অজানা গন্তব্যে বাংলাদেশ by সৈয়দা পাপিয়া

পেট্রলবোমায় মানুষ মেরে ও এই পেট্রলবোমা ২০ দলের লোকজন মেরেছে নাম দিয়ে ভিন্ন মতাবলম্বী নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ক্রসফায়ার, ট্রাক চাপা দিয়ে মৃত্যুর নাম করে হত্যা, গুলিবিদ্ধ লাশ ইত্যাদি এখন আলোচিত এক বিষয়। এই পরিস্থিতি কারা করছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। ২০ দল বলছে সরকার করছে, সরকার বলছে ২০ দল করে, ১৬ কোটি মানুষের মনেই প্রশ্ন রয়েছে এটা কারা করছেÑ একেক জন একেক রকম অনুসন্ধান করছেন, বক্তব্য রাখছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন, কেউ কেউ তৃতীয় পক্ষের অভিভাবকের আলামত পাচ্ছেন। কিন্তু আমার বিশ্লেষণ ভিন্ন জায়গায়Ñ পেট্রলবোমা মেরে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে সব মিডিয়া টকশো প্রচারমাধ্যম পেট্রলবোমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে লাভবান কারা হচ্ছেন। এর মধ্যেই উত্তর আছে পেট্রলবোমা কারা মারছে কেন মারছে। বিএনপিসহ ২০ দলীয় ঐক্যজোটে কোনো শক্তি, জনগণ ও জনসমর্থন আছে বলে ক্ষমতাসীন দল মনে করে না। বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্মসূচি দিয়ে কাপুরুষের মতো মামলা-হামলা, পুলিশের গুলির ভয়ে ঘরের মধ্যে বসে থাকেন। আন্দোলন করার কোনো যোগ্যতা ২০ দলের নেই বলে যখন তখন গলা ফাটাচ্ছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। ২০ দলকে কিভাবে কাবু করতে হয় সেটা সরকার জানে, ইত্যাদি বহু কথা শুনে আসছি দীর্ঘ দিন ধরে। তাহলে আমার প্রশ্ন পেট্রলবোমা কারা মারছে, কেন মারছে, পুলিশের পাহারায় পেট্রলবোমা মারার সাহস সরকার ও তৃতীয়পক্ষেরই শুধু আছে। তা ছাড়া এখন পেট্রলবোমা পাওয়া যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অফিসে। পেট্রলবোমাসহ ধরা পড়ছে ছাত্রলীগের ছেলেরা। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মূলত বিএনপিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ঢাকাতে কোনো কর্মসূচির অনুমতি দেয়া হয়নি। এমন কি সুপ্রিম কোর্টের মধ্যেও সভা করতে দেয়া হয়নি। গণমিছিলের কর্মসূচি করতে দেয়নি তাহলে বিদেশীদের কাছে বিএনপির বিরুদ্ধে বলার কিছুই নেই। গণতন্ত্র রক্ষা দিবসের নাম করে গত ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপির সাথে বৈরী আচরণ করে সরকার যে ভুল করেছে, তার জন্য বিএনপিকে তো কেউ দোষারোপ করতে পারবে না। গাজীপুরের জনসভায় ১৪৪ ধারা তাও সরকার করেছে। বিএনপি দায়িত্বশীল দল হিসেবে দায়িত্বশীলতারই পরিচয় দিয়েছে। ৪ জানুয়ারি পল্টন অফিসে খালেদা জিয়াকে কেন যেতে দেয়া হলো না, সরকারের এত ভয় কিসের? সরকারসমর্থিত কিছু সংগঠনকে দিয়ে মানববন্ধন আর সেমিনারের আয়োজন করছে সরকার, তাতে বক্তব্য রাখছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের দিয়ে বিএনপি কার্যালয় গুলশানে মানববন্ধন করানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। অথচ পরীক্ষা নেবে ও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নাম দিয়ে যৌথবাহিনীর অভিযানে হাজার হাজার মানুষ আজকে ঘরছাড়া এবং শত শত তাজাপ্রাণ ঝরে গেছে যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে। হরতালের সমর্থনে কোথাও কোনো মিছিল মিটিং করতে দিচ্ছে না। নিজের মন মতো সংবিধান সংশোধন করে একতরফা নির্বাচনের