তবুও স্বস্তির জয় by ইশতিয়াক পারভেজ

মাত্র ১০১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৭ উইকেট নেই। শেষ পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতে ৩ উইকেটের জয়। ১৬ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে পাওয়া এ জয়ে যতটা আনন্দ ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল স্বস্তি। সুখ দিতে পারেনি এ জয়। বেদনার কারণ দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। দেশের মাটিতে ১০ বছর পর টেস্ট জেতা। তাও আবার তিনদিনে। এর আগে ২০০৫ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই বাংলাদেশের প্রথম জয়টি এসেছিল চট্টগ্রামে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। এরপর বাংলাদেশ আরও তিনবার জিতেছে তবে সেগুলো ছিল দেশের বাইরে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২ বার আর ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে একবার। এটি নিয়ে টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের তৃতীয় টেস্ট জয়। এখন সিরিজের বাকি দু’টি ম্যাচ জিততে পারলে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ যোগ হবে। শুধু তাই নয়, এই জয়ে আনন্দ খুঁজে নেয়া যেতে পারে তাইজুলের দুর্দান্ত বোলিং শেষে ৮ম উইকেট জুটিতে লড়াকু ব্যাটিং আর চার হাঁকিয়ে দলকে জেতানো। তাইজুলও ভীষণ আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘৮ উইকেটের চেয়ে জয়টাই বেশি ভাল লেগেছে।’

>> জয় শেষে তৃপ্তির হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও তাইজুল ইসলাম
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন ছিল বোলার সাকিব আল হাসানের। একাই ৬টি উইকেট নিয়ে ২৪০ রানেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে। দ্বিতীয় দিনে ওপেনারদের ব্যর্থতার পর মুমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ আর মুশফিকুর রহীমের ফিফটিতে শেষ পর্যন্ত ১৪ রানের লিড। গতকাল তৃতীয় দিনও ব্যাটিং ব্যর্থতার একই চিত্র। জিম্বাবুয়ে দলকে ১১৪ রানে গুটিয়ে দিয়েছিলেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ১৪ রানের লিডের সুবাদে বাংলাদেশের টার্গেট ছিল ১০১ রানের। হাতে বাকি ছিল আড়াই দিন। কিন্তু জবাব দিতে নেমে দলের স্কোর বোর্ডে কোন রান যোগ না হতেই তিন টপ অর্ডারের বিদায়। চাতারার শর্ট লেংথের বলটি আউট সুইং করে বাইরে যেতে যেতেই তামিম ইকবালের ব্যাটের কোনা ছুঁয়ে চিগুম্বুরার হাতে। আরেক ওপেনার শামসুর রহমান হলেন সরাসরি বোল্ড।  পানিয়াঙ্গারার বলটি ছেড়ে দিতে গিয়ে ব্যাট নামিয়েছিলেন ধীর গতিতে তার আগেই ব্যাট ছুঁয়ে বলটি স্টাম্পে আঘাত হানে। ওয়ান ডাউনের ভরসা হয়ে মুমিনুল ক্রিজে এসেছিলেন। কিন্তু চিগুম্বুরার বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফিরেন সাজঘরে। এরপর চতুর্থ উইকেটে সাকিব ও  মাহমুদুল্লাহ মিলে কিছু ধৈর্যের পরিচয় দিলে আসে স্বস্তির ৪৬ রানের জুটি। কিন্তু বিধিবাম সাকিব যেন হঠাৎই হয়ে উঠলেন ধৈর্যহারা।
২১ বলে ১৫ করে চাতারার বলে বাজে একটি শট খেললেন। বলটি নিচু হয়ে গেলেও নাইম্বু তা লুফে নেন। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও যেন একটু এলোমেলো হয়ে যান। জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে বল ব্যাট ছুঁয়ে স্টাম্পে আঘাত করে। ৬২ বলে ২৮ রান করে তিনিও ফিরে যান। শুভাগত হোমতো যেন পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন তিন টপ অর্ডারের। তৃতীয় বল মুখোমুখি হতেই ব্যাট চালালেন আনাড়িভাবে। ব্যাট ছুঁয়ে সেই বলটি ধরা পড়ে উইকেটের পিছনে কিপার চাকাভার হাতে। দলের জন্য ছোট হলেও বেশ ভাল ভূমিকা রেখেছেন পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীব। অধিনাায়ককে সঙ্গ দিতে এসে করেন ১৬ বলে ১১ রান। তবে আউট হওয়ার আগের বলটিতে তিনি ইনিংসের একমাত্র ছ’য়ের মারটি হাঁকিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। পরের বলেও একইভাবে ব্যাট চালাতে গিয়ে ধরা পড়েন স্লিপে। শেষ পর্যন্ত ২৩ রানে অপরাজিত থাকা অধিনায়কের ধৈর্যের সঙ্গে তাইজুলের দয়িত্বশীল ১৫ রানে জয় পায় বাংলাদেশ।
তবে জিম্বাবুয়ের ৭টি উইকেটই তুলে নিয়েছেন পেস বোলাররা। স্পিনাররা ছিল খরায়। তাহলে কি উইকেটে একটু বাউন্স থাকায় এই সুবিধা তুলে নিতে পেরেছেন  তারা? প্রশ্নটি এড়িয়ে গেলেন মুশফিক। তবে তিনি বলেন, ‘আসলে ওদের পেসাররা বেশ ভাল জায়গাতে বল করেছে। আর এক জায়গাতে বোলিং করলে উইকেট পাওয়া যায়। আর আমরা হয়েছি ধৈর্যহারা। আমাদের আরও ধৈর্য্য ধরে ব্যাট করতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.