তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি- অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

অপেক্ষাকৃত বিলম্বে হলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি লাভ করেছে এবং বিপুল সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার ঝলকানি আমরা দেখলাম রাজধানীতে অনুষ্ঠিত 'ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫' সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। ওই অনুষ্ঠানে সরকারের নীতিনির্ধারক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের এই আশাবাদও আমাদের যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করে তোলে যে, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প একদিন বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতকেও ছাড়িয়ে যাবে। বক্তারা যথার্থই বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, এই খাত হবে তার অন্যতম প্রধান সোপান। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গতি ও সম্ভাবনার এই চিত্র সমকালের জন্যও বিশেষ শ্লাঘার। আমরা শুরু থেকেই এর গুরুত্ব অনুধাবন এবং তাতে আলোকপাত করার সম্পাদকীয় নীতি গ্রহণ করেছিলাম। মুদ্রণ সংস্করণের পাশাপাশি অনলাইন সংস্করণের অবারিত সুযোগ গ্রহণ করে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রয়োগে জোর দিয়ে এসেছি। আমরা আনন্দিত যে, এর মাধ্যমে জনসাধারণ যে অনুপ্রেরণা, শিক্ষা ও প্রায়োগিক নির্দেশনা পেয়েছে এই খাতের নীতিনির্ধারকরা তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উৎসাহ জোগানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য দৈনিক সমকাল 'ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫ আইসিটি অ্যাওয়ার্ড' লাভ করেছে। এই স্বীকৃতির জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে আমরা চাই, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ যে বিপুল সম্ভাবনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হোক। বিশ্বব্যাপীই এই খাতের অগ্রগতি ও সম্প্রসারণে তরুণ সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জনমিতির দিক থেকে আমরা ভাগ্যবান যে, নাগরিকদের বিপুল অধিকাংশই তরুণ। তাদের মধ্যে বাড়ছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিমনস্কতা। তারুণ্যের এই উত্থানকে তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনা বাস্তবায়নে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। আলোচ্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, তরুণদের হাতেই আইসিটির ভবিষ্যৎ। পাশাপাশি আইসিটি খাতের আন্তর্জাতিক বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির জন্যও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টাও তার বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, বাংলাদেশে আইসিটির প্রতি তরুণদের আকর্ষণ গর্ব করার মতো। এই খাতের রফতানি আয় গত ছয় বছরে ২৫ মিলিয়ন থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। শিগগিরই তা হাজার মিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। আমরা এই সম্ভাবনা ও আশাবাদের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমাদের মনে আছে, গত বছর নভেম্বরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তাদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তরুণ ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা দেখেছি, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার, পরবর্তীকালে প্রণীত রূপকল্প-২০২১, দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প-২০৪১, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা_ নীতিগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সব দলিলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার স্পষ্ট। এও অস্বীকারের উপায় নেই, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দেখা হচ্ছে, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবায়নে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। আউটসোর্সিংসহ ডিজিটালাইজেশনের সুফল মসৃণভাবে সবার কাছে পেঁৗছানোর ক্ষেত্রে এখনও কিছু বাধা রয়ে গেছে। এসব ব্যাপারে নীতিগত পর্যায়ের সদিচ্চ্ছা নিয়ে আমরা সন্দিহান নই; কিন্তু সেই সদিচ্ছা মাঠ পর্যায়ে কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে, সেদিকে নজর দিতেই হবে। অনুপ্রেরণা ও প্রণোদনার পাশাপাশি উপযুক্ত নজরদারিই পারে লাখো তরুণের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তথা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া মসৃণ করতে

No comments

Powered by Blogger.