রাষ্ট্র ও ভাষা by সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

দীনবন্ধু মিত্রের ‘সধবার একাদশী’ একবার পড়লে রামমাণিক্যকে ভোলা মুশকিল। রামমাণিক্য বাঙাল। তার পরিচয় লিপিতে বলা আছে সে কথা; সে লিপি না থাকলেও অবশ্য চলত, কেননা মুখ খুললেই আর রক্ষা নাই, হা হা করে ওঠে তার বাঙালপনা। পদ্মাপারের! খাঁটি বিক্রমপুরীর। তার অনেক স্মরণীয় মনিমাণিক্যের মধ্যে একটি, ‘এত করাও কলকাতার মতো হবার পারলাম না, তবে এ পাপ দেহতে আর আজ কি, আমি জলে ঝাঁপ দিই, আমাকে হাঙ্গোরে কুমিরে বক্কোন করুক।
ওই যে বক্কোন ওই আওয়াজ কে দিতে পারবে এ সংসারে, খাঁটি বাঙাল ছাড়া? টেলিভিশনে হঠাৎ সেদিন ওই ভক্ষণের আওয়াজ যেন আবার শুনলাম। নিজ কানে। যিনি বলছিলেন, তার পরিচয়টা ঠিক ধরতে পারিনি, কিন্তু আগ্রহ নিয়ে শুনছিলাম, কেননা তিনি মাছের কথা বলছিলেন। মাছের ব্যাপারে আশ্বস্ত করবেন আশা করছিলাম; ভরসা দেবেন, ভ্রান্ত ধারণার নিরসন করে দেবেন, বলবেন, মাছ খাওয়া যাবে। না, উল্টো বললেন কথা, বললেন মাছ ভক্ষণ করবেন না। তা তো বুঝলাম, কিন্তু কি যে ভক্ষণ করব, তা তো বুঝলাম না, জনাব। সেটা তো কেউ বলে না, বলে দেয় না।
তবে অত দুঃখের মধ্যেও ভক্ষণ দেখি আমাকে ছাড়ে না। বেড়ে বলেছেন, ভাই, ভক্ষণ করবেন না। আসলে তো আমরা ভক্ষণ করি। বিশেষ করে মাছ, বাঙালির ভেতরে একটা বিড়াল আছে, মাছ দেখলে চাঞ্চল্যকে শাসন করা কঠিন হয়ে পড়ে। লম্ফঝম্প দিতে থাকে। কিন্তু মাছ পেলে বিড়ালের মতো ভদ্রভাবে খাই না, গপাগপ গিলতে চাই। রাক্ষসের মতো ভক্ষণ করি। কেবল মাছ বলে নয়, এমন-কি কোন খাবার আছে যা পেলে ভক্ষণ করি না? শান্তভাবে খাই?
তবে মাছের এখন সত্যি সত্যি দুর্দিন। সহকর্মীর ভাগ্নে গিয়েছিল দেশে। ভাটি অঞ্চলে দেশ তার। ভাগ্নের বাবা বাজারে খুঁজে ঢুকে জিয়ল শিং মাছ নিয়ে এসেছে দশটা। পরের দিন সকালে উঠে দেখেন মরে ভেসে রয়েছে সবক’টিই। গায়ে তাদের ফোস্কা। বসন্ত হয়েছে। পানির মাছের গায়ে পানি বসন্ত। কে কবে শুনেছিল অমন অলুক্ষণে কথা। একি তবে প্রকৃতির প্রতিশোধ? বসন্তকে দেশ ছাড়া করব বলে আস্ফালন করেছি, তাই কি প্রতিশোধ নিল বসন্তু; মাছের গায়ে ফুটে ওঠে? এরপরে কি তরকারির বসন্ত হবে? তারপরে চাল-ডালের? কলিকালের মনে হয় খুব আর বিলম্ব নেই।
অনেকে আছেন এমনিতেই হতাশাবাদী; তাদের ঈমান আরো পোক্ত হয় এসব দেখে। তারা বলেন, সব শেষ হয়ে যাবে। দেখছ না লক্ষণ?
