‘কেনে তারা মারে’ -সিলেটে ককটেলে আহত শিশু আফ্রিদার প্রশ্ন by উজ্জ্বল মেহেদী

মাত্রই কান্না থেমেছে তার। চোখেমুখে আতঙ্ক। ডান হাতের কবজির পাশে ক্ষতের ওপর ব্যান্ডেজ। ককটেল হামলায় আহত হয়েছে এই শিশু। ব্যান্ডেজ শেষে বসেছিল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। পাশে থাকা এক স্বজনকে প্রশ্ন করল, ‘কেনে তারা আমরারে মারল?...কেনে তারা মারে?’
প্রশ্ন করা এই শিশু আফ্রিদা মাহবুব নাফিজা (৮)। পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। বাবার সঙ্গে গতকাল সোমবার দুপুরে আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার পথে সিলেট নগরের মিরের ময়দান এলাকায় তাদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ককটেল হামলা চালানো হয়। এতে আহত হয় আফ্রিদা, তার বাবা মাহবুবুর রহমানের কোলে থাকা ১৮ মাস বয়সী ভাই হাফিজুর রহমান ও অটোরিকশাচালক সৈয়দ আহমদ (৪৫)। আহত দুই শিশুকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে এবং অটোরিকশাচালককে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
আফ্রিদা বার কয়েক ওই প্রশ্ন করায় তাকে প্রবোধ দিতে এক স্বজন বললেন, ‘ওরা শয়তান, দুষ্টু লোক। শয়তানি করছে!’ শিশুটি ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার সময় প্রকাশ পাচ্ছিল ভয় পাওয়ার বিষয়টি।
হাসপাতালের উপপরিচালক মো. আবদুছ ছালাম জানান, দুই শিশুর মধ্যে মেয়েটির ডান কবজির কাছে ক্ষত হয়েছে। ছেলেটির মাথায় জখম রয়েছে। অটোরিকশাচালকের গলায় স্প্লিন্টার ঢুকে যাওয়ায় তাঁকে এক দফা অস্ত্রোপচার করে সার্জারি বিভাগে রাখা হয়েছে। তিনজনই চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আফসার উদ্দিন জানান, ককটেলের আঘাত গুরুতর না হলেও দুই শিশুর মনের ভয়কে গুরুতর বিবেচনা করা হচ্ছে। কাছ থেকে ঘটনা দেখা, শারীরিক কিছু আঘাত ও ভয় পাওয়া থেকে যাতে অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতা না দেখা দেয়, এ জন্য দুজনকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এ শিশুদের বাবা ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে। দুপুর ১২টার দিকে দুই সন্তানকে নিয়ে অটোরিকশায় সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহরে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, বেলা পৌনে একটার দিকে তাঁরা মিরের ময়দান এলাকায় পুলিশ লাইনের কাছে পৌঁছালে তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী অটোরিকশা লক্ষ্য করে চারটি ককটেল ছোড়ে। এগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর ছোড়া একটি ককটেল অটোরিকশার সামনের কাচে লেগে বিস্ফোরিত হয়।
মাহবুব বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর চালক একদিকে পড়ে যান, কোলের শিশু নিয়ে আমি চিৎকার করি। পাশেই ছিল পুলিশ লাইন, পাবলিক এসে আমাকে উদ্ধার করলেও একজন পুলিশও এল না।’
হরতাল আহ্বানকারীরা এ কাজ করছে জানিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে এবং আরেকটি দল হাসপাতালে যায়। আহত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বর্ণনা শুনে হামলাকারীদের ধরার চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.