বাংলাদেশী দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা তহবিল গড়তে ৭ মহাদেশে ম্যারাথন

বাংলাদেশী গরিব শিশুদের শিক্ষার জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশে সাত দিনে সাত মহাদেশে সাতটি ম্যারাথনে অংশ নেবেন দুবাইভিত্তিক তিন দৌড়বিদ। এ সময় তারা পাড়ি দেবেন ২৯৫ কিলোমিটার পথ। পর্তুগিজ নাগরিক মারিয়া কনসেইয়াকো, বৃটিশ নাগরিক সউল কিনস, দক্ষিণ আফ্রিকার রোসা আরেওসার আজ থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে দৌড় শুরু করার কথা রয়েছে। এরপরের দিন তারা আবুধাবির যায়েদ সেপার্টস সিটিতে আরেকটি ম্যারাথনে অংশ নেবেন। তৃতীয় দিনে তারা ম্যারাথনে অংশ নেবেন প্যারিসে। এরপর তিউনিস, নিউ ইয়র্ক সিটি ও চিলির পুন্তা অ্যারেনাস শহরের ম্যারাথনে অংশ নেবেন। সর্বশেষ ১৪ই ফেব্রুয়ারি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের কিং জর্জ আইল্যান্ডে দৌড়াবেন তারা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন খালিজ টাইমস। এ ম্যারাথন থেকে যে অর্থ আয় হবে, তা চলে যাবে মারিয়া ক্রিস্টিনা ফাউন্ডেশনে (এমসিএফ)। ২০০৫ সালে ঢাকার গরিব শিশুদের দুরাবস্থা দেখে মারিয়া নামের এক নারী এ দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ দাতব্য সংস্থা কিন্ডারগার্টেন থেকে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া দু’শতাধিক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে সহায়তা করে যাচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া নিজেও একজন দৌড়বিদ। ২০১৩ সালে শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশে তিনি এভারেস্টের চূড়ায় চড়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি শিশুদের জন্য সব করতে পারি। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আমি প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলাম। সেপ্টেম্বরে আমি ৫ দিনে ৫টি অর্ধ-ম্যারাথন সমপন্ন করি। অক্টোবরের মধ্যে আমি টানা পাঁচ দিনে পাঁচটি ম্যারাথনে দৌড়িয়েছি। ডিসেম্বর মাসে আমি প্রতিদিন ৫০ কিলোমিটার করে ৭ দিন দৌড়েছি। আজ থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে তার দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ম্যারাথন। ম্যারাথনের তিন দৌড়বিদের একজন বৃটিশ নাগরিক সউল কিনস পেশায় ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং পরামর্শক। তিনি বলেন, আমি একটি ভয়াবহ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর ডাক্তার আমাকে আর কখনও না দৌড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে মারিয়ার উদ্যম দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমিও রাজি হয়েছি দৌড়াতে। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্নও। কেননা, আসছে সাত দিনে তারা খুব কম সময় পাবেন। কম ঘুম, ক্লান্তিকর পরিশ্রম, বিমান ভ্রমণের ক্লান্তিসহ বিভিন্ন কারণেই বেশ কঠিন হবে তাদের লক্ষ্য। মারিয়ার দাতব্য সংস্থার এমসিএফের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের পরিবারকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শিশুকে পড়াশুনায় পাঠালে তাদের আয়-রোজগার কমে যায়, খাবার জুটাতেই কষ্ট হয়ে যায়। সংস্থাটি তাই বিভিন্ন পরিবারের বয়স্কদের আয়ের সংস্থানে সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছে। বহু শিক্ষার্থী ও শিশুদের পিতা চাকরি পেয়েছে আরব আমিরাতের বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটসে।
এখানে আগে কাজ করতেন মারিয়া। মারিয়া জানান, এমিরেটসে একজন হুইল চেয়ার অ্যাটেনডেন্ট কেবলমাত্র বখশিশ থেকে যে অর্থ পান, তা দিয়ে বাংলাদেশে একটি নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এদের একজন নিজের গ্রামে বখশিশের টাকা দিয়ে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও করেছেন। ২৩ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া ওই বিদ্যালয়ে এখন ৫৯ জন শিশু পড়াশুনা করে। বাংলাদেশে যে লোকটি কারখানায় কাজ করে, তার বেতনের চেয়ে দুবাইয়ে হুইল চেয়ার অ্যাটেনডেন্টের বেতন ৩০ গুণ বেশি। এমিরেটসের মালামাল বহনকারীদের আয় আরও ৫০ গুণ বেশি! মারিয়া বলেন, এর ফলে তারা তাদের নিজেদের ছোট্ট সমাজে বেশ ধনী হয়ে উঠেন। এর ফলে অন্যরা উৎসাহিত হন। তিনি জানান, তার সংস্থার মূল বাক্য হচ্ছে- বিশাল স্বপ্ন দেখো, নিজেকে নিয়োজিত কর এবং কখনোই নিরুৎসাহিত হয়ো না। তার ভাষায়, আমি যদি করে যাই, হয়তো কোন একদিন আরও মানুষ এগিয়ে আসবে। একটি শিশু যাতে বিদ্যালয়ে যেতে পারে, সেজন্য অর্থ জোগাবে। আমি যখন দৌড়াই, তখন সকল ব্যথা, ক্লান্তিতেও আমি নিজেকে বুঝাই, মাত্র দু’ঘণ্টা আমাকে যন্ত্রণাটা সইতে হবে। কিন্তু আমি যদি আমার শিশুদের জন্য কিছুই না করি, তাহলে তাদের সারা জীবনটাই দরিদ্রতা ও দুর্ভোগে জর্জরিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.