কেমন খরা পড়েছে। মরুভূমি হয়ে যাবে সারা দেশ। খেজুর গাছ দেখবে চারদিকে। তার নিচে হয়তো খাওয়া যাবে তরল সোনা, অর্থাৎ খনিজ তেল, কিন্তু তাতে তোমার আমার কি লাভ ব্রাদার, তুমি আমি তো ততদিন টিকব না। আমি অবশ্য হতাশাবাদী নই। বিলোপবাদ পোষায় না আমার। যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই-ই তবে জৈব সার হিসেবে তো অন্তত একটা ভূমিকা থাকবে। আবার আসিব ফিরে। সার হয়ে ভূমিকে উর্বর করতে পারব। তাতে গাছ হবে। গাছ হলে বৃষ্টি হবে, বৃষ্টি হলে আর পায় কে, সোনার বাংলা তখন আবার শ্যামল হয়ে উঠবে। কিন্তু ওই যে প্রশ্ন, তাতে তোমার কি, আমার কি? ও বড় মারাত্মক প্রশ্ন, সত্যি সত্যি, আমি গেলে রইল কি?
ভক্ষণ বড়ই সত্য হয়ে উঠেছে, কেবল আমরা যে ভক্ষণ করি তা নয়, আমাদেরকে ভক্ষণ করা হয়। দারিদ্র্য আমাদেরকে ভক্ষণ করে, হতাশা খুবলে খুবলে খায়। মহানন্দে মশারাও ছাড়ে না। কারো ইচ্ছা ধর্মীয় রাষ্ট্র করা হোক বাংলাদেশকে, ওদিকে মানুষের ধর্মকর্ম করবার স্বাধীনতাটুকু পর্যন্ত যে বিপন্ন তা তো দেখছে না কেউ। পরিচ্ছিন্ন থাকার মতো বাড়তি কাপড় নেই, সম্ভ্রম রক্ষা করার মতো আড়ালটুকু অবলুপ্ত, অজু করবার পানি নেই। বাংলাদেশের মেয়েরা বিশ্বের বাজারে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি মধ্যবিত্ত ঘরেও শবেবরাতে দেখলাম খাওয়া-দাওয়া কমে এসেছে। যে দুটো চাকরি করে, সে তিনটে চাকরি খুঁজছে। ওদিকে বেকার মানুষ কি খায়, কোথায় ঘুমায় হদিস নেই। আমরা ভক্ষণ করব না তো ভক্ষণ করবে কে? হয় ভক্ষণ করব, নয় তো ভুক্ত হব। আমাদের দেশ ক্ষুধার দেশ। কেবল মানুষ নয়, মশা, মাছি, রোগ, শোক, কুকুর, শৃগাল, সকলেই এখানে বিলক্ষণ ক্ষুধার্ত। ভক্ষণ, শুধু ভক্ষণ।
মনুষ্যত্ব তো বিপন্ন হচ্ছেই, এমনকি বাঙালিত্বও খাবি খাচ্ছে, দেখতেই পাই। দুধ ছিল, দুধ গেছে। সেই যে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মাছ খেয়ে আসছি আমরা, বিকাশ যেটুকু ওই মৎস্য-কল্যাণেই, তাও কি যাবে চলে শেষ পর্যন্ত? নিষিদ্ধ হয়ে গেল মিঠা পানির মাছ, সমুদ্রের মাছই বা পাই কোথায়? সে তো শুনি হাঙ্গোরে কুমিরেই বক্কোন করে, নয়তো ধরে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।
