নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে -ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ

গত বছর ৫ জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচনের কারণে নির্বাচন কমিশন ও দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা কমে গেছে বলে মনে করছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)। নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসিকে পেশাগত ও নিরপেক্ষ আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। প্রার্থীরা যাতে নির্ভয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল ও নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে এবং ভোটাররা ভীতিকর অবস্থা কাটিয়ে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে তারা।
গতকাল জাতীয় প্রেস কাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিমত ব্যক্ত করে। লিখিত বক্তব্যে গ্রুপের পরিচালক ড. মো: আব্দুল আলীম বলেন, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। এ জন্য সবার আগে এ বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এটি সম্ভব। নির্বাচন কার্যক্রমের প্রতিটি পদক্ষেপে পেশাগত আচরণ, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে এ বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
তিনি বলেন, একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রার্থীরা যাতে নির্ভয়ে ও নিশ্চিন্তে মনোনয়নপত্র দাখিল এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভোটাররাও যাতে ভীতিকর অবস্থা কাটিয়ে নির্বিঘেœ ভোট দিতে আসতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ড. আলীম বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে অবশ্যই নিরাপত্তা বাহিনী এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সমান নজরে দেখতে হবে। কোনো ব্যক্তির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যেন কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের অভাব জনগণের মধ্যে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে পরে না। এর ফলে সমাজে সঙ্ঘাত বেড়ে যায়, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, ভীতিময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়, প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এবং সার্বিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। তাই নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ড. আলীম আরো বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি অরাজনৈতিক নির্বাচন। কিন্তু মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়ন দলীয়ভাবে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় ফোরামে প্রার্থী নির্বাচন করছে, সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছে এবং দলের অন্য প্রার্থীদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলছে। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নারী ভোটকেন্দ্রে নারী কর্মকর্তা নিয়োগেরও আহ্বান জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির স্টিয়ারিং গ্রুপের সদস্য তালেয়া রেহমান বলেন, আমরা ৫ জানুয়ারির একদলীয় প্রহসনমূলক নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চায় না, একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাই। সিটি করপোরেশন নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয় সে ব্যাপারে তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য সম সুযোগের ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। তবে যেহেতু দীর্ঘ দিন পর একটি নির্বাচন হচ্ছে তাকে গ্রহণযোগ্য করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, যেন ভোটাররা নির্বিঘ্নে  ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
তালেয়া রেহমান বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের হয়ে কাজ করতে জনপ্রতিনিধিত্ব করা। এ ক্ষেত্রে পেট্রলবোমা নিপে বা সহিংসতা কোনো রাজনৈতিক দলের কাছেই কাম্য হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ড. নাজমুুল আহসান কলিমউল্লাহ, এ এইচ এম নোমান, হারুন অর রশীদ, বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, কামরুল হাসান মঞ্জু প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.