মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি সম্পদ : আগ্রাসন বনাম বিশ্বশান্তি by ড. মো: রফিকুল ইসলাম

সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বলেছেন, বিশ^শান্তি ও সমৃদ্ধির ভিত্তি হলো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা। তিনি মূলত এ কথা বোঝাতে চেয়েছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল থাকা মানেই বিশে^ শান্তির পরিবেশ বিরাজ করা। আর মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিকভাবে অশান্ত থাকা মানেই সারা দুনিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়া। প্রকৃত ঘটনা হলো আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ তো বটেই মানবজাতির ইতিহাসে সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব অসাধারণ। কারণ পৃথিবীপৃষ্ঠে মানবজাতির সর্বপ্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের পবিত্র ভূমি তথা পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু পবিত্র মক্কা নগরী থেকে। দুনিয়ার সর্বপ্রথম মানব-মানবী যথাক্রমে হজরত আদম আ: ও হজরত হাওয়া আ:। তাদের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পার্থিব জীবনোপকরণ যেমনÑ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও জ্বালানি এখান থেকেই সংগ্রহ করেছিলেন। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় আদম আ:-এর সন্তানের সংখ্যা প্রায় ৭৩০ কোটি। আদম আ:-এর সন্তানেরা জীবিকার তাগিদে সারা দুনিয়ার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লেও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি সব আদম আ:-এর সন্তানের রয়েছে অদৃশ্য এক নাড়ির টান, যা সচেতন মনে কিংবা অবচেতন মনে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। মনে হয় স্র্রষ্টা যেন সৃষ্টিগতভাবেই মধ্যপ্রাচ্যকে সব মানুষের জন্য একটি প্রয়োজনীয় জ্বালানি ভাণ্ডার হিসেবে নির্ধারিত করে রেখেছেন।
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে (১৭৬০-১৮৪০) ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিশে^র প্রতিটি শিল্পোন্নত দেশকেই মধ্যপ্রাচ্যে জ্বালানি ভাণ্ডারের ওপর সরাসরি নির্ভর করতে হয়েছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাপানের কথা। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগের প্রধান কারণ হলো দেশটির প্রয়োজনীয় মোট জ্বালানির শতকরা ১৭ ভাগ পূরণ করতে হয় ক্রুড পেট্রোলিয়াম দ্বারা। আর এ ক্রুড পেট্রোলিয়ামের শতকরা ১৫ ভাগ সৌদি আরব থেকে, ৫.৬ ভাগ সংযুক্ত আরব আমিরাত, ৪.৩ ভাগ ইরাক, ৮ ভাগ কুয়েত, ৩.৫ ভাগ ইরান, ৩.৩ ভাগ লিবিয়া, ৩ ভাগ কাতার এবং ১.৬ ভাগ ওমান থেকে আমদানি করতে হয়। সুতরাং জাপানের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা জাপান তথা সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য কেন অপরিহার্য তা সহজেই বোঝা যায়। একটি হিসাব মতে, ২০১১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১০০টি দেশে আবিষ্কৃত তেলক্ষেত্রগুলোতে মোট মজুদের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৫২৬ মিলিয়ন ব্যারেল। শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই রয়েছে সারা বিশ্বে আবিষ্কৃত মোট মজুদ তেলের দুই-তৃতীয়াংশ তেল। বিশ্বের শীর্ষ যে ১০টি দেশে খনিজ তেলের সর্বোচ্চ মজুদ রয়েছে সেগুলো হলো, যথাক্রমেÑ (১) ভেনিজুয়েলা (মোট ২৯৭.৭৪ বিলিয়ন ব্যারেল-বিবি), (২) সৌদি আরব (২৬৮.৩৫ বিবি), (৩) কানাডা (১৭৩.৬৩ থেকে ১৭৫.২০ বিবি), (৪) ইরান (১৫৭.৩০ বিবি), (৫) ইরাক (১৪০.৩০ বিবি), (৬) কুয়েত (১০৪.০০ বিবি), (৭) সংযুক্ত আরব আমিরাত (৯৭.৮ বিবি), (৮) রাশিয়া (৮০ বিবি), (৯) লিবিয়া (৪৮.০১ বিবি) এবং (১০) নাইজেরিয়া (৩৭.২ বিবি)। উত্তর সাগরে মজুদ রয়েছে ৪.৯ বিলিয়ন ব্যারেল এবং সম্প্রতি ব্রাজিলের একটি নতুন আবিষ্কৃত তেলক্ষেত্রে মজুদের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে ৫-৮ বিলিয়ন ব্যারেল।
সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যাসের মোট মজুদের পরিমাণ হলো ১,৮৭,৩০০ বিলিয়ন ঘনমিটার। বিশ্বের শীর্ষ যে ১০টি দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল মজুদ রয়েছে সেসব দেশ হলো, যথাক্রমে- (১) রাশিয়া (৪৮,৭০০ বিলিয়ন ঘনমিটার), (২) ইরান (৩৩,৬০০ বিলিয়ন ঘনমিটার), (৩) কাতার (২৫,১০০ বিলিয়ন ঘনমিটার), (৪) তুর্কমেনিস্তান (১৭,৫০০ বিলিয়ন ঘনমিটার) (৫) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৯,৪৬০ বিলিয়ন ঘনমিটার) (৬) সৌদি আরব (৮,২০০ বিলিয়ন ঘনমিটার), (৭) ইরাক (৬,৪০০ বিলিয়ন ঘনমিটার), (৮) ভেনিজুয়েলা (৫,৫২৪ বিলিয়ন ঘনমিটার), (৯) নাইজেরিয়া (৫,২৪৬ বিলিয়ন ঘনমিটার), (১০) আলজেরিয়া (৪,৫০২ বিলিয়ন ঘনমিটার)। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, জ্বালানি ভাণ্ডার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অসাধারণ।
