সিলেট বিভাগের ৪ কারাগার উপচে পড়ছে বন্দি by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ

পকেট গেট দিয়ে মাথা নুইয়ে কেবলই ঢুকছেন। বেরুচ্ছেন না এর অর্ধেকও। লাল দালানে তাই শুধু ভিড় বাড়ছে। জায়গা নেই তার পরও জায়গা দিতে হচ্ছে। সিলেট বিভাগের চার কারাগারেই এমন চিত্র। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কারাগারগুলো। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। সামলাতেই হচ্ছে অতিরিক্ত বন্দি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাড়তি বন্দিদের বেশির ভাই রাজনৈতিক মামলার আসামি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির পর থেকে মূলত বাড়তে থাকে এ বন্দির স্রোত। স্বাভাবিক সময়েও ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকে সিলেটের কারাগুলোয়। তবে সে সময় বন্দি প্রবেশ ও মুক্তির ক্ষেত্রে কিছুটা ভারসাম্য ছিল। তবে চলমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভেঙে পড়েছে পুরো ভারসাম্যই। এ সময়ে আদালতের কার্যক্রমে স্থবিরতা থাকায় বন্দি মুক্তি বলতে গেলে থেমেই গেছে। কিন্তু বিপরীতে বেড়ে গেছে গ্রেপ্তারের পরিমাণ। থানা পুলিশের নিয়মিত গ্রেপ্তার ও বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি যৌথ অভিযানও চলছে। চলছে ব্লক রেইড চিরুনি অভিযান। বন্দির আনাগোনায় তাই সিলেট বিভাগের সব ক’টি কারাগারেই ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ অবস্থা।
সিলেট বিভাগের চার কারাগার মিলিয়ে ২ হাজার ৪৬১ বন্দি ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। অথচ শুধু সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছে এর চেয়ে বেশি। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে শনিবার পর্যন্ত বন্দির সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৭৮ জন। যা এ কারাগারের ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। কারাসূত্রের তথ্যমতে, বর্তমান সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন বন্দি ঢুকছেন। বের হওয়ার হার খুবই নগণ্য। বন্দিদের বেশির ভাগেরই যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কারাগারে ঠাঁই পেতে হয়েছে ছোট্ট একটি পরিসংখ্যানেই এর প্রমাণ মিলে। সিলেট কারাগারে বন্দি হওয়াদের ৭৫ ভাগই বিচারাধীন মামলায় আটক আছেন। ২ হাজার ৭৭৮ বন্দির মধ্যে হাজতি নামে পরিচিত এমন বন্দির সংখ্যাই ২ হাজার ৫৩। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল আহমদ হতাশার সুরে মানবজমিনকে বললেন, কেমন আছি বুঝতেই তো পারছেন। হরতাল-অবরোধে আদালত না চলায় বন্দির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তবে গত দু’দিন ধরে আদালতের মাধ্যমে অনেকেই জামিন পাচ্ছেন।
মৌলভীবাজার জেলা কারাগারেও যেন উপচে পড়তে চাইছে বন্দির সংখ্যা। এ জেলার কারাগারে ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিনগুণ বন্দিকে ঠাঁই দিতে হচ্ছে এ কারাগারে। জেলা কারা সুপার আল মামুনকে তথ্য দেন, এ কারাগারের বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৩১৬ জন হলেও আছেন ৮৫৪ জন। আদালতের কাজ থমকে যাওয়ায় ধারণ ক্ষমতা আর বন্দির সংখ্যার তফাত বাড়ছে প্রতিদিনই। গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০ কারাগারে ঢুকছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে জামিন হচ্ছে না কারোরই।
কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা তিনগুণ বাড়ার পরও সুনামগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ বন্দিদের সামাল দিতে পারছেন না। এখনও ধারণক্ষমতার বেশি বন্দির ভার সইতে হচ্ছে এ কারাগারকে। পুরাতন কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ছিল ১৪৯। কারাগার স্থানান্তরের পর এখন নতুন কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৪৩৫। এরপরও বন্দি আছেন ধারণক্ষমতার সীমা পেরিয়ে। সুনামগঞ্জের জেল সুপার ফণীভূষণের দেয়া হিসেবে শনিবার পর্যন্ত এ কারাগারে বন্দির সংখ্যা ৬৬৬।
সিলেটের অন্যান্য কারাগারের তুলনায় বন্দি ধারণের দিক দিয়ে হবিগঞ্জ ‘ভালো’ অবস্থানেই আছে বলতে হবে। তারপরও এ কারাগারে বন্দির সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার দেড় গুণের কাছাকাছি। হবিগঞ্জ জেলা কারাগারের তথ্য অনুসারে কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৫০০। বর্তমানে বন্দি আছে ৭৪০ জন। প্রতিদিন বন্দি বাড়ছে এ কারাগারেও। গড়ে ১৫-২০ জন যুক্ত হচ্ছেন এ কারাগারের বন্দি তালিকায়। হবিগঞ্জের ডেপুটি জেলার নূর মোহাম্মদ সুহেল জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ কারাগার থেকেও বন্দি মুক্তির হার কমে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.