বর্ণিল ফাগুনে ভালোবাসার উষ্ণতা by একরামুল হুদা

(ভালোবাসা নির্দিষ্ট কারও জন্য নয়, ভালোবাসা সবার জন্য—এই ভাবনা থেকেই আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ছোট বোনকে রজনীগন্ধা ফুল উপহার দিচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী বীথি। ছবিটি রাজশাহী নগরের ফুদকিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী) ফাগুন এল মাত্র গতকালই। মনে তাই লাল, হলুদ আর বাসন্তী রঙের বর্ণিল ছোঁয়া। এর মধ্যেই চলে এল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বাঙালির বসন্ত দিনের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া পাশ্চাত্যের ভালোবাসা দিবস উষ্ণতা ছড়ায় নিজের মহিমায়। ভালোবাসার মানুষটিকে আজ কেউ কেউ জানাবে মনের কথা। আর যারা আগেই জানিয়ে ফেলেছে, তারা প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কাটাবে আজকের দিনটি। কারও কারও কাছে এই ভালোবাসা শুধু মনের মানুষটির জন্য নয়; সবার জন্য। এই ভালোবাসা হতে পারে বন্ধুর জন্য বন্ধুর, বাবা-মা-ভাই-বোন ও পরিবারের জন্য, রাস্তায় অসহায় বসে থাকা ছোট্ট পথশিশুটির জন্য কিংবা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষটির জন্য।
হরতাল-অবরোধে পেট্রলবোমার আগুনে দগ্ধ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে থাকা রোগীদের জন্য ভালোবাসা দেখাচ্ছেন একঝাঁক তরুণ-তরুণী। স্বপ্ন নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন আজ সারা দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গোলাপ বিক্রি করবে। গোলাপ বিক্রির টাকা দিয়ে দেওয়া হবে অগ্নিদগ্ধদের সাহায্যার্থে। স্বপ্নের ঢাকা কমিটির আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা চাই সব শ্রেণির মানুষের জন্য ভালোবাসা।’
আঙুল কেটে রক্তে রক্তে মিলিয়ে দেওয়া, চিঠির ভাঁজে গোলাপের পাপড়ি গুঁজে দেওয়া, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কাব্যচর্চা করা, চণ্ডীদাস অথবা দেবদাসের মতো চরিত্র হয়ে ওঠা আজকের যুগে প্রায় অচল। এর বদলে মুঠোফোন বার্তা, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার জোয়ার বইবে। বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতা আর ভালোবাসার উৎসবে মুখর হবে জনপদ।
দিনটি পালনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে থাকছে উৎসব আয়োজন। বাদ যাবে না দেশের অন্য এলাকাগুলোও। তবে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে আছে মানুষ। এই চাপা আতঙ্কের কারণে অন্যান্য বছরের মতো ততটা উচ্ছ্বাস নিয়ে পালিত হচ্ছে না দিনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বসেছে অস্থায়ী ফুলের দোকান, তবে বেচাকেনা খুব বেশি না বলে দোকানিরা জানালেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাবাসসুম, সানজানা, সাদিয়া, হাবিবা, ওয়াহিদা ও নাসুহা ফুল কিনছিলেন এসব দোকান থেকে। কথা হলো তাঁদের সঙ্গে। জানালেন, বন্ধুরা মিলে আজ সারা দিন অনেক ঘুরবেন। সবাই মিলে একসঙ্গে উদ্‌যাপন করবেন ভালোবাসা দিবস।
এ দিনটি উপলক্ষে কোমল পানীয়র প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা রাজধানীজুড়ে নানা আয়োজন রেখেছে। জুটিদের দেওয়া হবে একটি ৫০০ মিলি কোক, একটি গোলাপ ও একটি ডিসকাউন্ট কুপন। এ জুটি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার নয়, একসঙ্গে দুজন থাকলেই তাঁদের জুটি হিসেবেই ধরে নেবে কোকাকোলা।
আজকের এই ভালোবাসা দিবসের পেছনের যে গল্প, তা আত্মদানের গল্প। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্যমতে, ‘রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস ২ (মে ২১৩-জানুয়ারি ২৭০) সেনাবাহিনীতে লোকবল বাড়াচ্ছেন। হঠাৎ তিনি ঘোষণা দিলেন, কোনো যুবক আর বিয়ে করতে পারবে না। এই অদ্ভুত ঘোষণার বিরোধিতা করে সন্ত ভ্যালেন্টাইন গোপনে যুবকদের বিয়ের আয়োজন চালিয়ে যেতে লাগলেন। একসময় ধরা পড়ে গেলেন ভ্যালেন্টাইন, নিক্ষিপ্ত হলেন কারাগারে। এর মধ্যে ভ্যালেন্টাইন মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছেন কারারক্ষী মেয়েটিকে। এর কিছুদিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি সম্রাটের নির্দেশে ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করা হয়। কথিত আছে, ওই দিনই প্রথম তিনি মেয়েটিকে এক চিঠিতে জানান তাঁর ভালোবাসার কথা। চিঠির নিচে লেখেন, ‘ইতি, তোমারই ভ্যালেন্টাইন’। প্রায় ১ হাজার ৭০০ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই দিনটিকে ইউরোপে পরিচিত করে তোলেন জিওফ্রে চসার চতুর্দশ শতকে। ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে পৌঁছায় চীন, জাপান, ভারত ও বাংলাদেশের মতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও।

No comments

Powered by Blogger.