১৯টি ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো চলছেই

(বরগুনার আমতলী উপজেলার ছুরিকাটা এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাম চিমনির একটি ইটভাটা। এটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো) বরগুনার আমতলী উপজেলার ১৯টি ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির কাজ চলছেই। পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েকটি ভাটায় অভিযান চালালেও ফল মেলেনি। ইটভাটার মালিকেরা জরিমানা দিয়ে আবারও কাঠ পোড়াচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯টি ইটভাটার নয়টি অবৈধ ড্রাম ও স্থায়ী চিমনি এবং বাকি ১০টি জিগজ্যাগ পদ্ধতির। জিগজ্যাগ পদ্ধতির ভাটায়ও কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর এগুলোর বেশির ভাগই সংগ্রহ করা হচ্ছে সংরক্ষিত টেংরাগিরি বন ও সামাজিক বনায়নের বাগানের গাছ থেকে। ইটভাটার কয়েকজন শ্রমিক জানান, প্রতিটি ভাটায় দৈনিক ৩৫০ থেকে ৪০০ মণ জ্বালানি কাঠ প্রয়োজন। ৩৫০ মণ হিসাবে একেকটি ভাটায় মাসে কাঠ ব্যবহার হয় ১০ হাজার ৫০০ মণ। সে হিসাবে ওই ১৯টি ভাটায় প্রতি মাসে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ মণ কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩-এর ৬ ধারা অনুযায়ী ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো এবং ৮ ধারা অনুযায়ী লোকালয়ে ও কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন দণ্ডনীয় অপরাধ।
আমতলী উপজেলার ছুরিকাটা গ্রামে দেখা যায়, সেখানে এআরবি নামের একটি ইটভাটায় ড্রাম চিমনি স্থাপন করে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার চারপাশে ইট পোড়ানোর জন্য কয়েক শ মণ কাঠ স্তূপ করে রাখা। ভাটার মালিক মামুন তালুকদার বলেন, ‘ড্রাম-চিমনি শুধু আমি একা নই, সবাই ব্যবহার করে। এ জন্য কিছুদিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সব ড্রাম-চিমনির ইটভাটায় ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। আমাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে, আমি সে টাকা জমা দিয়ে দিয়েছি।’
কুতুবপুর গ্রামে প্রায় সাত একর জমির ওপর আরএফএমএস ব্রিকস নামে একটি ইটভাটায় ড্রাম-চিমনি বসিয়ে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এসব কাঠ ভাটার পাশে স্থাপিত করাতকলে চেরাই করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
নাচনাপাড়া আরএবি ও মহিষডাঙ্গার এমসিকে ব্রিকস নামের দুটি ভাটায়ও একই কাজ হচ্ছে। একই উপজেলার তালুকদার বাজার এলাকায় এইচআরটি ব্রিকস নামের আরেকটি ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে দেখা গেছে। এই এলাকার মধ্য চন্দ্রা এলাকায় হোসেন আহম্মেদের মালিকানাধীন এইচবিএম ব্রিকস নামের ভাটায় একই পদ্ধতিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে।
মহিষডাঙ্গায় এমসিকে ব্রিকস নামের ভাটার পাশে করাতকল বসিয়ে কাঠ চেরাই করে তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাটার মালিক সোবাহান কাজী পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ইটভাটা চালানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জিগজ্যাগ চিমনি করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন বলে করতে পারছি না।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের পরিচালক সুকুমার চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমতলীর বিভিন্ন ইটভাটা পরিদর্শন করে অনুমোদনহীন ইটভাটাগুলোয় জরিমানা করেছি এবং ড্রাম-চিমনি ভেঙে দিয়েছি। সেখান থেকে চলে আসার পরই আবার সেগুলো চালু হয়ে যায়। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক দল সব সময়ই মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও জানান, জেলার সব ইটভাটার নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসকের। জেলা প্রশাসক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিলে তাঁরা তা করবেন। জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম জানান, অবিলম্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.