অর্থনীতিতে নারীর অবদান- বিপুল ভূমিকার প্রতিফলন নারীর জীবনেও ঘটুক

‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার সত্য যখন অর্থনীতির গবেষণায় প্রতিফলিত হয়, তখন বিস্মিত হতে হয় বৈকি!
সম্প্রতি উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একটি গবেষণা দেখাচ্ছে: দেশের মোট দেশজ জাতীয় উৎপাদনের কাছাকাছি নারীর অবদান! অথচ এখনো সমাজে ও রাষ্ট্রে নারীরাই সবচেয়ে বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এই সত্যের প্রতিফলন পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রে আসতে তাই আর কত দেরি পাঞ্জেরী!
দৈনন্দিন জীবনের দিকে তাকালেই সিপিডির গবেষণার বাস্তবতা স্পষ্ট হয়। পরিবার হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের একক। সেই পরিবারের প্রজনন, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যাসহ সংসার ও আবাসকে গতিশীল রাখার মূল কাজটি করেন নারী, যিনি কন্যা, জায়া অথবা জননী। পরিবার না চললে পরিবারের সদস্যদের কাজকর্ম ও জীবনযাপন অসম্ভব হতো। নারীর এই নীরব অবদানের অর্থমূল্য ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা; যা গত বছরের মোট জিডিপির ৭৮.৮ শতাংশ। এ গবেষণা থেকে এটাও প্রমাণ হয় যে, অর্থনীতি তথা সামগ্রিকভাবে সমাজে নারীর নীরব অবদানেক অন্তর্ভুক্ত করার মতো অর্থনৈতিক পদ্ধতির গুরুতর সংকট রয়েছে।
ঘরে ১০ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার কাজ করেন নারী গবেষণায় আরও দেখানো হয়েছে যে প্রতিদিন একজন নারী গড়ে একজন পুরুষের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সময় এমন কাজ করেন, যা জাতীয় আয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। সুতরাং অর্থ রোজগারের জোরে পুরুষ যে ক্ষমতা চর্চা করেন, তা কতটা যুক্তিসংগত? নারীর অবদান অস্বীকারের ওপরই তো পুরুষের এই শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভরশীল!
জাতীয় অর্থনীতিতে নারী সরাসরি যে শ্রম ও উদ্যোগ যুক্ত করেন, তার জন্য পোশাকশ্রমিক, খুদে নারী উদ্যোক্তাসহ অন্যরা অভিনন্দিত হন। কিন্তু সাংসারিক কাজের মাধ্যমে তাঁরা যে অবদান রাখেন, তার স্বীকৃতি ও প্রতিদানও প্রয়োজন। যুগ বদলাচ্ছে, নারীর অবস্থার উন্নতি ও পূর্ণ অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো দেশের পক্ষেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং অর্থনীতিতে, আইন কাঠামোয়, রাজনীতি ও অধিকারের ক্ষেত্রে নারীর অবদানের প্রতিদান থাকা উচিত। শিক্ষার মতোই একে সমাজ বিকাশের বিনিয়োগ ভাবা উচিত। এতে করে নারী-পুরুষের মিলিত সমাজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে বৈ কমবে না।

No comments

Powered by Blogger.