সমাধানের সরল পথ by গোলাম রহমান

জনসাধারণ স্বস্তিতে নেই। আতঙ্ক-আশঙ্কা ছায়ার মতো তাদের পিছু ছাড়ছে না। এ আতঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার; এ আশঙ্কা নিরাপত্তাহীনতার। ২০১৪-এর জানুয়ারির ৫ তারিখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। তাদের দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান। প্রসঙ্গত, সরকার ইতিপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের আলোকে অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা রহিত করে। বিএনপি ও তার সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জনের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সারাদেশে ব্যাপক সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। প্রতিযোগী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী দলগুলো থেকে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অন্যদের নির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি খুব বেশি ছিল না। বিএনপি ও সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচনবিরোধী সহিংস আন্দোলনের কারণেই এমন অবস্থার উদ্ভব হয়। তবে সরকারের দৃঢ়তার কারণে নির্বাচন কমিশন একটি আইনানুগ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। দেশে শান্তি ফিরে আসে।
বছর ঘুরে আবার আসে জানুয়ারি। ৫ জানুয়ারি ঢাকায় জনসভা করার অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত ২০ দলীয় জোট সারাদেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে অদ্যাবধি। এখানে-সেখানে মাঝে মধ্যে, কখনোবা সারাদেশে হরতাল ডাকছে। জনগণকে তাদের কর্মসূচিতে শামিল হতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে তাদের নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী সড়ক-মহাসড়কে চোরাগোপ্তা হামলা পরিচালনা করছে। বাস, ট্রাক, অটোরিকশাসহ যানবাহনে বিচ্ছিন্নভাবে পেট্রোল বোমা বা ককটেল নিক্ষেপ করে অগি্নসংযোগসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। সম্ভবত তাদের ধারণা, দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় এবং জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানো এবং তৎপরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সম্ভব হবে। তাদের এসব কার্যক্রম জনগণ সমর্থন করে কি-না, সে ভাবনা তাদের আছে বলে মনে হয় না। তবে এসব আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডে মানুষ ভয়ভীতিতে আছে এবং দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের কার্যকারিতার বিষয়েও জনমনে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকার বিষয়টিকে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে পুলিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের ধারণা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, খালেদা জিয়া ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির মামলা আছে তা ঠেকাতে বিএনপি জোটের এই সহিংস আন্দোলন। সিভিল সোসাইটির কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শুরু ও রাজনৈতিক সমাধানের প্রস্তাব করছেন। জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিএনপিকে প্রথমেই জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। অন্যদিকে অনেকের ধারণা, তাদের মূল দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা পুনঃপ্রবর্তনে সরকার সম্মত হলেই কেবল বিএনপি আলোচনার টেবিলে আসতে ইচ্ছুক। বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন। সরকার মনে করে, বর্তমান সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তির পরই কেবল আরেকটি নির্বাচন হবে। বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা ছিল বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত এবং তার ফল তাদের ভোগ করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথার ধারণার সূচনা হয় এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনের সময়। সে সময় রাষ্ট্রপতি এরশাদের পদত্যাগের পর পরবর্তী সরকারের রূপরেখার বিষয়ে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী প্রথমে উপ-রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করেন। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অতঃপর রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করেন এবং উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ১১ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার স্থলে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হন ও সরকার গঠন করেন।
বিএনপি সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ২০ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে মাগুরার উপনির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপ ও ব্যাপক কারচুপি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের সংকটের সূচনা করে। মূলত তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের একটি সুষ্ঠু উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতা এবং নির্বাচন-পরবর্তীকালে এর প্রতিকার বিধানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মো. আবদুর রউফের অনীহা সংকটকে ঘনীভূত করে। আওয়ামী লীগ কারচুপিমুক্ত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথা প্রবর্তনের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করে। সরকার সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। বিএনপি ও তার মিত্ররা সংসদের ৩০০টি আসনেই জয়লাভ করে। নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতিও ছিল নগণ্য। খালেদা জিয়া পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দেশের মানুষ নীলনকশার নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সংকটে পরিণত হয়। লাগাতার হরতালে দেশ অচল হয়ে পড়ে। সরকার সংসদের প্রথম অধিবেশনে ২৮ মার্চ, ১৯৯৬ তারিখে 'সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬' পাস করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা প্রবর্তন করে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ক্ষমতা হস্তান্তরের আইন পাস হওয়ার পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় ও সরকার পদত্যাগ করে।