আমার সন্তানের অপরাধ কি? by আল আমিন

রাকিব মিয়া। বারো বছরের কিশোর। হতদরিদ্র মায়ের ছোট ছেলে। আগুনে দগ্ধ হয়েছে গলা থেকে পা পর্যন্ত। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে রাকিব। যন্ত্রণায় বেড থেকে মাঝে মধ্যে উঠে পড়ছে। তার মা রাশেদা বেগম ছেলের মাথা ধরে কাঁদছেন আর বলছেন, কোন অপরাধে আমার ছোট সন্তান দগ্ধ হলো। ছোট শরীরে আর কতো আগুনের পোড়ার যন্ত্রণা সইবে। তার কষ্ট কিভাবে দূর হবে। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিক্যাল  কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে আইসিইউ এর ৬ নম্বর বেডে এ চিত্র দেখা মেলে। রাকিবের শরীরে দগ্ধের পরিমাণ ৩৪ শতাংশ। শরীরের সামনের দিকসহ পিঠের এক অংশও দগ্ধ হয়েছে। দগ্ধ হয়েছে শ্বাসনালীও। চিকিৎসকরা সাধ্যমত তার চিকিৎসা করছেন। ওই ইউনিটের ভর্তিরত প্রতিটি রোগীর অবস্থা এমনই। প্রতিটি মুহূর্ত উৎকণ্ঠার মধ্যে যাচ্ছে দগ্ধ হওয়া স্বজনদের। ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা হামলা চালায়। এতে ওই বাসের যাত্রী রাকিব দগ্ধ হয়। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠায়। পরে তাকে পাঠানো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল সকালে আইসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, রাকিব মিয়া বেডে শুয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে মা...মা বলে ডাকছিল। দগ্ধ হওয়ার অসহ্য যন্ত্রণায় মাঝে মধ্যে উঠে বসছে। তখন তার মা রাশেদা বেগম জোর করে আবার তাকে শোয়ানোর চেষ্টা করছে। এ সময় তার মাকে চিৎকার করে কাঁদতে দেখা যায়।
আহত রাকিবের মা রাশেদা বেগম জানান, রাকিব যখন শিশু তখন তার স্বামী জামাল উদ্দীন হৃদরোগে মারা যায়। রাকিব ছাড়াও তার আরও তিন ছেলে ও ১ মেয়ে আছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই সংসারে টানাপড়েন শুরু হয়। তিনি বলেন, জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে গাজিপুরে এলাকায় চলে আসি। গাজিপুরের টঙ্গীর একটি টিনশেডের বাড়িতে উঠি। ওই এলাকার একটি কাঁচাবাজারে রাত্রিকালীন কাঁচামাল বিক্রয় করতাম। আর এতে আমাকে সহযোগিতা করতো রাকিব। তিনি আরও  জানান, আমার পরিবারের অন্য ছেলেরা আলাদা থাকে এবং তারা গ্রামের বাড়িতে থাকে। কিন্তু, রাকিব আমার সঙ্গে থাকতো। কাঁচামালের ব্যবসায় সহযোগিতা দিতো। এতে আমার সংসার সচ্ছল ভাবে চলে যেত। কিছু টাকাও জমা করেছিলাম। দিন ভালই যাচ্ছিল। গত ৪ঠা ফেবু্রয়ারি রাতে একটি যাত্রীবাহী বাসে করে আমার এক স্বজনের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের জেলার গফরগাঁওয়ের জয়চর এলাকায় যাচ্ছিল রাকিব। বাসের আগের সিটে বসা ছিল সে। তখন দুর্বৃত্তরা ওই বাসে পরপর দুটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। সঙ্গে সঙ্গে ওই বাসটিতে আগুন ধরে। অনেকেই বাস থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে পড়ে। কিন্তু, রাবিক কিশোর হওয়ায় তাড়াতাড়ি নামতে পারেনি। এতে দগ্ধ হয় রাকিব। তার শরীরের গলা থেকে পা পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালীও পুড়েছে। স্থানীয় হাসপাতালের পর ঢাকার বার্ন ইউনিটে নিয়ে এলে (এইচডিও) হাই ডিফেন্সি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে সুস্থ করে তোলার জন্য। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমরা গরিব। কোন সম্পদ নেই। দিন আনি দিন খাই। কষ্ট করে সংসার চালানোর পাশাপাশি কিছু টাকাও জমা করেছিলাম। রাকিব দগ্ধ হওয়ার পরই ওই টাকাও খরচ হয়ে গেছে। এখন আমার সংসার কিভাবে চলবে। কোন অপরাধে আমার ছোট ছেলেকে দগ্ধ করা হলো। কার কাছে এর বিচার চাইব। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে  পড়েন। তিনি তার ছেলের চিকিৎসার জন্য বিত্তশালীদের কাছে আর্থিক সাহাজ্য কামনা করেন। চিকিৎসাধীন শিশু রাকিবের বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল জানান, কোন শিশু অথবা কিশোরের শরীর  আগুনে ১০ শতাংশ পুড়ে গেলে জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়। কেননা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

No comments

Powered by Blogger.