আর এ কারণেই ওপরে উল্লিখিত তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য ও তার আশপাশের সব মুসলিম দেশেই যেকোনোভাবেই হোক না কেন সঙ্ঘাত সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। কারণ জ্বালানি শক্তির অপর নাম বিশ্বশক্তি। বিশ্বে সমৃদ্ধ জাতি হতে হলে জ্বালানি নিরাপত্তার বিকল্প নেই। মধ্যপ্রাচ্যে চরম অশান্তির মূল কারণ হলো খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস, যার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই মূলত ইরাক, ইরান-ইরাক ও আফগান যুদ্ধ। লিবিয়া ও মিসরে সরকারব্যবস্থার পরিবর্তন, মধ্য এশিয়ার কাস্পিয়ান অঞ্চলে চলমান অস্থিরতা এসব কিছুর পেছনে আসলে জ্বালানি সম্পদের নিরাপদ সরবরাহের বিষয়টি সরাসরি জড়িত। খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস এমনই মহামূল্যবান সম্পদ যে, এগুলো হাতের মুঠোয় কব্জা করে রাখার জন্য বিশ্বের পরাশক্তিগুলো সব সময় পাগলপ্রায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ১৯৪৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব সফরে এসে বাদশা আবদুল আজিজের সাথে তেলের বিনিময়ে নিরাপত্তা সম্পর্ক স্থাপন (Oil for protection relationship) করে দেশটির তেলসম্পদ কব্জা করে নেয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ছক অঙ্কন করেন, যা আজো চালু আছে। ১৯৭০ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের একটি ঐতিহাসিক উক্তি এখানে সহজ সরল ভাষায় তুলে ধরা হলো। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি বিশ্বের তেলসম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে দুনিয়ার সব জাতির কর্তৃত্ব হাতের মুঠোয় চলে আসবে; আর যদি বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে হস্তগত করা যায়, তাহলে দুনিয়ার মানুষগুলো পদানত হয়ে থাকবে।’ (If you control oil, you control nations, and if you control food you control people. (Henry Kissinger-1970). ১৯৮০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যপ্রাচ্য নীতি (যা ‘কার্টার ডকট্রিন’ নামে পরিচিত), সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক আফগানিস্তান দখল এগুলো সবই মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রগুলোর দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করেই। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কর্তৃক ১৯৯১ সালে কুয়েত দখল নাটককে কেন্দ্র করে উপসাগরে মার্কিন বাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন, ট্রান্স-আফগান পাইপলাইনের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার কাস্পিয়ান সাগর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কে টুইন টাওয়ার বিধ্বংসী নাটকের অব্যবহিত পরেই মার্কিন নেতৃতাধীন বহুজাতিক বাহিনী কর্তৃক আফগানিস্তানে হামলা, ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা এবং তেলক্ষেত্রগুলোতে দখলদারিত্ব কায়েম ইত্যাদি সব ঘটনা থেকে অনবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর দখলদারিত্বের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, পশ্চিমা দেশগুলো সব সময় বিশ্ব জ্বালানি ভাণ্ডার বলে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদ ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রগুলো দখল করার জন্য দীর্ঘকালব্যাপী জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আর দখলদারিত্বই যেখানে লক্ষ্য শান্তি সেখানে সুদূর পরাহত।
২০০৩ সালে ইরাক দখলের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রবাহিনী কর্তৃক ১০ বছরের অধিক সময়ব্যাপী সমগ্র ইরাকের মাটিতে অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়নে প্রায় ১০ লাখের অধিক মানুষ নিহত হয়েছে। ২০০৩ সালে সামরিক শক্তির বলে জোরপূর্বক ইরাক দখলের প্রাক্কালে পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কিছু বিবেকবান মানুষ এহেন ন্যক্কারজনক দখলদারিত্বের জন্য মৌখিকভাবে প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করলেও বুশ-টনি শাসকেরা সাধারণ জনগণের দাবির থোড়াই কেয়ার করে। তবে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু বিবেকবান মানুষের মধ্যে এ রকম ধারণা ছিল যে, আশির দশকের শুরুতে যেমন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের দেশটি আফগানিস্তানে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে সাম্রাজ্যবাদী কমিউনিস্ট মতাদর্শ চালু করতে গিয়ে আট বছরব্যাপী যুদ্ধের পর প্রথমে