নির্বাচন নিয়ে অবস্থান বদলায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন : রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অবস্থান বদলায়নি। ঢাকায় ইইউ’র নতুন রাষ্ট্রদূত মাইয়ুদ পিয়ার বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ইইউ’র পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক হাই রিপ্রেসেন্টেটিভ (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ক্যাথরিন অ্যাসটনের দেয়া বিবৃতিটিই আমাদের অবস্থান। এতে অ্যাসটন সহিংসতা থেকে বিরত থেকে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপায় খুজে বের করতে সব দলকে প্রকৃত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।

মাইয়ুদ মধ্য সেপ্টেম্বরে ঢাকা এসে গত ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের কাছে পরিচয় পত্র পেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ছিল তার পরিচিতিমূলক সংবাদ সম্মেলন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ড রহিত করতে ইইউ কেন আহ্বান জানিয়েছে - প্রশ্ন করা হলে মাইয়ুদ বলেন, মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ইইউ’র অবস্থান একই। ইইউ সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে মৃত্যুদন্ডের বিধানের বিলুপ্তি চায়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও যখন কারো মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয় সেদেশে নিযুক্ত ইইউ’র রাষ্ট্রদূত তা স্থগিত করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। তাই নিজামীর মৃত্যুদন্ড রহিত করার আহ্বানকে কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিরুদ্ধে অবস্থান হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না।
ইইউ কেবল নিজামীর মৃত্যুদন্ড রহিত করার আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে অন্য কারো একই সাজা হলে চুপ থেকেছে। এটা কি যুদ্ধাপরাধের পক্ষে অবস্থান নয় - জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ কোনো অপরাধ, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের পক্ষে নয়। দয়া করে এ ধরনের অপপ্রচার চালাবেন না। আমরা শুধু চাই বিচারের ক্ষেত্রে আইসিটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করুক। আর কারো মৃত্যুদন্ড ঘোষণা হওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই ইইউ এর বিরোধীতা করে বিবৃতি দেয়।
সূচনা বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে ইইউর বাজারে ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু’ (ইবিএ) পদ্ধতির আওতায় শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে পারে। স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে এ ধরনের অর্জন সফলতার চমৎকার দৃষ্টান্ত হিসাবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে। তবে আইনগত দিকটি হল এর ফলে বাংলাদেশ ইবিএর সুবিধা হারাবে। এর বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাসের জন্য আবেদন করতে হবে। জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে কঠোর কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এজন্য মানবাধিকার, শ্রম আইন, পরিবেশ ও সুশাসন বিষয়ক ২৭টি আন্তর্জাতিক সনদ সই, অনুস্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ২০২১ খুব বেশী দূরের সময় না হওয়ায় এখনই এ ব্যাপারে কাজ শুরু করা প্রয়োজন।
মাইয়ুদ বলেন, ইইউর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেবল সরকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ সক্রিয় নাগরিক সমাজ ও শক্তিশালী বেসরকারি খাত দ্বারা আশীর্বাদপুষ্ট। বাংলাদেশের হাজারো এনজিওর মধ্যে ব্র্যাক ও গ্রামীণের মত প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের খ্যাতি দেশের সীমানার বাইরে ছড়িয়ে পরেছে। তারা বাংলাদেশের গর্র্ব। বাংলাদেশের জনগন ও সরকারের জন্য এনজিওগুলো একটি সম্পদ যারা এদেশের টেকসই উন্নয়নের অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার মত মাইয়ুদ বাংলাদেশের সবকটি জেলা ঘুরে দেখবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কারো সাথে আমি প্রতিযোগিতা করব না। তবে ইইউর অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে জানতে এবং জনগনের কথা শুনতে যতটা সম্ভব বাংলাদেশ ঘুরে দেখব।

No comments

Powered by Blogger.