সংলাপ ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি

দিলমা রুসেফ
ব্রাজিলে গত রোববারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অল্পের ব্যবধানে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বামপন্থী দিলমা রুসেফ। জয়ী হওয়ার পরপরই তিনি দ্বিধাবিভক্ত ব্রাজিলীয়দের প্রতি ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন, হাতে নেবেন নানা সংস্কার কর্মসূচি। খবর এএফপি ও বিবিসির। বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট রুসেফ দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন ৫১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে প্রবৃদ্ধি ও বাজারবান্ধব হিসেবে পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এসিও নেভিস পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ ভোট। ৯৯ শতাংশেরও বেশি ব্যালট পেপার গণনা করার পর এই ফল জানিয়েছেন দেশটির নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জয়ী হওয়ার পর ঐক্যের ডাক দিয়েছেন ৬৬ বছর বয়সী সাবেক বামপন্থী গেরিলা রুসেফ। বলেছেন, ব্রাজিলীয়রা যে পরিবর্তন চান, তা তিনি জানেন। পরিবর্তন তিনি আনবেন সংলাপের মাধ্যমে। রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশে রুসেফ বলেন, ‘আপনাদের এই প্রেসিডেন্টের সংলাপের জন্য দিল-খোলা। আমার দ্বিতীয় মেয়াদে এটাই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে।’ রুসেফ যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন তাঁর পাশে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা।
সিলভার কাছ থেকে চার বছর আগে রুসেফ যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন যে চাঙা প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি পেয়েছিলেন, তার গতি শ্লথ হতে হতে চলতি বছরে প্রায় মন্দা অবস্থায় ঠেকেছে। বিষয়টি স্বীকারও করে নিলেন রুসেফ। প্রতিশ্রুতি দিলেন, নতুন মেয়াদে নিজের কর্মপথের উন্নয়ন ঘটানোর এবং দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরারও। বললেন, ‘এখন পর্যন্ত যা আছি, তার চেয়ে অনেক ভালো প্রেসিডেন্ট হতে চাই আমি।’ দেশে শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় রুসেফ যে ডাক দিয়েছেন, তাতে সমর্থন দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেভিসও। ৫৪ বছর বয়সী এই সিনেটর জানিয়েছেন, তিনি ফোন করে রুসেফকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মিনাস গেরাইস প্রদেশের রাজধানী বেলো হরিজন্তে শহরে জড়ো হওয়া হতাশ সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নেভিস বলেন, ‘আমি তাঁকে (রুসেফকে) বলেছি, ব্রাজিলকে ঐক্যবদ্ধ করাই হবে সবচেয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ।’ এই প্রদেশেই দুই মেয়াদে গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন নেভিস। রুসেফ ও নেভিস উভয়েরই জন্ম ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মিনাস গেরাইস প্রদেশে। দেশটির দ্বিতীয় জনবহুল এই প্রদেশে রুসেফ ৫২ দশমিক ৪ এবং নেভিস ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এটাই দুই প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্রাজিলে এমন প্রবাদই প্রচলিত আছে যে, যিনি মিনাস জয় করেন, তিনিই ব্রাজিল জয় করেন। দেশের দরিদ্র উত্তরাঞ্চল সব সময়ই রুসেফের বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির (পিটি) ঘাঁটি। আর সমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলে নেভিসের সমর্থন অনেক বেশি। সে হিসেবে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মধ্যবিত্ত ভোটাররা রুসেফের দিকে মুখ তুলে তাকানোয় তিনি উতরে গেছেন।
সামনে বড় চ্যালেঞ্জ: এবারে নির্বাচনকে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে ব্রাজিলে বামপন্থীদের ১২ বছরের শাসনের ওপর একটা গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছিল। ভোটারদের মূল বিবেচনায় ছিল পিটি সরকারের ঐতিহাসিক সামাজিক অগ্রগতির যথার্থতার বিপরীতে নেভিসের ডানপন্থী সোশ্যালিস্ট পার্টির বাজারবান্ধব নীতির মাধ্যমে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি। এই দুই ইস্যু সামনে নিয়ে এসে দুই শিবির নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় একে অপরকে তুলাধোনা করেছে। দেশটির জনগণ এখন এতটাই দ্বিধাবিভক্ত যে, আগামী চার বছর রুসেফকে দেশের শাসনভার পরিচালনা করতে গিয়ে বেশ কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। গেতুলিও ভারগাস ফাউন্ডেশনের রাজনীতি বিশ্লেষক ড্যানিয়েল বারসেলোস ভারগাস বলেন, ‘দিলমার সামান্য ব্যবধানের জয় একটা বড় চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে এসেছে: তাঁকে এখন ভীষণ বিদ্বেষের দ্বারা বিভাজিত ব্রাজিলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’
১৯৪৭ বেলো হরিজন্তে শহরে জন্ম
১৯৭০-৭২ সামরিক শাসনামলে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার
১৯৭৭ অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন
২০০০ ওয়ার্কার্স পার্টিতে (পিটি) যোগদান
২০০৩-২০০৫ লুলা দা সিলভার সরকারের জ্বালানিমন্ত্রী
২০১১-২০১৪ ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
২৬-১০-২০১৪ দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত

No comments

Powered by Blogger.