সৌদি আরবে গৃহপরিচারিকা পাঠানো- ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন

বেশ ক’দিন ধরে সরকারি প্রচারযন্ত্র এবং গণমাধ্যমে বাংলাদেশীদের জন্য সৌদি শ্রমবাজার খুলে দেয়ার খবর প্রচার হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে সৌদি আরবে কর্মরত এবং যারা সেখানে যেতে আগ্রহী তাদের জন্য এটি খুবই ভালো খবর। কিন্তু বাস্তবে কারা সেখানে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তাদের সেখানে কাজ বা মজুরি কেমন হবে তার অনেক কিছুই অজানা থেকে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমবাজার খুলে দেয়ার বিষয়টি যেভাবে বলা হচ্ছে সেভাবে শর্তগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে না। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এবার সরকার মাসে ৮০০ সৌদি রিয়ালে শ্রমিক পাঠাতে সম্মত হয়েছে। প্রধানত খাদিমাহ ভিসায় সে দেশে ঘরে কাজ করার জন্য শ্রমিক নেয়া হবে। বাংলাদেশ থেকে এর আগে গৃহকর্মী বা গৃহপরিচারিকা সেখানে পাঠানো হতো না। সৌদি আরবে খাদিমাহ বা গৃহকর্মী নেয়া হতো ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। সুশ্রী ও আচার-ব্যবহারেও চমৎকার ইন্দোনেশীয়রা নিজেদের পরিপাটি রেখে সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। কিন্তু তারপরও কাজের তুলনায় কম বেতন এবং কিছু বাসাবাড়িতে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে ইন্দোনেশীয় মেয়েরা সেখান থেকে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া এসব দেশ শ্রমিক পাঠানোর জন্য ন্যূনতম মজুরি চেয়েছে এক হাজার ৫০০ রিয়াল। রহস্যজনকভাবে বাংলাদেশ সেখানে মাত্র ৮০০ রিয়াল তথা মাসে ১৬ হাজার টাকায় শ্রমিক পাঠাতে সম্মত হয়েছে। এটি অন্য দেশগুলোকে বিস্মিত করেছে। বাসাবাড়িতে কাজের ঘণ্টার যেখানে কোনো হিসাব নেই সেখানে মাত্র ৮০০ রিয়াল মাসিক বেতনে একজন মহিলার রাতদিন ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করা কষ্টকর। এ ছাড়া আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী নারীশ্রমিকদের নিপীড়নের ঘটনা। সৌদি আরবের সব পরিবার যে ভালো হবে তার যেমন নিশ্চয়তা নেই তেমনিভাবে নারীশ্রমিকেরা নিগ্রহের শিকার হলে বাংলাদেশী মিশন নানা কারণে অন্য দেশের মতো তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে না। পুরুষশ্রমিকেরা সৌদি আরবে অল্প বেতনে গেলে তারা অনেক সময় খণ্ডকালীন কাজ করে পুষিয়ে নিতে পারে। গৃহপরিচারিকাদের পক্ষে সে ধরনের সুযোগও থাকবে না।
৮০০ রিয়েলে কোনো পুরুষ শ্রমিক গেলে তাদের আরো কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয় যা বিবেচনা করা দরকার সেখানে শ্রমিক পাঠানোর আগে। সেখানে একজন পুরুষ শ্রমিকের থাকা-খাওয়া বাবদ মাসে কমপে ৪০০ থেকে ৫০০ রিয়াল খরচ হয়। সৌদিতে শ্রমিক ভিসায় যাওয়া সব নারী-পুরুষের বছর বছর ইকামা বা রেসিডেন্স পারমিট নবায়ন করতে হয়। এই জন্য একজনকে চার হাজার রিয়াল খরচ করতে হয়। ইকামা নবায়নের এই টাকা কে বহন করবে সেটিও নিশ্চিত হওয়ার প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া মেডিক্যাল সুবিধা, ফ্যামিলি ভিসা, কত দিন পর ছুটি, কত মাসের ছুটি এবং দেশে আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া প্রভৃতি বিষয়ও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
সৌদি আরবের শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি নিঃসন্দেহে সব বাংলাদেশীর জন্য আনন্দের খবর হবে যদি এর মাধ্যমে যারা সেখানে যাবেন তাদের স্বার্থ রক্ষিত থাকে। বিদেশে নারী পাঠিয়ে যেন কোনো দুর্নামের সৃষ্টি না হয়। তা না হলে হতভাগা শ্রমিকদের চেখের পানি আর দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী হবে। সেটি কোনোভাবেই কাক্সিত হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.