উজানে বাঁধ দিয়ে গঙ্গাচুক্তি লঙ্ঘন করতে ভারতকে নিষেধ করেছে বাংলাদেশ by সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

গঙ্গার উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এসব বাঁধ নির্মাণ বা পানি প্রবাহ বন্ধে সব ধরনের প্রকল্প যে গঙ্গাচুক্তির লঙ্ঘন হবেÑ সে ব্যাপারে ভারতকে সতর্ক থাকতেও বলেছে বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গাচুক্তির ৯ ধারায় সুস্পষ্ট করে বলা আছে যে, ভারত গঙ্গাসহ সব অভিন্ন নদীর ওপর এমন কিছু করবে না যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গঙ্গার উজানে আরো ১৬টি বাঁধ নির্মাণের খবরটি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গাচুক্তির ৯ ধারা লঙ্ঘন না করতে বলেছে ভারতকে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, গঙ্গার উজানে আরো ১৬টি বাঁধ নির্মাণের খবরে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গঙ্গার উজানে এসব বাঁধ কী কারণে নির্মিত হতে যাচ্ছেÑ সে ব্যাপারে ভারতের কাছে তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতকে বলেছে, গঙ্গার উজানে তারা (ভারত) কী কী প্রকল্প নিচ্ছে সে ব্যাপারে জানার অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে। কারণ ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করতে পারে না ভারত। তবে ভারতের কাছে জবাব চেয়ে পাঠানো চিঠির তাৎক্ষণিক জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানান ড. জাফর আহমেদ খান। তিনি বলেন, এটির উত্তর পেতে একটু সময় লাগবে।
সম্প্রতি ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া গঙ্গার উজানে আরো ১৬টি বাঁধ নির্মাণের খবর প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এলাহাবাদ থেকে হলদিয়ার ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গা-হুগলির ওপর ১০০ কিলোমিটার অন্তর একটি করে বাঁধ দেবে। এসব ব্যারাজের মাধ্যমে ধরে রাখা পানি ভারত শুষ্ক মওসুমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কৃষি সেচ সুবিধা বিস্তারে ব্যবহার করবে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও উৎপাদিত হবে। তবে যেহেতু বর্তমানে ব্যারাজ নির্মাণ একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প, তাই ভারত ব্যারাজের জন্য ব্যয়ের অর্থ তুলে নিতে এ ক্ষেত্রে নৌপথের প্রকল্পও সংযুক্ত করেছে। উজানে ভারতের এ ধরনের নতুন প্রকল্প নেয়ার আগেই প্রায় চার শত ড্যাম ব্যারাজ নির্মাণ করে ফেলেছে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের অজুহাত তুলে ভারত গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বঞ্চিত করছে বাংলাদেশকে। গঙ্গাচুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি ভাগাভাগি কার্যক্রম শুরু হয়, চলে প্রতি বছরের মে’র ৩০ তারিখ পর্যন্ত।
গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ৩০ বছরমেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী ফারাক্কা পয়েন্টে ২০১১ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ৬৬ হাজার ২২৪ কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী ১০ কিস্তিতে ভারত এই পরিমাণ পানি কম দিয়েছে বাংলাদেশকে।  বাংলাদেশ ওই তিন মাস ১০ দিনে প্রতি কিস্তিতে গড়ে ছয় হাজার কিউসেক পানি কম পেয়েছে।
গঙ্গা চুক্তি শর্তের বিপরীতে ২০০৬ সালে চার মাসে বাংলাদেশ  এক লাখ ১৭ হাজার ৮৩৪ কিউসেক পানি কম পেয়েছিল। ওই বছর ফারাক্কায় বাংলাদেশ মার্চের শেষ ১০ দিনে সবচেয়ে পানি কম পেয়েছে। এটা ছিল স্মরণকালের সর্বনিম্ন প্রবাহ।
২০০৮ সালে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত চার কিস্তিতে বাংলাদেশকে ৩৮ হাজার ৭২ কিউসেক পানি কম দিয়েছে ভারত।
২০০৯ সালে দুই মাসে ফারাক্কা পয়েন্টে ৪১ হাজার ৫১৩ কিউসেক পানি কম দিয়েছিল ভারত।
তবে ২০০৭ সালে চুক্তি অনুযায়ী কয়েকটি কিস্তিতে বাংলাদেশ চুক্তির চেয়ে বেশি পানি পেয়েছে।
১৯৯৮ সালেও সব কিস্তিতে ইন্ডিকেটিভ শিডিউলের চেয়ে বাংলাদেশ পানি বেশি পেয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৩ সালে গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী পানি পেয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.