বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সমৃদ্ধির যুগ by সৈয়দ আশরাফ আলী

ভাষার বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে : খালাকাল ইনসা-না আল্লামাহুল বায়া-ন। (৫৫: ৩-৪) অর্থাৎ, ‘(আল্লাহ) মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন।’ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য বিশেষ কোনো একটি ভাষা সৃষ্টি করেননি। সব ভাষাই আল্লাহর ভাষা। রব্বুল আলামিনই তাঁর অতুলনীয় কুদরতের মাধ্যমে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষার মধ্যে পার্থক্য রেখেছেন। কুরআন সাক্ষ্য দিচ্ছে : ‘তাঁর আরো কুদরত হচ্ছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্যতা।’ (সূরা রূম, ৩০:২২) এতদসত্ত্বেও আমরা অনেকেই ভুল করে মনে করি যে, একমাত্র আরবিই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ভাষা। যেহেতু কুরআন মাজিদ নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়, অনেকের ধারণা যে আরবিই হচ্ছে একমাত্র পবিত্র ভাষাÑ খোদার কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র ভাষা। এটি সম্পূর্ণরূপে ভুল ধারণা। সব ভাষাই আল্লাহ তায়ালার ভাষা। সব ভাষাই আল্লাহর দান। Webster-এর ভাষায় ÔLanguage was the immediate gift of God.Õ মনে রাখতে হবে যে, পবিত্র ইঞ্জিল, তাওরাত বা যাবুর Ñ কোনোটিই আরবি ভাষায় নাজিল হয়নি। পবিত্র কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল করা হয় কারণ মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা: ছিলেন আরব। তাঁর মাতৃভাষা ছিল আরবি। কুরআনুল কারিমই সাক্ষ্য প্রদান করছে : ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার জাতির লোকদের মাতৃভাষাতেই (আমার বাণী) প্রেরণ করেছি। (সূরা ইব্রাহিম, ১৪ : ৪) মাতৃভাষার ওপর অতিশয় গুরুত্বারোপ করে মহান আল্লাহ, তাঁর অসীম করুণায়, হজরত দাউদের (আ:) কাছে ‘যাবুর’ কিতাব তার মাতৃভাষা ইনানিতে, হজরত মূসা (আ:)-এর কাছে ‘তাওরাত’ তার মাতৃভাষা ইবরানিতে, হজরত ঈসা (আ:)-এর কাছে ‘ইঞ্জিল’ তার মাতৃভাষা সুরিয়ানি (হিব্রু)-তে এবং হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর কাছে ‘আল-কুরআন’ তাঁর মাতৃভাষা আরবিতে নাজিল করেছেন। এসব আসমানি গ্রন্থ যদি মাতৃভাষায় নাজিল করা না হতো, তাহলে এগুলোর নাজিলের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হতো। এটি আমাদের মনগড়া দাবি নয়। মহান আল্লাহ কুরআন মাজিদে এরশাদ করছেন : ‘আমি তো কুরআন আরবিতে নাজিল করেছি এ জন্য যে, তোমরা তা বুঝবে।’ (সূরা ইউসুফ, ১২ : ২) বলাবাহুল্য, মাতৃভাষার মাধ্যমে কোনো বাণী বা তথ্য যেভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যায়, অন্য ভাষার মাধ্যমে তা আদৌ সম্ভব নয়। কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায় : ‘নানান দেশের নানান ভাষা, বিনে স্বদেশীভাষা মিটে কি আশা?’ মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ, ভালোবাসা ও প্রেম ইসলামের দৃষ্টিকোণে অপরিহার্য বিবেচিত হয়। মাতৃভাষাকে ভালোবাসা রাসূল সা:-এর সুন্নত। কারণ মহানবী সা: তাঁর মাতৃভাষা আরবিকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসতেন। নবী করিম সা: দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন : ‘আনা উহিব্বুল আরব লি আন্নি আরাবিয়্যুন।’ ‘আমি আরবি ভালোবাসি কারণ আমি আরবিভাষী’। অর্থাৎ, আমার মাতৃভাষা আরবি। যেহেতু কুরআন মাজিদ মাতৃভাষাকে সম্মান প্রদর্শন করছে এবং আমাদের একমাত্র আদর্শÑ সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মাদ সা: স্বয়ং যখন মাতৃভাষাকে অন্তর থেকে ভালোবাসতেন, আমরা বাংলাভাষী মুসলমানেরা নিশ্চিন্তমনে দাবি করতে পারি যে, আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলা ভাষাও আল্লাহর ভাষা। রব্বুল আলামিনের মহান দান।
