প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। এর পরই এটর্নি জেনারেল বলেছেন, কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না এমন কোন কারণ নেই। প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। বার্তা সংস্থা এপি’র রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের সিদ্ধান্তেই ৬২ বছর বয়সী মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের শেষ আইনি বাধা দূর হলো। তিনি যদি প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চান এবং প্রেসিডেন্ট তা প্রত্যাখ্যান করেন তাহলে দ্রুততম সময়ে তার ফাঁসি দেয়া হতে পারে। এতে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ৯ মাসের যে যুদ্ধ হয় তাতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে- এমনটা দাবি করা হয় বাংলাদেশ থেকে। ওই সময়ে প্রায় দু’ লাখ নারীকে ধর্ষণ করা হয়। প্রায় এক কোটি মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে ঠাঁই নিতে বাধ্য হন। ওদিকে গতকাল আদালত রায় দেয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী আজ সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে। রায় দেয়ার পর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল জামায়াত ও পুলিশের মধ্যে নোয়াখালীতে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে দুটি আদালত এক ডজনেরও বেশি নেতাকে অভিযুক্ত করেছে। তাদের বেশির ভাগই বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নেতা। তারা সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন। জামায়াত বলছে, এই বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অনলাইন আল জাজিরার রিপোর্টে বলা হয়েছে, কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা তার মৃত্যুদণ্ডের রায় বৈষম্যমূলক দাবি করে রিভিউ আবেদন করেন। গতকাল তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। এখন তার ফাঁসির রশি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা প্রার্থনা। যদি প্রেসিডেন্ট তাকে প্রাণভিক্ষা দেন তাহলেই তিনি রক্ষা পেতে পারেন। তবে তার আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা তা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ তার কাছে জানতে চাইবে কামারুজ্জামান প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা। প্রেসিডেন্ট তার প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে যেকোন সময় তাকে ফাঁসি দেয়া যাবে। এর আগে আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যাখ্যান করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল। এ প্রতিবেদনেও বলা হয়, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল রাখায় বাংলাদেশের চলমান অস্থির পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিরোধীরা এরই মধ্যে তীব্র আন্দোলন শুরু করেছে।

No comments

Powered by Blogger.