সংলাপ নিয়ে মন্ত্রিসভায় সরব আলোচনা by দীন ইসলাম

‘সংলাপ’ নিয়ে সরব আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়। সভায় উপস্থিত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, নাগরিক সমাজের ব্যানারে ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা আবার সরব হয়ে উঠেছেন। তারা এখন সংলাপের কথা বলতে বলতে গলা ফাটাচ্ছেন। কিন্তু সহিংসতা বন্ধের জন্য ‘টুঁ’ শব্দটি পর্যন্ত করছেন না। এটা তাদের কি ধরনের দ্বৈতনীতি। মন্ত্রীদের আলোচনায় বেশির ভাগ সময় জুড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীরব ছিলেন। মন্ত্রীদের অনির্ধারিত আলোচনার মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা সহিংসতার ব্যাপারে এত নীরব কেন? তাদেরকে সংলাপের পাশাপাশি সহিংসতায়ও জোরালো হতে হবে। এর আগে গত রোববার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সারা দেশে চলমান নাশকতা বন্ধ করলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ বা রাজনৈতিক আলোচনা নিয়ে চিন্তা করা হবে। একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ধারাবাহিকতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বক্তব্য নিয়েই মূলত আলোচনা হয়। সংলাপ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ২০ দলের লাগাতার অবরোধ-হরতালের মধ্যে চলমান নাশকতা বন্ধে একসঙ্গে তিনটি আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেন, সন্ত্রাস দমন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দ্রুত বিচার আইনের প্রয়োগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এ জন্য নতুন করে কোন আইন করার প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা বৈঠকে হরতাল-অবরোধকে প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও নাশকতা  মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েক জন মন্ত্রী এ আলোচনায় অংশ নেন। বৈঠকে আইনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নাশকতা মোকাবিলায় নতুন করে আইন প্রণয়নের কোন প্রয়োজন নেই। সন্ত্রাস দমন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দ্রুত বিচার আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে নাশকতা বন্ধ করা যাবে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানান প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে সারা দেশে পেট্রলবোমায় আহতদের সুচিকিৎসার ব্যাপারেও মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হয়। এদিকে সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘মারাত্মক’ ক্ষতি হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে বক্তব্য দিয়েছিলেন গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে নিজেই তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় সবজি, মালামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনে সমস্যার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে আমি একথা বলেছি। দেশের সামগ্রিক ক্ষতি হওয়ার বিষয়টিও আমি তুলে ধরতে চেয়েছি। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে ‘টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন্স-ডিওটি)’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে পেশাগত, কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা দেবে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর। তিনি বলেন, সাধারণত অধিদপ্তর গঠনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় আসে না। নির্বাহী সিদ্ধান্তে অধিদপ্তর গঠন করা যায়। তবে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয় মনে করেছেন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়। এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন। অধিদপ্তরের প্রধান হবেন মহাপরিচালক জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি খুব বড় হবে না। এতে ২৩৮টি স্থায়ী পদ থাকবে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর পদ ৮১টি। এছাড়া আরও ৭ হাজার ৫৩৬টি পদ থাকবে যা পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত হবে। অধিদপ্তর গঠনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মোশাররাফ  হোসাইন বলেন, ‘১৯৭৯ সালের একটি অধ্যাদেশের আওতায় বিটিটিবি (বাংলাদেশ টেলিফোন অ্যান্ড টেলিগ্রাফ  বোর্ড) গঠন করা হয়। ২০০৮ সালে অধ্যাদেশে দুটি ধারা সংযোজনের মাধ্যমে বিটিসিএল (বাংলাদেশ  টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড) ও বিএসসিসিএল (বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড) গঠন করা হয়। এ সংশোধনের মাধ্যমে বিটিটিবি বিলুপ্ত করা হয়। তিনি বলেন, এ সময় বিটিটিবি’র দায়- দেনা বিটিসিএলের ওপর ন্যস্ত হয়। বিটিটিবিতে বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিটিসিএলে প্রেষণে ন্যস্ত হন। তবে বিটিসিএলে বাধ্যতামূলক ন্যস্ত করা নিয়ে মামলা হয়। এছাড়া বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের কর্মকর্তারা অন্য ক্যাডারে আত্মীকরণের নির্দেশ চেয়েও মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তখনকার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ সমস্যা সমাধানে কমিটি টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠনের সুপারিশ করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অধিদপ্তর গঠনের ফলে দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান হবে। মামলা নিষ্পত্তি হবে। একটা ক্যাডার প্রায় বিলুপ্ত হতে যাচ্ছিল। বিটিটিবি’র টেলিযোগাযোগ ক্যাডারের কর্মকর্তারা যারা অন্য জায়গায় কাজ করছেন তারা এখানে কাজ করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রম প্রতিমন্ত্রীর কমিটির প্রস্তাব এবং আদালতের নির্দেশনার আলোকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৫৫টি স্থায়ী পদ এবং ৭ হাজার ৫১৯টি পর্যায়ক্রমে বিলোপযোগ্য পদসহ মোট ৭ হাজার ৭৭৪টি পদের সমন্বয়ে অধিদপ্তর গঠনে সম্মতি দেয়। বিটিটিবি’র অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী অবশিষ্ট ১১ হাজার ২৫৫টি পদে কোন জনবল কর্মরত না থাকায় এসব পদ বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু অর্থ বিভাগে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ মোট পদের সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখে স্থায়ী পদ ২৩৮টি ও পর্যায়ক্রমে বিলোপযোগ্য ৭ হাজার ৫৩৬টি পদের সংখ্যা নির্ধারণ করে। অধিদপ্তর গঠনের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় হবে কিনা- জানতে চাইলে  মোশাররাফ হোসাইন বলেন, বাড়তি খরচ হবে না, এ জন্য বলছি ২১টি কাজের কথা বলা হয়েছে। অনেকগুলো কাজ আছে, এগুলো পড়েও থাকবে। এ কাজগুলো করার জন্য বেশি লোকের প্রয়োজন হবে না।

No comments

Powered by Blogger.