এ প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ করা আবশ্যক, আরবি ভাষাকে মহানবী সা: প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলেও, অন্য কোনো ভাষাকে তিনি ঘৃণা, অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য করতেন না। আপনারা শুনলে নিশ্চয় আশ্চর্য হবেন যে, ঐতিহাসিক হিজরতের পর নবী করিম সা:-এর প্রথম সেক্রেটারি বা সচিব ছিলেন একজন ইহুদি। প্রায় তিন বছর, বনু নাদির সম্প্রদায়ের বহিষ্কার পর্যন্ত, এই প্রাজ্ঞ ইহুদিই ইসলামের নবী সা:-এর সচিবের গুরুদায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ হুসেইন হাইকেল তার বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য লাইফ অব মুহাম্মদ’ শিরোনামীয় গ্রন্থে উল্লেখ করছেন ÔUntil the exit of Banu al Nadir from Medinah (in 625 A.H.), the Prophet’s secretary was a Jew. He had chosen him for his capacity to write letters in Hebrew and Syriac, as well as Arabic.” (Muhammad Husayn Haykal, The Life of Muhammad. Philadelphia, 1976, p. 281) আরবি ও সংস্কৃত ভাষার মতো বাংলা ভাষা অতি পুরনো ভাষা না হলেও এটি অনস্বীকার্য, বাংলা ভাষা একটি অতীব সমৃদ্ধ ভাষা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় : “It is a language which belongs to the procession of life, making constant adjustments with surprises, exploring unknown shrines of reality along its path of pilgrimage to a future which is as different from the past as the tree from the seed. It is a language capable of expressing the finest modulations of thought and feeling, a literature worthy to be taught in any university in the world.” (Krishna Kripalani, Tagore, London, 1962, p.3) উইলিয়াম কেরির ভাষায় : “This language (Bengali), current through an extent of country nearly equal to Great Britain, when properly cultivated, will be inferior to none in elegance and perspicuity.” (William Carey, as quoted in History of Bengali Language and Literature by Dr. Dinesh Chandra Sen, Calcutta, 1911) এফ এইচ স্ক্রাইনের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য অধিকতর চমকপ্রদ :“Bengali unites the mellifluousness of Italian with the power possessed by German of rendering complex ideas.” (F.H.Skrine, ibid.)