ওদিকে বাংলা ভাষা চলে না। যারা চালু করবেন বলেন তারাই ইংরেজি ব্যবহার করেন বেশি। খোঁজ নেওয়া মাত্র জানা যায় দেশের ভবিষ্যৎ কর্তারা সবাই কিন্ডারগার্টেন ও ইংরেজি মাধ্যমের কারখানায় উপন্ন হচ্ছেন। দেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাই পড়ে যাদের সুযোগ নেই বিদেশে যাবার। তবে কি-? তবে কি বাঙালিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে? বিদেশী শাসন পারেনি; আর্যরা ফেল করল, মুঘল-পাঠান হদ্দ হলো, ব্যর্থ হলো ইংরেজ, হেরে গেল পাঞ্জাবি, তবে কি শেষ পর্যন্ত নিজেদের হাতে ও বৈরী পরিবেশের হস্তক্ষেপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব আমরা? না, আমি মনে করি না। আমি মনে করি আমরা না থাকলেও আমাদের বাংলা ভাষা থাকবে। এমনকি যদি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয় হয়েও হয় তবু টিকে থাকবে। একদিন হয়তো ভাষাবিদরা সামাজিক ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে এ ভাষার ইট-কড়ি-বর্গা টেনে টেনে বের করবেন এবং বলবেন এর অনেক বৈশিষ্ট্য ছিল। ভাষার যখন বৈশিষ্ট্য ছিল তখন ভাষা যারা ব্যবহার করত তাদেরও নিশ্চয়ই তা ছিল, জীবন থেকেই তো ভাষায় আসে, উল্টো পথ বন্ধ।
ভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা এখনি বলে রাখতে পারি। বিশেষ্য, বিশেষণ নয়, ক্রিয়া দিয়েই ভাষাকে চেনা সহজ। ক্রিয়ার জগৎ বড় বিচিত্র, বহু বহু দূর পর্যন্ত প্রসারিত। যেমন এই যে বললাম, ভক্ষণ। ওই ক্রিয়া দিয়ে বাঙালিকে চেনা খুবই সহজ এবং সঙ্গত। ভক্ষণ অর্থ খেয়ে ফেলা তো, ওই ফেলাতেও বাংলা ভাষার অতিসুন্দর নিজস্বতা ফুটে রয়েছে। এত বেশি ফেলতে বোধ করি কাউকে দেখা যাবে না এবং এমন নির্বিকারভাবে ফেলে দিতে। খেয়ে ফেলা বোঝা যায়, খাব যখন নিঃশেষ করেই খাব, চেটেপুটে নিঃশেষ করে দেব, চিহ্নটি যেন না থাকে, সার্থক হবে বুভুক্ষা। কিন্তু দিয়ে ফেলা? সেটাও না হয় বুঝলাম, দেওয়া মানেই ফেলা, ফেলে দেওয়া, যদি ফেলে দিতে না চাও তবে রেখে দাও, দেওয়া ও ফেলা সমান কাজ বটে। কিন্তু নিয়ে ফেলার ব্যাখ্যা কি? নিলামই যদি, তবে ফেলব কেন? বলে ফেলার অর্থ কি? বলা মানেই কি ফেলে দেওয়া? করে ফেলা? ধরে ফেলা? এনে ফেলার অর্থ অবশ্য বুঝতে পারি- আনো, নিয়ে এসো, এনে নিজের গোলায় ফেল, ভরে ফেল আঙিনা। মেরে ফেলাও ঠিক আছে, ওই মারা সে মারা নয়, শেষ মারা যে; কিন্তু হেসে ফেলা? হাসিতে আবার ফেলবার কি আছে? ফেল না কিসে?
