৬৭০০০ টিয়ারশেল অকেজো

রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ফিল্ড টেস্টে বিস্ফোরিত হয়নি কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত ৬৭ হাজার টিয়ার গ্যাস শেলের মধ্যে নির্বাচিত কয়েকটি। ফলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এসব টিয়ার গ্যাস শেল। বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বুশরা ইন্টারন্যাশনাল’ এসব টিয়ার গ্যাস শেল বদলিয়ে দিচ্ছে। এখনও বদলিকৃত টিয়ার গ্যাস শেলের চালান দেশে এসে পৌঁছেনি। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জিয়ান মানবজমিনকে বলেন, ফিল্ড টেস্টে টিয়ার গ্যাস ফোটেনি। এ কারণে টিয়ার গ্যাসগুলো আমরা বদলিয়ে দিচ্ছি। এদিকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে টিয়ার গ্যাস কেনায় বাজে অভিজ্ঞতার কারণে পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের কার্যাদেশের শর্তে অর্থ পরিশোধের সিডিউলে পরিবর্তন এনেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ কারণে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমস্যার মুখে পড়েছে। দু’একটি দেশ ছাড়া বেশির ভাগ দেশ অর্থ পরিশোধের শর্তে মালামাল সরবরাহে রাজি হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের সময় চীন ও কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত টিয়ার শেল ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত টিয়ার শেল নিয়ে ঝামেলা তৈরি হওয়ায় চীনের তৈরি টিয়ার গ্যাস কেনা হচ্ছে না। এ কারণে কম দর উল্লেখ করে কাজ পেয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলের মালামাল সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান। সূত্র জানায়, এ বছরের প্রথম দিকে ৬৭ হাজার টিয়ার শেল আমদানির জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয় এদেশীয় প্রতিষ্ঠান বুশরা ইন্টারন্যাশনালকে। নিয়ম অনুযায়ী তারা ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপটেনস টেস্ট (ফ্যাট) করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের কোরিয়া নিয়ে যায়। ফ্যাট কার্যক্রমে সন্তুষ্টির পর নির্ধারিত সময়ে ৬৭ হাজার টিয়ার শেল বাংলাদেশে আসে। মালামাল খালাস করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কেন্দ্রীয় গুদামে বুঝিয়ে দেয় ঠিকাদারি কোম্পানি। এরপর ফাইনাল অ্যাকসেপটেনস মিটিং-এ ফিল্ড টেস্টের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ফিল্ড টেস্টের জন্য কয়েকটি টিয়ার গ্যাস নিয়ে যাওয়ার পরই বিপত্তি দেখা দেয়। ফায়ারিং করার পর টিয়ার শেলটি নির্ধারিত দূরত্বে গিয়ে আর ফোটেনি। এমন অবস্থায় পুলিশ সদর দপ্তর বিষয়টি জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দিয়ে টিয়ার শেল বদল করে দেয়ার অনুরোধ জানায়। পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর প্রথমদিকে পাত্তা দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বুশরা। তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে জানানো হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থিত কোরিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে বুশরার প্রিন্সিপাল কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ সদর দপ্তর। এতে কোরিয়ার প্রিন্সিপাল কোম্পানি নমনীয় হয়ে ৬৭ হাজার টিয়ার শেল বদলে নতুন টিয়ার শেল দেয়ার কথা জানায়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নতুন টিয়ার শেলের চালান এখনও দেশে এসে পৌঁছেনি। এদিকে ৬৭ হাজার টিয়ার শেল সরবরাহ ও ফিল্ড টেস্ট পরবর্তী ঘটনার কারণে পুলিশ সদর দপ্তর তাদের কার্যাদেশ শর্তে পরিবর্তন এনেছে। আগে টেন্ডারের মূল্য পরিশোধের শর্তে বলা হতো, মালামাল জাহাজীকরণের পর ৯০ শতাংশ পেমেন্ট পরিশোধ এবং বাকি ১০ শতাংশ পণ্য চূড়ান্ত টেস্টের পর পরিশোধ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে টেন্ডারের মূল্য পরিশোধের শর্তে বলা হচ্ছে, পণ্য জাহাজীকরণের পর ৬০ শতাংশ ও পণ্য আসার পর চূড়ান্ত পরীক্ষায় গ্রহণযোগ্য হলে বাকি ৪০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে। তাই এখন থেকে এ শর্ত মেনেই দরপত্র প্রস্তাব দিতে হচ্ছে ঠিকাদারদের। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ ও যুক্তরাজ্য এদেশে গোলাবারুদ রপ্তানিতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কোরিয়ার ৬৭ হাজার টিয়ার গ্যাসের চালান। এসব নানা কারণে টিয়ার গ্যাসের মজুত নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে ব্রাজিল থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টিয়ার শেল আমদানির প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.