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো যে, মানব ইতিহাসে এটিই একমাত্র ভাষা যার অধিকারের জন্য মানুষ হাসিমুখে শাহাদত বরণ করেছে। পৃথিবীতে এটি একমাত্র ভাষা রাষ্ট্রভাষারূপে যার স্বীকৃতির জন্য দুই-দুইটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে মানুষ সংগ্রাম করেছে, জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। ভাষার জন্য ইতিহাস রচনা করেছেন বরকত, সালাম, জব্বার, রফিক প্রমুখ অকুতোভয় ভাষাসৈনিক যখন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তারা শাহাদতবরণ করেছেন ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে। আর তার ৯ বছর পর একই বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য ১৯৬১ সালের ১৯ মে তারিখে ভারতে আসামের কাছাড়ে ১১ জন ভাষাসৈনিক বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুবরণ করে। তারা হলোÑ সুকোমল সরকার, সুকোমল পুরকায়স্থ, কুমুদ দাস, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, তরণী দেবনাথ, হীতেশ বিশ্বাস, শচীন পাল, কমলা ভট্টাচার্য, কানাই নিয়োগী, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, বীরেন্দ্র সূত্রধর। একই মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য দুই-দুইটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে ভাষাসৈনিকদের এহেন আত্মাহূতি ইতিহাসে সত্যিই নজিরবিহীন। এটি আমাদের গর্ব। আমাদের অহঙ্কার। পৃথিবীতে অন্য কোনো ভাষা এ ধরনের গর্ব করতে পারে না। স্বভাবতই, পৃথিবীতে হাজার হাজার ছোট-বড় ভাষা থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষার জন্য বরকত, সালাম, জব্বার, রফিকের শাহাদতের দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিকেই জাতিসঙ্ঘ পরিচিহ্নিত করেছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বা International Mother Language Day হিসেবে। বাংলা ভাষার ইতিহাস ঘটনাবহুল ও সুবিস্তৃত। ১৯৩১ সালে বগুড়ার মহাস্থানে বড়– ফকির আবিষ্কৃত বিখ্যাত ‘মহাস্থান ফলক’ (The Mahasthan Plaque) অনেকে আদি বাংলার ‘প্রাচীনতম’ নিদর্শন বলে মনে করেন। তবে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক নেপালে আবিষ্কৃত ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শনরূপে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও বিশেষজ্ঞ স্বীকৃতি প্রদান করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও কিঞ্চিৎ মতভেদ রয়েছে। ড. এস এম লুৎফর রহমানসহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নমুনা চর্যাপদ নয়Ñ রামাই পণ্ডিত রচিত ‘কলিমা জাল্লাল’ হচ্ছে ‘বাংলা ভাষার’ আদিতম নমুনা। তবে বাংলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ অক্ষরের মাধ্যমে লিখিত আজ পর্যন্ত যতগুলো প্রাচীন পুঁথি-পুস্তক আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে প্রাচীনতম হলো বড়– চণ্ডীদাস বা দ্বিজ চণ্ডীদাস রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’, যার রচনাকাল খ্রিষ্টীয় ১৪ শতকের শেষার্ধে অর্থাৎ বাংলাদেশে মুসলমান শাসকদের আমলে।
অনেকে হয়তো বিশ্বাসও করবেন না, বাংলা ভাষা বলতে আমরা আজকে যা বুঝি তার জন্ম দিয়েছে মুসলমানেরাই। অবিভক্ত বাংলা ভূখণ্ডে মুসলমানদের আগমনের আগেও এ দেশে এক ধরনের বাংলা ভাষা ছিল। কিন্তু সে অসম্পূর্ণ, অসঙ্গতিপূর্ণ ভাষা ছিল শুধু কথ্যভাষা। সেই শিশুভাষাকে শৈশব ও কৈশোর পার করে যৌবনে উত্তীর্ণ করার কৃতিত্ব মুসলমানেরই। মুসমানেরাই অনাদৃত কথ্যবাংলা ভাষাকে তার শৈশব থেকে সযতনে লালন-পালন করে লিখিত পূর্ণাঙ্গ ভাষায় উন্নীত করে। এটিও কল্পনাপ্রসূত, মনগড়া কোনো দাবি নয়। এ সত্যের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন দীনেশ চন্দ্র সেন, প্রমথ চৌধুরী, সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বিখ্যাত অমুসলিম মনীষীবৃন্দ। প্রাক-আর্য যুগে এই বাংলা ভূখণ্ড ুদ্র ুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। বঙ্গ, পুণ্ড্র, রাঢ় প্রভৃতি এসব রাজ্যে দ্রাবিড়, মোঙ্গলিয়ান, ও কোলমুণ্ডা উৎসজাত লোকজন বসবাস করত। তারা দ্রাবিড়, ভোটণ্ড চীন অথবা মুণ্ডা ভাষায় কথা বলত। সে সময় এই বাংলাদেশে বা অবিভক্ত বাংলায় কোনো লিখিত ভাষা ছিল না। মৌর্য যুগের পূর্বে আর্য সভ্যতা বা সংস্কৃত ভাষার সাথে বাংলার পরিচয় হয়নি। গুপ্ত যুগেই আর্য সভ্যতার সাথে এই ভূখণ্ডের যোগাযোগ হয়। আর্য সভ্যতার সাথে পরিচয় নিবিড় হওয়ার আগেই পাল রাজারা অবিভক্ত বাংলাকে বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম পীঠস্থানে পরিণত করেন। বহিরাগত আর্যরা বাংলা ভূখণ্ডে আর্য সভ্যতার অনুপ্রবেশ ঘটাতে ব্যর্থ হলে একটি নেতিবাচক লক্ষ্যে সফলকাম হয়। আর সেই নেতিবাচক লক্ষ্যটি হলো বাংলা ভূখণ্ডে বসবাসকারী তদানীন্তন জাতির সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করা। সংস্কৃতির প্রথম ও প্রধান উপকরণ হচ্ছে ভাষা ও সাহিত্য। বহিরাগত আর্যরা এই ভূখণ্ডে প্রচলিত তদানীন্তন ভাষা ধ্বংস করতে প্রবলভাবে সচেষ্ট হলো। ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছেন, তখনকার অধিবাসীরা তাদের মুখের ভাষা বলতে গেলে ভুলেই যায়। ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যয়ের ভাষায় : ‘আর্য পদানত বাংলাদেশ ভূখণ্ডের তৎকালীন অধিবাসীরা সেদিনকার মুখের ভাষা ভুলতে বাধ্য হয় সংস্কৃতজ্ঞ ও সংস্কৃতভাষী আর্যদের অত্যাচারে।’ সংস্কৃত ভাষা কিন্তু এখনকার মতো সেকালেও ছিল লিখিত ভাষা। আর্যরা কথা বলত প্রাকৃত ভাষায় কিন্তু সাহিত্য চর্চা করত এবং ধর্ম গ্রন্থাদি লিখত সংস্কৃততে। ফলে জোর করে সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষা চাপিয়ে দেয়া হলে, নিরুপায় হয়ে এ দেশের জনসাধারণ প্রাকৃতভাষার তৎসম-প্রধান এক শাখা ‘গৌড়ী প্রাকৃতে’ কথা বলতে শুরু করল। অনার্য দ্রাবিড়, মুণ্ডা ও কোল প্রভৃতি জাতির মুখে এই গৌড়ী প্রাকৃত গ্রহণ করল এক বিকৃত রূপ। জন্ম দিলো অপভ্রংশের। বাংলার আদিম মানুষের মুখের ভাষার কিছু কিছু শব্দসম্ভার অনিবার্য কারণেই আশ্রয় পেল এই অপভ্রংশে। ধীরে ধীরে এই অপভ্রংশই জন্ম দিলো প্রাচীন বাংলা ভাষার। এই প্রাচীন বাংলা ভাষায় যারা কথা বলত তারা হতো ঘৃণা ও তাচ্ছিল্যের পাত্র। বাংলাভাষী এই আদিম অধিবাসীদের বেশির ভাগই আর্য সমাজে শুদ্র বা নীচ সম্প্রদায়রূপে পরিচিত হতো। সংস্কৃত ভাষায় লেখাপড়াও তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। আর্য পণ্ডিতদের মতে, বাংলা ভূখণ্ডের ভাষা দেবকুলে জন্ম নেয়নি, জন্ম তার লোককুলে। তাই তাকে বলা হয়েছে ‘অসুর ভাষা।’ সংস্কৃতগর্বীদের ভাষায়: ‘অসুরানাং ভাবৎ বাচা গৌড় পণ্ড্রোয়া ভবা সদা।’ এমনকি সংস্কৃতনির্ভর আর্যরা দাবি করত যে, ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’-এর একটি দোহা অনুক্রমে, মানব ভাষায়, অর্থাৎ বাংলা ভাষায়, ধর্মীয় গ্রন্থাদি পড়লে বা শুনলে তাদের ‘রৌরব’ নামের বিশেষ নরকে যেতে হবে। ড: দীনেশ চন্দ্র সেনের ভাষায় : Sanskrit scholars, who brought about a revival of Hinduism in Bengal, were imbued with a taste for the hard and fast rules of classical grammar, and had an unmixed abhorrence for the laxities of the Prakrita adopted by the Buddhists. Bengali seemed to have no prospects with such scholars : nay they zealously opposed the effects of those who offered to help the Vernacular of the country to assert the claim as a written language. The following well-known Sanskrit couplet bears testimony to their ill-will: অষ্টাদশ পুরাণানি রামস্য চরিতানি চ। ভাষায়াং মানব: শ্রুত্বা রৌরবং নরকং ব্রজেৎ॥’ “If a person hears the stories of the eighteen Puranas or of the Ramayana recited in Bengali, he will be thrown into the hell called the Rourava. There is a corresponding Bengali couplet which is also well-known : ‘কৃত্তিবেসে, কাশীদেসে, আর বামুনঘেঁষে এই তিন সর্ব্বনেশে।’ Krittivasa (Bengali translator of the Ramayana), Kashidas (Bengali translator of the Mahabharata) and those who aspire to mix with the Brahmins too closely, are the greatest of evil-doers.” (Dinesh Chandra Sen, ibid, p. 7)
এ কথা অনস্বীকার্য, পাল যুগ প্রাক-মুসলিম বাংলার স্বর্ণযুগ। কিন্তু তবুও, বাংলা ভাষার প্রতি তদানীন্তন সংস্কৃতনির্ভর হিন্দুসমাজের বিতৃষ্ণায় বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা সম্ভব হয়নি। সেন রাজাদের যুগেও সংস্কৃততেই সাহিত্যচর্চা হয়েছে। অর্থাৎ বৌদ্ধ ও হিন্দুÑ উভয় শাসনামলেইÑ বাংলা ভাষা ম্লেচ্ছর ভাষা, অস্পৃশ্যের ভাষা, অপবিত্র ভাষা বলে পরিগণিত হতো। ১২০১ (মতান্তরে ১২০৩) খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ারউদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গবিজয় বাংলা ভাষার জন্য আশীর্বাদরূপে এলো। রামাই পণ্ডিতের ‘শূন্য-পুরান’ বাংলা ভাষার অন্যতম আদি গ্রন্থ। সেই গ্রন্থে মুসলিম বিজয় ঈশ্বরের আশীর্বাদরূপে নন্দিত হলো। অথচ রামাই পণ্ডিত ছিলেন আদিতম উপাস্য দেবতা ধর্মঠাকুরের সেবায়েত। দীনেশ চন্দ্র সেনও সাক্ষ্য প্রদান করছেন : ‘মুসলমান বিজয় বাঙ্গালা ভাষায় সেই শুভ দিনের আনয়ন করিল। গৌড়দেশ মুসলমানদের অধিকৃত হইল।’ (দীনেশ চন্দ্র সেন’ ‘প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান’, কলকাতা) দীনেশ চন্দ্র সেন এ কথাও অকপটে স্বীকার করছেন : ÔThe elevation of Bengali to a literary status was brought about by several influences of which the Mahammadan conquest was undoubtedly one of the foremost. If the Hindu Kings had continued to enjoy independence, Bengali would scarcely have got an opportunity to find its way to the courts of Kings.” (Dinesh Chandra Sen, ibid, p. 10) হিন্দু ও বৌদ্ধদের উচ্চসমাজে এত দিন অবহেলিত ও অপাঙ্ক্তেয় বাংলা ভাষাকে মুসলমানেরা যেভাবে সযতনে লালন-পালন করতে থাকে তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে দীনেশ চন্দ্র সেন আরো বলছেন : ‘মুসলমানরা এইভাবে বাঙ্গালা ভাষাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়া আমাদের সাহিত্যে এক নূতন যুগ আনয়ন করিলেন। মুসলমান আগমনের পূর্বে বঙ্গভাষা কোনো কৃষক রমণীর মতো দীনহীন বেশে পল্লী কুটিরে বাস করিতেছিল।’ (দীনেশ চন্দ্র সেন, ‘প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের আবদান’, কলকাতা) অবহেলিত বাংলা ভাষার প্রতি সাম্য ও মৈত্রীর বাণী ইসলামে উদ্বুদ্ধ মুসলমান রাজন্যবর্গের অকৃপণ পৃষ্ঠপোষকতা ও আন্তরিক সমাদর তদানীন্তন হিন্দু রাজাদেরও অনুপ্রাণিত করে। ম্লেচ্ছর ভাষা বাংলা মুসলমান সুলতানদের রাজ দরবারের মতো হিন্দু রাজাদের রাজসভাতেও প্রথমবারের মতো আশ্রয় পেল। দীনেশ চন্দ্র সেনের ভাষায় : “We are led to believe that when the powerful Moslem Sovereigns of Bengal granted the recognition to the Vernacular language in their courts, Hindu Rajas naturally followed suit. The Brahmins could not resist the influence of this high patronage; they were therefore compelled to favour the language they had hated so much, and latterly they themselves came forward to write poems and compile works of translation in Bengali.” (Dinesh Chandra Sen, ibid, p. 13) শুধু দীনেশ চন্দ্র সেনই নন, আরো বহু অমুসলিম মনীষী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বীকৃতি প্রদান করেছেন যে, মুসলমানরা বাংলা ভাষাকে সুচারুরূপে লালন-পালন করে বাংলা সাহিত্যের জন্ম দিয়েছে। প্রমথ চৌধুরী নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করেছেন : “Bengali literature was born in Mahommaden Age.” অর্থাৎ, ‘বাংলা সাহিত্যের জন্ম মুসলিম যুগে।’ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও নির্দ্বিধায় উল্লেখ করছেন : ‘আমাদের বাংলা বিভক্তি ‘রা’ ও ‘দের’ মুসলমানদের কাছ হইতে লওয়া। তা ছাড়া, আমরা কী করে ভুলে যাই চতুর্দশ শতাব্দীর মুসলমান সুলতান এবং রাজপুরুষদের কথা, যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্যে এক গৌরবময় অধ্যায় রচিত হয়?’
শুধু মুসলমান রাজা বাদশাহরা নন, সেই সাথে সাধারণ মুসলমানরাও অবহেলিত বাংলা ভাষার জন্য অপরিসীম অবদান রাখেন। এ বিষয়ে দীনেশ চন্দ্র সেনের মহান উক্তি হলো : ‘বাংলার নি¤œশ্রেণীর মুসলমানেরাও যুগে যুগে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছে।’ এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, বরবক শাহ, ইউসুফ শাহ, নাসির শাহ, সিকান্দর শাহ, হুসেইন শাহ, পরাগল খান, মগন ঠাকুর প্রমুখ মুসলমান রাজা-বাদশাহ, আমির-ওমরাহের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য-সহযোগিতা না থাকলে নবজাত বাংলা ভাষা সূতিকাগৃহেই মৃত্যুবরণ করত। এ প্রসঙ্গে মুসলমান সুলতান-বাদশাহদের পৃষ্ঠপোষকতার দু-একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মুসলিম নরপতিদের সাহায্য না পেলে কবি কঙ্কনের ‘বিদ্যাসুন্দর’, কাশীরামদাসের ‘মহাভারত’, মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ বা কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’ কোনোটিই আমরা পেতাম না। মহাভারতের প্রথম বঙ্গানুবাদ প্রণীত হয় গৌড়ের সুলতান নাসির শাহের নির্দেশে। দীনেশ চন্দ্র সেন সাক্ষ্য দিচ্ছেন, “The first Bengali translation of the Mahabharata of which we hear, was undertaken at the order of Nasira Shah, the Emperor of Gauda who ruled for 40 years till 1325 A.D.” (Dinesh Chandra Sen, ibid, p.11) চট্টগ্রামের গভর্নর পরাগল খানের নির্দেশ ও অর্থানুকূল্যে মহাভারতের আরো একটি বঙ্গানুবাদ প্রণীত হয়। সুলতান নাসির শাহ ছিলেন বাংলা ভাষার অপর এক অসাধারণ পৃষ্ঠপোষক। বাংলাভাষার প্রতি তার অকৃপণ পৃষ্ঠপোষকতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবি বিদ্যাপতি একটি গান সুলতান নাসির শাহের নামে উৎসর্গ করেন : সো নসিরা সাহ জানে।