নামে অবৈধভাবে নিয়মরক্ষার নির্বাচন বলে বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকার অভিপ্রায়ে সরকার লাগামহীমভাবে যা খুশি তাই করছে, যা ইচ্ছা তাই বলছে। এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে অভিভাবক-ছাত্র-শিক্ষক একবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের কথা বললে কী পরিণতি আপনাদের জীবনে নেমে আসবে, তা একবার দেখার জন্য অনুরোধ করছি। বার্ন ইউনিট আর পরীক্ষার্থীদের জন্য যত মায়াকান্না সরকার কাঁদছে আর ২০ দলের ওপর দোষ চাপিয়ে অট্টহাসি দিচ্ছে, এতে কি সরকারের দায়িত্ব কমে যাচ্ছে, বাস্তবতা কি তাই। সভ্য রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সরকারের সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘একজন পিতা তার সন্তানের খবর না রাখলেও রাখতে পারে কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের খোঁজ রাখা’। সেখানে সরকারের ভূমিকা কী? লাইসেন্সধারী পিস্তল নিয়ে প্রজন্মলীগের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে চলে যাচ্ছে গুলশান কার্যালয়ে। তাকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা সসম্মানে বিদায় দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাবেক কমিশনার হাইকোর্টে পিস্তল নিয়ে যাচ্ছে, বাথরুমে রেখে বাড়ি গিয়ে পিস্তল না পেয়ে অবশেষে জিডি ও পিস্তল উদ্ধার। হাইকোর্টে সরকারি এএজি ফাঁকা গুলি করছে তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে, শেখ হাসিনার জনসভায় তার দলীয় ডাক্তার পিস্তল নিয়ে ধরা পড়েছেন। এগুলো কিসের আলামত? পিস্তলের লাইসেন্স থাকলেই কি যখন তখন গুলি করা যায়? হাইকোর্টে একটা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গুলি করার মতো এমন কি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যার জন্য ফাঁকা গুলি চালাতে হলো। গুলি চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনীর কাছে কি কোনো জবাবদিহি করতে হয়েছে তাদের। এ সরকারে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স কাকে কাকে দিয়েছে তার তালিকাও জনগণের জানা দরকার। কী কী কাজে এরা গুলি ব্যবহার করছে তারও জবাবদিহির মুখোমুখি করা উচিত। কথায় কথায় অনেকেই বলেন, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা নেই। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে একমাত্র মাপকাঠি যদি জনগণের শোডাউনের মাধ্যমেই অর্জন করতে হয় তাহলে যারা বলেন বিএনপির সাথে জনগণ নেই তাদের পুলিশ, র‌্যাব, বিজিপি তুলে নিতে বলেনÑ আধা ঘণ্টার নোটিশে লাখ লাখ লোকের সমাগম হয় কি না দেখে নেন। কিন্তু কথা হচ্ছে সরকার বিএনপিকে জনসভা করার অনুমতি দেয়ার আগেই সন্ত্রাসের আলামত পান, আসলে সন্ত্রাস নয় জনস্রোতের আলামত পান। জাতীয় সংসদে সরকার প্রধান বক্তৃতা দিয়ে বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আর কত লাশ ডিঙিয়ে ক্ষমতায় যাবেন? কত লাশ আপনার প্রয়োজন?’ জীবন্ত ব্যক্তিকে লাশে পরিণত করা এবং লাশ ডিঙিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার বদ অভ্যাস বেগম জিয়ার নেই। তাই ’৯১-এর নির্বাচনে স্বৈরাচারকে হটিয়ে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করে নির্বাচনে গিয়েছিলেন।
লেখক : অ্যাডভোকেট ও সাবেক সংসদ সদস্য

No comments

Powered by Blogger.