রাজনীতিবিদদের রাতের আধারে তুলে নেয়া কাম্য নয় -২০ ঘণ্টা পর মান্নাকে থানায় হস্তান্তর

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। গুলশান থানায় করা একটি মামলায় র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করেছে বলে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান দাবি করেছেন। মান্নার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গভীর রাতেই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও তার পরিবার জানায় সোমবার গভীর রাতে বনানীর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারি এক দল মান্নাকে তুলে নিয়ে যায়। থানায় হস্তান্তরের আগে মান্নার আটকের ব্যাপারে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ডিবি পুলিশ তাকে আটক করেনি। মঙ্গলবার বিকেলে মাহমুদুর রহমান মান্নার সন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিটের পক্ষে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থিত হন। ওই রিটের নথি আদালতের কাছে না পৌঁছায় এ বিষয়ে কোনো শুনানি হয়নি। রিটে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মান্নাকে আদালতে হাজির করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা চাওয়া হয়। আইন অনুসারে আটক ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাছের আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মান্নাকে তুলে নেয়ার ২০ ঘণ্টা পর তাকে থানায় গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তার পরিবার স্বাভাবিকভাবেই এ ষাটোর্ধ বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল। কারণ, এর আগে অনেকেই ডিবি পুলিশের পরিচয়ে সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী লোকদের হাতে গুমের শিকার হয়েছেন। পরে তাদের আর হদিস মেলেনি। যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত মান্নাকে থানায় গ্রেফতার দেখানোয় তার পরিবার গুম আতঙ্ক থেকে রক্ষা পেয়েছে। যেকোনো ব্যক্তিই কোনো অভিযোগে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। তবে যখন তখন যাকে তাকে আইনের দোহাই দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া কাম্য হতে পারে না। সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশের যদি কাউকে বাসা থেকে আটক করতে হয় তাহলে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে দিনে তা করতে পারতো। কাউকে আটক করে দীর্ঘ সময় অজ্ঞাত স্থানে রেখে গ্রেফতার দেখানো আইনসম্মত যেমন হতে পারে না তেমনিভাবে কোন সভ্য সমাজে তা কাম্যও নয়। এটি চলতে থাকলে গোয়েন্দা পুলিশের নাম দিয়ে কোনো অপরাধীচক্র যে কাউকে রাত-বিরাতে অপহরণের সুযোগ পাবে। মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সাথে একটি ফোনালাপকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেছে সরকার। এ ফোনালাপের বিষয়টি গণমাধ্যমে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মহল থেকে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, সে ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে মান্না জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি তার অবস্থান স্পষ্ট করবেন। কারণ তার ফোনালাপের বিষয়টি গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সে সুযোগ তাকে দেয়ার আগেই গ্রেফতার করা হলো। একজন রাজনীতিবিদকে তার অবস্থান স্পষ্ট করার সুযোগ দেয়া উচিৎ ছিল। এতে করে জাতি এ ব্যাপারে তার অভিমত জানতে পারত। আজ রাজনীতিবিদ মান্না যে নিগ্রহের শিকার হলেন সে একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার এ জন্য যারা নির্দেশনা দিয়েছেন তারাও হতে পারেন। এটি স্মরণে থাকলে অনেক বাড়াবাড়ি থেকে দেশের মানুষ নিস্কৃতি পাবে।

No comments

Powered by Blogger.