মুখ থেকে মুছে যাক বয়সের ছাপ by ডা: দিদারুল আহসান

সৌন্দর্যপিপাসু সুন্দরী ললনাদের ক্ষেত্রে মুখের দাগ তাদের হতাশার অন্যতম একটি কারণ। এ ক্ষেত্রে তারা অবিরাম ছুটে চলেন ডাক্তারের পর ডাক্তার। খরচে থাকে না তাদের কোনো বাধা, শুধু চাওয়া
এ অবস্থা থেকে মুক্তি। কিন্তু সব সময় তা সফল না হওয়ায় বাড়তে থাকে তাদের হতাশা। লিখেছেন ডা: দিদারুল আহসান

মুখের দাগ দূর করা বর্তমানে আর অসম্ভব নয়। তবে এ জন্য চাই আধুনিক চিকিৎসা ও তার উপকরণ। যে দাগ নিয়ে মহিলারা অহরহই সমস্যায় ভোগেন সেগুলো হলো শ্বেতী রোগ, মেছতা, ছুলি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, পিটিরিয়াসিসএলবা, নেভাস, ফ্রিকেল ইত্যাদি। এর মধ্যে মেছতা একটি অন্যতম বিড়ম্বনার কারণ।
মেছতা
এটি মূলত মহিলাদের মুখে কালো দাগের সৃষ্টি করে। তবে পুরুষের ক্ষেত্রেও হতে দেখা যায়। মেছতার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। যেমন Ñ ষ মেছতা জেনেটিকা ষ মেছতা ইডিওপ্যাথিকা ষ মেছতা একটিনিকা ষ মেছতা কন্ট্রাসেপটিকা ষ মেছতা কসমেটিকা ষ মেছতা মেনোপোজাল ষ মেছতা গ্রেভিডেরাম ষ মেছতা এন্ড্রোক্রাইনোপ্যাথিকা ষ মেছতা আয়ারট্রোজেনিকা ষ মেছতা হেপাটিকা ষ মেছতা ইউমোনোলজিকাল।
মেছতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ অপারেশনের পরে  বিভিন্ন ওষুধ লাগাতে দেয়া হয়। সেই সাথে সূর্যের অতিবেগুনিরশ্মি যাতে মুখে না লাগে তার জন্য সানস্ক্রিন ক্রিম লাগাতে দেয়া হয়।
ক্রায়োথেরাপি
এটি ক্রায়ো এজেন্ট যা অতি হিমাংকে প্রয়োগ করা হয়। যাতে প্রথমে ফোসকা পড়ে এবং কিছু দিন পর চল্টা ধরে শুকনো ফোসকাযুক্ত ত্বক ঝড়ে পড়ে যায় এবং সেখানে ভেতর থেকে নতুন ত্বক গজাতে থাকে।
শ্বেতী রোগ
সাদা মানেই শ্বেতী নয়। অনেক কারণেই ত্বক সাদা হতে পারে। তাই সাদা দেখলেই চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদিও অল্প বয়সী কন্যা বা যুবতী মেয়েদের শ্বেতী হলে বাবা মার ঘুম হারাম হতে দেখা যায়। মনে রাখতে হবে এটি কোনো জীবাণু দিয়ে হয় না। তাই এটি ছোঁয়াছে বা সংক্রামকও নয়। এতে ত্বকের মেলানোসাইট নামক একটি কোষ ধ্বংস হওয়ার ফলে সেখানে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয় না। ফলে ওই স্থানগুলে সাদা হয়ে যায়। স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনÑ
#অস্থিতিশীল বা unstable
#স্থিতিশীল বা stable
এ ক্ষেত্রে ল্যাব পরীক্ষা প্রয়োজন আছে। যার মধ্যে অন্যতম বায়োপসি ও উডস ল্যাম্ব পরীক্ষা। এর বাইরে VDRL ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তের হরমোন পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
শ্বেতী রোগের চিকিৎসা
অস্থিতিশীল শ্বেতীর ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তা না হলে ক্রমান্বয়ে তা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি বা একাধিক ওষুধ প্রয়োগ করে এর বৃদ্ধি বা ছড়ানোর প্রক্রিয়াকে রোধ করা সম্ভব। ফলে শ্বেতী আর বাড়তে পারবে না এবং এর একপর্যায়ে স্থিতিশীল হলে একে তখন অন্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। যেসব শ্বেতী স্থিতিশীল বা একই জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ পদ্ধতি হলো, মিনি পানসগ্রাফটিং। এটি একটি কসমেটিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এতে অপারেশনের মাধ্যমে সুস্থ স্থান থেকে ত্বক এনে শ্বেতীযুক্ত স্থানে প্রতিস্থাপন করতে হয়। আর একটি কথা, শ্বেতীর রোগীকে মনে রাখতে হবে যে, কখনোই যেন সূর্যরশ্মি আক্রান্ত ত্বকে না পড়তে পারে। তার জন্য একটি সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম সব সময় ব্যবহার করতে হবে।
ফ্রিকল বা কালো তিল
অতীতে কেমিক্যাল পিলিং করা হতো। বর্তমানে লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে সাফল্যজনক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রিকল বা মুখের কালো তিলযুক্ত রোগীদের একটি পরামর্শ না দিলেই নয়। মনে রাখবেন, যাদের মুখে তিল বা ফ্রিকল আছে তারা অবশ্যই সতর্ক থাকবেন যেন মুখে সূর্যরশ্মি না পড়তে পারে।
লেখক : চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ, গ্রিনলাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, গ্রিন রোড, ঢাকা।
ফোন : ০১৮১৯২১৮৩৭৮

No comments

Powered by Blogger.