/ যাক হানিল মদন বাণে Ñ/ চিরঞ্জীব রঁহু পঞ্চ গৌড়েশ্বর,/ কবি বিদ্যাপতি ভাণে।/ কৃত্তিবাস ‘রামায়ণ’-এর প্রথম বঙ্গানুবাদও রচনা করেন গৌড়ের সুলতান জালাল আল-দ্বীন মোহাম্মদ শাহের নির্দেশে। ‘রামায়ণ’-এর বঙ্গানুবাদে পরিতুষ্ট হয়ে গৌড়ের সুলতান পুষ্পমাল্য দ্বারা কৃত্তিবাসকে সম্মানিত করেন। ‘শূন্য পুরান’-এর পরেই রচিত বাংলা ভাষার অন্যতম আদি গ্রন্থ ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ সম্ভবত খ্রিষ্টীয় চৌদ্দ শতকের শেষার্ধ্বে লিখিত হয়। ‘শ্রীকষ্ণ কীর্তন’-এর রচয়িতা কবি বড়– চণ্ডীদাসের সাধনসংগিণী রামীর কবিতা থেকে জানা যায় যে, বড়– চণ্ডীদাস গৌড়ের সুলতান কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে রাজসভায় গান গেয়েছিলন।/ মুর্শিদাবাদের কুলীন গ্রামের অধিবাসী মালাধর বসু সুলতান ইউসুফের পৃষ্ঠপোষকতায় সুদীর্ঘ সাত বছরে ভগবদ্গীতার দশম ও একাদশ অধ্যায়ের ভিত্তিতে ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ রচনা করেন। গুণমুগ্ধ সুলতান ইউসুফ শাহ মালাধর বসুকে সে যুগের সেরা সম্মান ‘গুণরাজ খান’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কবি নিজেই বলেছেন : ‘গুণ নাহি অধম মুঞ্চি নাহি কোন জ্ঞান/ গৌড়েশ্বর দিলা নাম গুণরাজ খান।’/ এই মুসলিম শাসনামলেই রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত-এর বঙ্গানুবাদ ঘিরে বিপুল সাহিত্য গড়ে ওঠে। এই কালপর্বের বাংলা ভাষার সাহিত্যিক বিকাশে সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহের অসাধারণ অবদান বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে।
রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯) বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিল্লাই, যশোরাজ খান, কবীন্দ্র প্রমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাদের অসাধারণ রচনাগুলো হলো : বিজয়গুপ্তের ‘পদ্মপুরাণ’, বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল’, যশোরাজ খানের ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’, কবীন্দ্র পরমেশ্বরের ‘মহাভারত’ (স্ত্রীপর্ব পর্যন্ত)। শুধু বাংলা ভাষায় নয়, সুলতান হুসেন শাহের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হরিচরিত’, ‘কৃষ্ণলীলা’, ‘উদ্ভব-সন্দেশ’, ‘গীতাবলি’, ‘নীলমণি’ প্রভৃতি অসাধারণ রচনাগুলো এই ভূখণ্ডের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তোলে। হুসেন শাহের ছেলে সুলতান নাসিরউদ্দীন নূসরত শাহের শাসনামলেও (১৫১৯-৩২) বাংলা ভাষা একই ধরনের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। তার অধীনস্থ চট্টগ্রামের গভর্নর পরাগল খানের পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীকর নন্দী ‘মহাভারত’-এর ‘অশ্বমেধ পর্ব’ বাংলায় অনুবাদ করেন। দ্বিজ শ্রীধর ‘বিদ্যাসুন্দর’ মহাকাব্য রচনা করেন নূসরত শাহের ছেলে যুবরাজ আলাউদ্দীন শাহের পৃষ্ঠপোষকতায়।/ প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা আবশ্যক, মালাধর বসুর যুগেও, অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় পনের শতকে শেষের দিকে, কোনো শুদ্রের সংস্কৃত ভাষায় ‘পুরাণ’ পড়ার অধিকার ছিল না। মালাধর বসু নিজেই জানাচ্ছেন : ‘পুরাণ পড়িতে নাই শুদ্রের অধিকার/ পাঁচালী পড়িয়া তর এ ভব সংসার।’