আমাদের ক্ষুধা আছে, আমরা সবকিছু খাব, ভাত, হাওয়া, চুমু, পানি, সিগারেট সমস্ত কিছুই খাই আমরা- এ বৈশিষ্ট্য বিদেশীদের নাড়া দিয়েছে, চোখ বড় করে তারা জিজ্ঞাসু হয়েছে; তারপরে অবশ্য মাথা নেড়েছে তারা, যেন বুঝে ফেলেছে রহস্য আমাদের- ধরে ফেলেছে সেই আদিম দারিদ্র্য আমাদের যার জন্য সব সময়ে ওই খাই খাই আমাদের, বাছবিচার করি না, যাই পাই তাই খাই, ভক্ষণ করি। কিন্তু ফেলার রহস্যটা কি? দেখতে পাচ্ছি ওই ওপরের বাক্যেই আমি একবার নয়, দু’বার ফেলেছি- বুঝে ফেলার কথা বলেছি, বলেছি ধরে ফেলার কথাও। ব্যাখ্যা হয়তো এই যে; আমরা সবকিছুই ফেলে দিতে চাই, থুতু, জঞ্জাল, কথা, কাজ, বোধ-বুদ্ধি কিছুই বাদ থাকে না ফেলে দেওয়ার লম্বা হাত থেকে। বড় নির্দয়, হৃদয়হীন, দয়া নেই, মায়াও নেই। ফেল, ফেলে দাও। না ফেললে বাঁচব কি করে? না ফেললে বাঁচা নেই, ওঠার তো কথাই ওঠে না। কিন্তু ফেলব কোথায়? সেই একটা সমস্যা। ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত স্থান পাওয়া ভার হয়, যে জন্য আঁস্তাকুড় গড়ে ওঠে চতুর্দিকে। দুর্গন্ধ ছড়ায়। সমাজ হয়ে ওঠে বসবাসের অযোগ্য।
তবে কেবল ফেলি না তো, রাখিও। দু’য়েকটা ফেলা আবার রাখার মতোই। ‘ফালাইয়া থো’- বলি যখন বাঙাল ভাষায়, তখন রাইখ্যা দের সঙ্গে তার তফাৎ থাকে না। কিন্তু না, অনেক রকম রাখা আছে বৈকি। আমরা ধরে রাখি, বলে রাখি, করে রাখি, জেনে রাখি। মনে রাখা-রাখি আছে আমাদের। তুলে রাখি, ফেলেও রাখি এবং দাবিয়ে রাখি পরস্পরকে। জমা রাখা, শুনে রাখা, লিখে রাখা, মান রাখা, মন রাখা-এসব রয়েছে। মোটকথা ভারি একটা রক্ষণশীলতা যে রয়েছে তা অস্বীকার করবার কোনো উপায় নেই। কেবল একটা জিনিস রাখার ভয়ংকর অভাব দেখা যায়, কথা রাখা এবং প্রাণ রাখাও কঠিন বৈকি। হয়তো বা ওখান থেকেই উদ্ভব সমস্ত ব্যাপারটার- প্রাণ রাখার ওই দুরূহতা থেকেই। আর রাখার জন্যই তো ফেলা, রাখার স্বার্থেই ফেলে দেওয়া।
বলতে দ্বিধা নেই যে, বড় কষ্টে প্রাণ রাখি। আত্মসমর্পণ করতে হয় নানান ক্ষেত্রে, দেখা যায় সেই বাঁচে, যে আপস করে, বিদ্রোহীদের বাঁচোয়া নেই। আমাদের ভাষাতেই তো রয়েছে প্রবাদ- ঘৃণা, লজ্জা, ভয় তিন থাকতে নয়। এই তিন থাকতে সিদ্ধি নেই, বাঁচাও নেই। ঘৃণাহীন মহাপুরুষ হতে হবে, লজ্জাবিহীন এবং নির্ভয়। একেবারে দিগম্বর।