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান দেশের প্রথম সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১২ জুন, ১৯৯৬ তারিখে পুনরায় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ও সরকার গঠন করেন। সরকারের মেয়াদ পূর্তির পর ১৫ জুলাই, ২০০১ তারিখে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে নিয়োগ লাভ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি এমন কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। বিএনপি সমর্থক আমলাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়। ১ অক্টোবর, ২০০১ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ যথাক্রমে ৪১ দশমিক ৪০ এবং ৪০ দশমিক ০২ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৯৩ ও ৬২ আসনে জয়লাভ করে। প্রসঙ্গত, পূর্ববর্তী জুন, ১৯৯৬-এর নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ যথাক্রমে ৩৩.৬ এবং ৩৭.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ১১৬ এবং ১৪৬ আসনে জয়লাভ করেছিল। এই নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষতা এবং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই পদ্ধতির কার্যকারিতার বিষয়ে সন্দেহের সূচনা হয়।
নির্বাচনে জয়লাভ করে খালেদা জিয়া তৃতীয়বারে মতো প্রধানমন্ত্রী হন এবং চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। তার সরকার জানুয়ারি ২০০৭-এ অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী নির্বাচন যাতে বিএনপির পছন্দের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় সে নীলনকশা প্রণয়নে ব্রতী হয়। ১৭ মে, ২০০৪ তারিখে সংসদে বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা 'পঁয়ষট্টি' বছর থেকে 'সাতষট্টি' বছরে নির্ধারণের বিধান রেখে 'সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪' পাস করা হয়। এতে বিচারপতি কেএম হাসান পরবর্তী প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। প্রসঙ্গত, তিনি এক সময়ে বিএনপির অন্যতম সম্পাদক ছিলেন এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে রাষ্ট্রপতি জিয়ার সময়ে ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিচারপতি এমএ আজিজ ২৩ মে, ২০০৫ তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে।
বিচারপতি এমএ আজিজের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে এবং বিচারপতি কেএম হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগের বিরুদ্ধাচরণ করে আওয়ামী লীগের গণআন্দোলন ক্রমান্বয়ে সহিংস গণঅসন্তোষে পরিণত হয়। এ প্রেক্ষাপটে বিচারপতি কেএম হাসান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণে অনীহা ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন এবং ২২ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে উদ্যোগী হন। বিএনপির প্রতি তার পক্ষপাতিত্ব রাজনৈতিক সংকটকে ঘনীভূত করে। অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানসহ চারজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। সারাদেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সশস্ত্র বাহিনী রাজনৈতিক সংকট নিরসনে উদ্যোগী হয় এবং রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হন। তিনি নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করে। ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৬৩টি আসনে জয়লাভ করে (এককভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আসন সংখ্যা যথাক্রমে ২৩০ ও ৩০)। শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন ও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
১৯৯১ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নম্ন হয়। সাংবিধানিকভাবে গঠিত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিষয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। সাংবিধানিক দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ ওঠে। তৃতীয় সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ২০০৭-এর জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সংকটময় অবস্থায় সেনা হস্তক্ষেপের কারণে বাতিল করা হয়।
অসাংবিধানিক ও সেনা সমর্থিত ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এই সরকারের অধীনে রাজনীতিবিদদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তবে ২০০৮-এর নির্বাচন ছিল পক্ষপাতহীন। স্পষ্টতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা পরিবর্তনের গ্যারান্টি প্রদান করে না। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে 'নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার' ব্যবস্থা সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ও বাতিলযোগ্য ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতে 'সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন-২০১১'-এর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। এমতাবস্থায় বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে না এলে আলোচনার সূচনা এবং আলোচনার টেবিলে বর্তমান অরাজক পরিস্থিতির সমাধানের পথ বের হয়ে আসবে_ এমন ভাবার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বাঁচতে চায়। চায় সুশাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টন। রাজনীতিবিদরা জনকল্যাণে কাজ করার সুযোগ পেতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চান। আলোচনার মাধ্যমেই সে ব্যবস্থা অর্জন সম্ভব। জামায়াত একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। বিএনপি জোটের অংশ হিসেবে আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণ সুবিবেচিত হবে। আলোচনা সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি খুঁজে বের করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই সঙ্গত হবে। আলোচনায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দুর্নীতি অথবা ফৌজদারি অপরাধের মামলা প্রত্যাহারের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্তি যুক্তিযুক্ত হবে না।
দেশের মানুষ আশা করছে, অচিরেই সরকার ও বিএনপি জোটের মধ্যে আলোচনার সূচনা হবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে। স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সব প্রতিবন্ধকতার অবসান হবে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রাজনীতিবিদরা যদি মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে অস্বীকৃতি জানায়, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
সভাপতি, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব); সাবেক চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন বিইআরসি এবং সচিব, বাংলাদেশ সরকার

No comments

Powered by Blogger.