গাড়ি ছিনতাইয়ে প্রিয়ার ফাঁদ

কয়েক মাস আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের গাড়িচালক টিপু সুলতানের সঙ্গে পরিচয় হয় মেহেদী হাসান নামে এক ব্যক্তির। তখন থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কয়েকবার একে অন্যের বাড়িতে যাতায়াতও করেছেন। মেহেদী হাসান তার স্ত্রী প্রিয়াকে নিয়ে টিপু সুলতানের গাড়ি ছিনতাইয়ের ফাঁদ পাতে। টিপু সুলতান উদার মনে মেহেদী হাসানের বাড়িতে একদিন যান। ওই সময় টিপু সুলতানকে চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে অন্যস্থানে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার লাশ ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া এলাকায়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় মেহেদী হাসান (৩৬) ও তার স্ত্রী মোরশেদা আক্তার প্রিয়া (৩২) কে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ঢাকা মেট্রো-ঘ (১৩-৮১০৪) নামে কালো পাজেরো স্পোর্টস জিপ উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির  মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর শাহআলী থানাধীন কাজীফুড়ির গোদারাঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেহেদী ও প্রিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। চালককে হত্যা করে তারা উদ্ধারকৃত জিপটি ছিনতাই করেছিল। গত ১৬ই মার্চ সন্ধ্যায় ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া এলাকায় আসামি মেহেদী হাসানের ভাড়া বাড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা মতে আসামি মেহেদী তার পূর্ব পরিচিত ড্রাইভার টিপু সুলতানকে তার ভাড়া বাসাতে আসার জন্য অনুরোধ করে।
তিনি আরও জানান,ওই দিন রাতে টিপু সুলতান রাত ১০টায় মেহেদীর বাসায় গেলে মোরশেদা আক্তার প্রিয়া পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কোকের সঙ্গে নেশাজাতীয় ওষুধ খাওয়ায়। এরপর তারা দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠে। গাড়ি চালানোর একপর্যায়ে চালক তাদেরকে ঘুমঘুম ভাবের কথা জানালে তারা তাকে কৌশলে ঘুম ভাব কাটানের কথা বলে পুনরায় চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ায় এবং তাকে কৌশলে গাড়ির পিছনের সিটে বসায়। এ সময় আসামি মেহেদী হাসান গাড়ি চালানো শুরু করে। গাড়িটি তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকায় গেলে টিপু সুলতান তখন পুরোপুরি অচেতন হয়ে যায়। এরপর টিপু সুলতানকে মেহেদী হাসান হাত-পা বেঁধে রাস্তার উপর ফেলে দিয়ে ওই জিপটি তার মাথার উপর তুলে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে জিপটি নিয়ে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, ১৭ তারিখ সকালে তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকায় টিপু সুলতানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। পরে ওই লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে প্রেরণ করে। গত ১৭ই মার্চ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম শেরেবাংলা নগর ও ঢাকা দারুস সালাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন যে, এসএমইসিআই প্রকল্পের ড্রাইভার টিপু সুলতান পাজেরো স্পোর্টস জিপসহ নিখোঁজ হয়েছেন। ১৮ই  মার্চ সকালে নিহতের স্ত্রী ইতি পারভিন তার স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। বিষয়টি তদন্ত শুরু করেন ঢাকা মহানগর গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত দল তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে গাড়ি ছিনতাই ও কারণ উদঘাটন করে। গ্রেপ্তারকৃত দুইজনকে রিমান্ডে এনে তাদের আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিবি ডিসি (পশ্চিম) শেখ নাজমুল আলম, ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান, এডিসি (মিডিয়া) জাহাঙ্গির হোসেন,  এডিসি (পশ্চিম) আশিকুর রহমান।

No comments

Powered by Blogger.