পতনের ধ্বনি কি শুনতে পান না? কেবল বই পড়াই যা একটু ভিন্ন রকম, নইলে অসংখ্য পতন আমাদের। শুয়ে পড়া বুঝলাম, ঘুমিয়ে পড়া আরো স্পষ্ট এই জন্য যে, খাট ছোট, গড়িয়ে পড়ার ভয় থাকে। কিন্তু উঠে পড়া? উঠলেনই যদি তবে আবার পড়বেন কেন? দাঁড়িয়ে পড়ার মধ্যে কি আছে? পতনের ভয়? ঝুলে পড়া? প্রেমে পড়াতেও কি তাই? বৃষ্টি পড়বে সেটা স্বাভাবিক; আকাল, শীত, গরম, এদের পড়াও মেনে নিতে পারি, একবারে গায়ের ওপর এসে পড়ে যে, খুবই গায়ে-পড়া ভাব ওদের; চুল, পাতা, মায়া, এরাও পড়ুক; পায়ে পড়তে থাকুক, কিন্তু কেটে পড়া অথবা এসে পড়া, কিংবা লেগে পড়া? বোঝা যাচ্ছে যে ভয়টা বড় গভীরে ঢুকে বসে আছে, পতনের ভয়। জীবন এখানে অনিশ্চিত, শত্র“ চতুর্দিকে, পতন ঘটতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। ওই পতনের ভয় থেকেই বুঝি সংরক্ষণে আগ্রহ এবং নিক্ষেপে উৎসাহ। একই সূত্রে গ্রথিত সবাই। জীবন ওপরে ওঠে না, বিচ্ছিন্নতা ঘোচে না, নেত্রীরা এক হন না, দলগুলো ভেঙে যায়, অসম্ভব হয়ে পড়ে যৌথ কর্ম। সত্য হয়ে থাকে ভক্ষণ। রক্ষকরা ভক্ষক হয়- দেখা গেছে চিরকাল এ দেশে। আমরাও ভক্ষক প্রত্যেকে, কিংবা ভুক্ত।
খোদা না করুন, আমরা চলে গেলেও আমাদের ভাষা তার এই সমস্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকবে এবং জানিয়ে দেবে ভবিষ্যতের মানুষকে- আমরা কারা ছিলাম, কেমন ছিলাম। মার্কসবাদের একজন সমালোচক সেদিন আমাকে বলেছিলেন, বেচারা মার্কস, সত্যকে ধরবেন কি করে, জন্মছিলেন দেড়শ বছর আগে যখন জেনেটিকসের জ্ঞান এখনকার মতো বিকশিত হয়ে ওঠেনি। তাই পরিবেশ ও আবেষ্টনী বুঝলেন বটে, কিন্তু বংশানুক্রমের ব্যাপারটা বুঝলেন না। আমি বলি ভাগ্যিস বোঝেননি তাই কিছু আশার কথা শোনাতে পেরেছেন এবং তার পথ ধরে কোথাও কোথাও বিপ্লবও ঘটে গেছে, নইলে বংশানুক্রমের ক্রীতদাস হয়ে থাকতে হতো এবং ওই যে আমাদের আত্মরক্ষার জন্য অন্য সবাইকে ফেলে দেওয়া, পতন ঘটানো তার এবং ভক্ষণের আওয়াজ ভিন্ন কিছু পাওয়া যেত না। কোনো আশাও থাকত না। সেটা সহ্য করা কঠিন হতো বৈকি। আশা চলে গেলে থাকে কি? অনেকে বলেন, আমাদের চরিত্র খারাপ, আমরা ভোগলিপ্সু এবং কর্মবিমুখ। ভোগলিপ্সা অসত্য নয়, ভক্ষণ রয়েছে, তবে আমাদের তুলনায় অনেক বেশি খায় এমন লোকের বিপুল সমাবেশ পৃথিবীর যেখানে-সেখানে পাবেন এই চরিত্রবাদীরা, যদি দেখতে চান। কর্মবিমুখতা মোটেই সত্য নয়। লোকে কাজ করে, তবে কাজের মূল্য পায় না। সে জন্য ডবল ডবল কাজ আমাদের, আমরা উঠে পড়ে লাগি, দৌড়ে দৌড়ে চলি, ছুটতে ছুটতে আসি, ঘামাতে ঘামাতে সিক্ত হই, ঘুরে ঘুরে দেখি, হেসে হেসে কথা বলি, পড়ে পড়ে ঘুমাই, জেগে জেগে শুনি। একেবারে কুলায় না, দুবার করি। তারপরেও বলা হয়, কাজ করি না। কাজ করি ঠিকই। কিন্তু কাজ তার মূল্য পায় না। কেননা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে অকাজের লোকেরা।

No comments

Powered by Blogger.