গুলশান, বারিধারায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বার্নিকাটের উদ্বেগ

গুলশান, বারিধারা এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। বেশিরভাগ কূটনৈতিক মিশন ঢাকার এ অঞ্চলে। সেখানে, মানববন্ধন ও সমাবেশের প্রতি ইঙ্গিত করে বার্নিকাট ওই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এ মত প্রকাশ করেন। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অফিসের কথা উল্লেখ করেন নি, যে অফিসকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা মানববন্ধন এবং সমাবেশ করেন। তবে গুলশান এলাকায় কয়েকদিন আগে দূতাবাসের এক কর্মকর্তার গাড়িতে বোমা হামলার কথা উল্লেখ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি চলমান সহিংসতাকে মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করেন। এদিকে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি সইয়ের আহ্বান জানালেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। গতকাল দুপুরে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাষ্ট্রদূত সেগুন বাগিচার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে তাদের মধ্যে প্রায় সোয়া ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বার্নিকাট উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের যে গভীরতা ও বিস্তৃৃতি রয়েছে তা আরও শক্তিশালী করতে নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী কোন কথা না বললেও বিকালে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। জানানো হয়- যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দ-প্রাপ্ত আসামি আশরাফুজ্জামান খানকে বাংলাদেশে  ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করেছেন প্রতিমন্ত্রী। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কি আলোচনা হয়েছে বা যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কি জবাব মিলেছে সে সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে কোন উল্লেখ ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সংলাপ, অংশীদারিত্ব সংলাপ, নিরাপত্তা সংলাপ, সামরিক সংলাপ এবং টিকফা কাউন্সিল সভার মতো আলোচনার মাধ্যমে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক বর্তমানে একটি শক্ত কাঠামোর উপর দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন ২০১৪ সালের অক্টোবরে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত তৃতীয় পার্টনারশিপ ডায়ালগ দু’দেশের বিরাজমান সম্পর্ককে আরও গভীর, সম্প্রসারিত ও  জোরদার করেছে। বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক অবদান রাখা যুক্তরাষ্ট্র এখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প-অবকাঠামো,   সেবা খাত এবং উচ্চতর প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। বৈঠকে  বাংলাদেশের কোস্টগার্ডকে শক্তিশালীকরণ, সন্ত্রাসবাদ  মোকাবিলায় জাতীয় কৌশল এবং শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি নতুন রাষ্ট্রদূতকে  বৈঠকের শুরুতেই অভিনন্দন ও স্বাগত জানান। একই সঙ্গে আশা করেন, তার কর্মকালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে। রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে আরও জোরদার ও সম্প্রসারিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, ২৫শে জানুয়ারি মার্কিন দূতের দায়িত্ব নিতে ঢাকা আসেন বার্নিকাট। ৪ঠা  ফেব্রুয়ারি তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তার মিশন শুরু করেছেন। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হবে তার।

No comments

Powered by Blogger.