/ কিন্তু একই সময়ে (এবং এর আগেও) মুসলমান কবিরা ধর্মান্ধতা ও তদানীন্তন মোল্লাতন্ত্রের চোখ রাঙানি অগ্রাহ্য করে নির্দ্বিধায় মাতৃভাষা বাংলাতে ধর্মকথা লিখে গেছেন। বড়ু চণ্ডীদাসের সমসাময়িক শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘ইউসুফ জুলেখা’ তদানীন্তন বাংলাভাষী মুসলমান সমাজে রামায়ণ মহাভারতের স্থান অধিকার করে নেয়। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা নিবেদন করে সগীর জানান :/ ‘শুনিয়াছি মহাজনে কহিতে কখন।/ রতন ভাণ্ডার মধ্যে বচন সে ধন।/ বচন রতন মণি যতনে পুরিয়া।/ প্রেমরসে ধর্মবাণী কহিমু ভরিয়া॥/ নিজ ভাষায় বাংলার প্রতি প্রীতি ও শ্রদ্ধা ফুটে উঠেছে ‘নবী-ভস্ম’, ‘রসুল-বিজয়’, ‘ইবলিস-নামা’, ‘শব-ই-মিরাজ’ প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা ষষ্ঠদশ শতাব্দীর কবি সৈয়দ সুলতানের (১৫৫০-১৬৪৮) কবিতায় :/ ‘কিন্তু যারে যেই ভাষে প্রভু করিল সৃজন/ সেই ভাষা হয় তার অমূল্য রতন।’/ এই একই বাংলা ভাষার প্রীতির পরিচয় পাওয়া যায় ‘নূরনামা’ রচয়িতা শেখ পীরের (১৫৫০-১৬১৫) পুত্র শেখ মুত্তালিবের অসাধারণ রচনা ‘কিফায়েৎ আল-মুসাল্লিন’ এবং আবদুন নবীর ‘আমীর হামজা’-তে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলমান রাজা-বাদশাহদের ও বাংলাভাষী সাধারণ মুসলমানের ঐকান্তিক সমর্থন সত্ত্বেও কিছু ধর্মান্ধ মুসলমানের কূপমণ্ডূকতা ও অজ্ঞতার দরুন বাংলা ভাষা পুনরায় অবহেলিত হতে থাকে। অনাদৃত হতে থাকে। এ ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষার সমর্থনে সাহিত্যানুরাগী মুসলমানেরা আবার সোচ্চার হয়ে ওঠে। শুধু এ দেশের মুসলমানেরাই নয়, বহিরাগত মুসলমানেরাও বাংলা ভাষাকে মনে-প্রাণে ভালোবাসার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠল। হজরত নূর কুতুবে আলমের পিতা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পাঞ্জাব থেকে বাংলায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি শুধু বাংলার বাসিন্দাই হননি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার জন্য তিনি নিজের নামের সাথে ‘বাংগালী’ শব্দ যুক্ত করে শেখ আলাওল হক বাংগালী নামে পরিচিত হন। সপ্তদশ শতকে সন্দীপ নিবাসী বাঙালি কবি আব্দুল হাকিম বাংলা ভাষার প্রতি কটাক্ষ ও অপমান সহ্য করতে না পেরে বলিষ্ঠ ভাষায় প্রতিবাদ করেন : ‘যেসব বংগেও জন্মি হিংসে বংগবাণী।/ সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি॥/ দেশীভাষা বিদ্যা যার যানন জুয়ার।/ নিজ দেশত্যাগী কেন বিদেশে ন যায়॥’/ এমনকি উনবিংশ শতাব্দীতেও মুন্সী মেহেরুল্লাহ্কে বাংলায় বসবাসকারী বাংলা ভাষাবিদ্বেষীদের কঠোর ভাষায় সতর্ক করে দিতে হয় : ‘মাতৃভাষা বাংলায় লেখাপড়া এত ঘৃণ্য যে, তাহারা তা মুখে উচ্চারণ করাই অপমানজনক মনে করে। এই অদূরদর্শিতার পরিণাম যে কি সর্বনাশা তা ভাবিলে শরীর শিহরিয়া ওঠে। যে দেশে বায়ু, জল, অন্ন, ফল, মৎস্য, গোশত, দুগ্ধ, ঘৃত খাইয়া তাহাদের শরীর পরিপুষ্ট, সে দেশের ভাষার প্রতি অনাদর করিয়া তাহারা যে কি সর্বনাশের পথ উন্মুক্ত করিতেছে তা ভাবিলেও এক ভীষণ আতঙ্ক উপস্থিত হয়।’
লেখক : গবেষক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক

No comments

Powered by Blogger.