শতবর্ষীর কষ্টগাথা

কুঁড়েঘরের সামনে ফতেমা বেগম ও তাঁর মেয়ে
কাঁচা সড়কের পাশে কুঁড়েঘর। এই ঘরে থাকেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ ফতেমা বেগম। বয়স ১১০ থেকে ১১৫ বছর। সঙ্গী সবচেয়ে ছোট মেয়ে মাজেদা বেগম। তাঁর বয়সও ৭০ হবে বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা-কাকচিড়া সড়কের পশ্চিম জালিয়াঘাটা এলাকা থেকে কাঁচা সড়ক ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার এগোলেই পূর্ব জালিয়াঘাটা সেতু। এই সেতুর পাশেই সরকারি জায়গায় বৃদ্ধ মা-মেয়ের কুঁড়েঘর। সম্প্রতি পূর্ব জালিয়াঘাটায় গিয়ে দেখা যায়, শীত ঠেকাতে ফতেমা বেগমের ঘরের ভেতর ও বাইরে মোটা পাতার পাটি টানানো। এ সময় ফতেমা বেগম মেয়ের সহযোগিতায় বিছানা থেকে উঠে বসেন। দেখা যায়, মেঝেতেও পাটি বিছানো। সেই পাটির ওপর কাঁথা। ফতেমা বেগম জানালেন, ছয় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। এঁদের মধ্যে দুই ছেলে মারা গেছেন। অবশিষ্ট চারজন মেয়ে। ফতেমা বেগম একেক করে ছয় সন্তানের নাম বলেন।
মায়ের কথার সূত্র ধরে মাজেদা বেগম বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে আমার বড় ভাই আবদুর রশীদ ফরাজী মারা গেছেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৭০ বছর। আল্লাহর রহমতে মা এখনো আছেন। তবে এখন চোখে একটু কম দেখেন। কথা বলার শক্তিও কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মা এখন একটু ভালো খবার খেতে চান। অভাবের সংসারে তাঁর চাহিদা মেটাতে পারি না। মাকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি।’
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মাজেদা বেগমের বয়স ৬০ বছর। তিনি জানান, বছর তিনেক আগে ঘরের সামনে কাঁচা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে মা ব্যথা পান। তখন থেকেই মূলত তিনি শয্যাশায়ী।
মাজেদা বেগমের ছেলে আবদুল লতিফ হাওলাদার বলেন, ‘আমার এক মামাতো বোন অন্যের বাড়িতে কাজ করে নানির দুই বেলার খাবার জোগান দিচ্ছেন। আর মাকে দেখছি আমরা। এভাবে ওই দুজনের সংসার চলে।’
প্রতিবেশী আবদুল খালেক (৭৫) বলেন, যে ঘরে ওই দুই বৃদ্ধা থাকেন, সেটি নড়বড়ে। ঘরটা মেরামত করা না হলে সামনের বর্ষায় দুজনকে দিন-রাত বৃষ্টিতে ভিজতে হবে।
কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও প্রতিবেশী ফারুক হোসেন বলেন, খুবই কষ্টে আছেন ফতেমা বেগম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও ভরণপোষণের জন্য চিন্তায় থাকতে হয় তাঁকে। এ কষ্টে তাঁর সঙ্গী মেয়ে মাজেদা।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন জানান, ফতেমা বেগমের বয়স ১২০ বছরের কাছাকাছি। তাঁকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.