কারফিউর মধ্যেই খণ্ডযুদ্ধ কাশ্মীরে

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলায় গতকালও কারফিউ
ভেঙে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় বিভিন্ন
স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। ছবিটি
গতকাল রাজধানী শ্রীনগর থেকে তোলা। এএফপি
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকা গতকাল রোববারও থমথমে ছিল। কারফিউ সত্ত্বেও সেখানকার বিভিন্ন জেলায় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ অব্যাহত। নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা গতকাল বিকেল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। তাঁদের মধ্যে এক পুলিশ কর্মীও রয়েছেন। তাঁকে গাড়িসহ খরস্রোতা ঝিলম নদে ফেলে দেওয়া হয়। গত দুদিনের হিংসাত্মক ঘটনায় আহত ব্যক্তির সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শতাধিক নিরাপত্তারক্ষী। তিনজন পুলিশ কর্মী তাঁদের অস্ত্রসহ নিখোঁজ হয়ে যান। গতকাল তাঁদের মধ্যে দুজন ফিরে এসেছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি গত শুক্রবার নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হওয়ার পর শনিবার থেকে উপত্যকার দক্ষিণের জেলাগুলোতে অশান্তি শুরু হয়।
বুরহানের দাফনে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেয়। বিভিন্ন স্থানে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে শুরু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর খণ্ডযুদ্ধ। সবচেয়ে বেশি উপদ্রুত অনন্তনাগ, পুলুয়ামা, সোপোর ও কুলগাম জেলা। এসব জেলায় কয়েকটি থানাও আক্রান্ত হয়। লুট হয় অস্ত্র। পুলিশের গুলিতে শনিবারই মারা যান ১১ জন। অশান্ত অবস্থা থাকে গতকাল পর্যন্তও। শাসক দল পিডিপি ও বিজেপির কয়েকটি অফিস আক্রান্ত হয়। দেদার পাথর ছোড়া হয় পুলিশকে তাক করে। পুলিশের গাড়িতেও আগুন লাগানো হয়। গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং দিল্লিতে তাঁর বাসভবনে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকেন। শনিবারই নিরাপত্তা বাহিনীর দেড় হাজার বাড়তি সদস্য উপত্যকায় পাঠানো হয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মনে করে, উপত্যকায় পাকিস্তানি এজেন্টরা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলতে যাবতীয় ইন্ধন জোগাচ্ছে। গতকালের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কোনোভাবেই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার সব রকম চেষ্টা করা হবে। গুলি চালানো হবে একেবারে উপায় না থাকলে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নিহত বুরহান সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের নেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে হা-হুতাশ করার কোনো কারণই নেই। সমবেদনাও নেই। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবারই গোটা উপত্যকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গতকাল পর্যন্ত তা বন্ধই ছিল। বন্ধ ছিল জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক ও উপত্যকার রেল, উপত্যকার সব স্কুল-কলেজ। বিভিন্ন পরীক্ষাও স্থগিত রাখা হয়েছে। শ্রীনগরে তেমন কোনো হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটলেও শহরের পুরোনো এলাকাগুলোতে উত্তেজনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পর্যটকেরা আটকে পড়েছেন। আশা করা হচ্ছে, আজ সোমবার থেকে জাতীয় সড়ক খুলে দেওয়া হলে সড়ক পথেও পর্যটকেরা জম্মু ফিরে যেতে পারবেন। উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা হরতালের যে ডাক দিয়েছিলেন, তা সোমবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে দোকানপাটসহ অফিস-আদালত ওই দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, মীরওয়াইজ ওমর ফারুক ও ইয়াসিন মালিককে শনিবার থেকেই গৃহবন্দী রাখা হয়। রাজ্য প্রশাসন ঠিক করেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত তাঁদের নজরবন্দী রাখা হবে। এই সময়ে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা অমরনাথ যাত্রা করে থাকেন। দীর্ঘ এই যাত্রাপথে তীর্থযাত্রীদের নির্ভর করতে হয় কাশ্মীরি মুসলমানদের ওপর। শনিবার এই যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হয় নিরাপত্তার স্বার্থে। গতকাল অবশ্য যাত্রা ফের শুরু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.