আর্থিকভাবে ধরাশায়ী হওয়া, এরপর রণে কান্ত হয়ে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ১৫টি দেশ বা অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে গেছে, ঠিক তেমনিভাবে ইরাকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালাতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো ভাগ্যবরণ করতে হয় কি-না। ইরাক ও আফগান সেক্টরে একসাথে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালাতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক বিভক্তির সম্মুখীন হয়নি বটে, তবে মার্কিন অর্থনীতিতে ইতোমধ্যেই যে অপূরণীয় ধস নেমে এসেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় দেশটির বড় বড় ব্যাংক, বীমা কোম্পানিসহ ডেট্রয়েটের মতো শহর দেউলিয়া ঘোষণা করার আবেদনসহ লাখ লাখ মানুষের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি ও চাকরিচ্যুতির ঘোষণা থেকে। ইরাক ও আফগান যুদ্ধে চরম মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত, মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ও পঙ্গু হাজার হাজার মার্কিন সৈন্যের পারিবারিক ভরণপোষণের জন্য মার্কিন সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ঘানি টানতে হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একার পক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে আগ্রাসন চালিয়ে আর টিকে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাথে ন্যাটো বাহিনীকে ব্যবহার করেও আফগানিস্তানে টিকে থাকা সম্ভব হলো না। ইরাক ও আফগান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির মতো অবস্থা। কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো ইরাক ও আফগান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীর লজ্জাজনক প্রস্থানের পর পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কারা আসছে ওই দু’টি দেশসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রক্ষমতায়। এ ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বের চিন্তাশীল ব্যক্তিরা খুবই উদ্বিঘ্ন।
পরিশেষে বলতে হয়, বিশ^শান্তি বলতে মূলত যা বোঝায় তা হলো- দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত সব দেশ, সমাজ, গোত্র ও প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি মানুষ যখন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, মানবাধিকার, চিকিৎসা ও শিক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার পাশাপাশি ভয়াবহ মানবতাবিরোধী যুদ্ধের ঝুঁকিবিহীন একটি পরিচ্ছন্ন জীবন অতিবাহিত করার গ্যারান্টি পাবে। আর এ ধরনের জীবনব্যবস্থা মানুষ যখনই অতিবাহিত করতে পারবে তখনই বিশ^ময় শান্তি বিরাজ করছে বলে মনে করতে হবে। কিন্তু অবৈধ দখলদারিত্ব মনোভাবের কারণে বাস্তবে এ ধরনের শান্তির মুখ দুনিয়াবাসী খুব কমই দেখেছে। এ কথাটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হওয়া মানেই বিশ^ব্যাপী প্রশান্তিকর পরিবেশ পরিস্থিতি বিরাজ করা। পক্ষান্তরে মধ্যপ্রাচ্য অগ্নিগর্ভ হওয়া মানেই সে উত্তাপ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত সব দেশ, জাতি, সমাজ, গোত্র ও প্রতিটি পরিবারে ছড়িয়ে পড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি ভাণ্ডার দখলের নিমিত্তে অনুগত শাসক গোষ্ঠীকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ক্ষমতায় বসানোর পাশাপাশি পশ্চিমা সাম্র্রাজ্যবাদবিরোধী জনতার ওপর চলমান জুলুম নিপীড়নই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও বিশ^শান্তির অন্তরায়। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের প্রাণান্তকর অপচেষ্টাই মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সঙ্কটের ও অশান্তির মূল কারণ। মধ্যপ্রাচ্যকে বলা হয় পৃথিবীর হৃদয় (Heart)। কোনো মানুষ যদি হার্টের রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তাকে বাঁচানোর জন্য তার স্বজনেরা যেভাবে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে থাকেন, ঠিক সেভাবে বিশে^র শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলোর লুণ্ঠনের বেড়াজালে আবদ্ধ ও হার্টের রোগীসদৃশ মধ্যপ্রাচ্যকে বাঁচাতে হলে বিশে^র সচেতন মানুষগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সুতরাং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবেসহ পশ্চিমা বিশে^র সব নেতাকে এ কথা বুঝতে হবে যে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও বিশ^শান্তির জন্য প্রথমে জ্বালানি সম্পদ দখলের আগ্রাসী মনোভাব পরিহার করতে হবে।
লেখক : বিজ্ঞানী ও শিক্ষক, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট

No comments

Powered by Blogger.