খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার যেতে বাধা দেয়া অবৈধ : ব্যারিস্টার রফিক-উল হক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে খাবার যেতে বাধা দেয়া অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন দেশের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে খাবার সরবরাহে বাধা প্রদান করায় সুপ্রিম কোর্ট বার এই প্রতীকী অনশনের আয়োজন করে। প্রায় তিন ঘণ্টা প্রতীকী অনশনে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট বারের শতাধিক সদস্য। বেলা ১টায় বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে পানি পান করিয়ে প্রতীকী অনশন ভঙ্গ করান ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ১৯৪৮ সালে জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক প্রণীত সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২৫ নম্বর ধারায় মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সেখানে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আর আমরা ২০১৫ সালে এসে একটা লোককে খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছি, সব ধরনের সুবিধা বন্ধ করে দিচ্ছি। এটা কিছুতেই উচিত হচ্ছে না। আমরা গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে গলা ফাটাই। যদি সত্যিই গণতন্ত্র বোঝাতে চাই, আমরা জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্র, সেই হিসেবে সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা মেনে চলা উচিত। সরকারের উচিত খাবার যেতে বাধা না দেয়া। এক্ষেত্রে সরকার যা করছে তা অনুচিত, অবৈধ। আমি মনে করি এটা সরকারের জন্যও খারাপ হয়ে থাকবে। আশা করি, নরমাল লাইফ লিড করতে দেবে। অ্যাবনরমাল লাইফ লিড করলে, ইট উইল গিভ অ্যাবনরমাল প্রোডাক্টস।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমরা আইনজীবীরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। মানুষের মৌলিক অধিকারে বিশ্বাস করি। তাই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই গণ-আন্দোলনে শরিক হতে চাই। আওয়ামী লীগ বলেছিল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। আমরা আশা করেছিলাম সরকার পরে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে যেটি দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তাই আজ আমরা আবার সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি, যে নির্বাচনে দেশবাসী তাদের ভোট দিতে পারবে। আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি দাবিতে অটুট। যে পর্যন্ত না দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, ততক্ষণ আন্দোলনে বদ্ধপরিকর।
আইনজীবীদের এই নেতা আরো বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সারা বাংলাদেশে গণবিস্ফোরণ ঘটেছে। তাই সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। তারা বেগম জিয়ার খাবার বন্ধ করে দিয়েছে। নিষিদ্ধ পিপার ক্যামিক্যাল ¯েপ্র করে তাকে অসুস্থ করা হয়েছিল। আজ আবার তার খাবার বন্ধ করা হয়েছে। আমরা গণতন্ত্র চাই, আমরা আইনের শাসন চাই, আমরা মানবাধিকার চাই। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বেগম জিয়ার খাবার বন্ধ করে দিয়ে তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত আইন লঙ্ঘন করেছেন। অবিলম্বে তার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশের সুযোগ দেয়া হোক। অন্যথায় পরিণতি ভয়াবহ হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, আমরা আইনজীবী। আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করি। আমাদের আইনজীবী সমিতির উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে যে- আমরা গণতন্ত্রের জন্য এবং দেশের ভালোর জন্য কাজ করব। এর অংশ হিসেবেই আমরা দেশে যে অন্যায় চলছে, তার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিকে সমর্থন করেছি। তিনি আরো বলেন, আজ বেগম খালেদা জিয়ার মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। বেগম জিয়ার কার্যালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তার সাথে কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না। তার সাথে কেউ সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে আটক করা হচ্ছে।
অনশন কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেনÑ সিনিয়র অ্যাডভোকেট খসরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ, ড. আরিফা জেসমিন নাহিন, অ্যাডভোকেট রফিকুল হক তালুকদার, অ্যাডভোকেট নাসরিন আক্তার, অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা, অ্যাডভোকেট এ কে খান উজ্জ্বল প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.