বিভক্ত সরকারের পথে আমেরিকা by মোহাম্মদ হাসান শরীফ

আগামী নভেম্বরে মার্কিন সিনেটের মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বেশির ভাগ জরিপে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রাধান্য ধরে রাখার পাশাপাশি সিনেটেও সামান্য হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। এটা হলে আমেরিকা আগামী দু’টি বছর বিভক্ত সরকারের মুখোমুখি হবে, সেই সাথে মতার ভারসাম্যেও পরিবর্তন ঘটবে। এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাটিক প্রাধান্যপূর্ণ সিনেটের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো ঠেকিয়ে রাখতে সম হচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা না থাকলে রিপাবলিকান কংগ্রেস তার কাছে পাঠানো প্রতিটি বিলে তাকে হয় সই করতে হবে, নয়তো ভেটো দিতে হবে। পরিণতিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে, প্রেসিডেন্টের চুল আরো ধূসর হয়ে যেতে পারে, বিশ্বজুড়ে মিত্রদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিতে পারে। তবে এমনও হতে পারে, দুই প কিছু কিছু কাজ করার অভিন্ন অবস্থান খুঁজে নিয়ে যুক্তিসঙ্গত পদপে গ্রহণ করতে সম্মত হবে। আর তাতে করে যে অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা থাকবে না।
অবশ্য হতাশাবাদীরা মনে করেন, দল দু’টি এত বেশি বিপরীতমুখী অবস্থানে চলে গেছে যে, তাদের পে কোনো কিছুতেই একমত হওয়া সম্ভব হবে না। বিপুলসংখ্যক রিপাবলিকান মনে করেন, ওবামা একটা আস্ত বিপদ। দেশপ্রেমিকদের তাকে ছুড়ে ফেলতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে। তা না হলে দেশে শান্তি আসবে না। অনেক ডেমোক্র্যাটিক বিশ্বাস করেন, রিপাবলিকানদের সাথে সমঝোতায় আসার কোনো সুযোগই নেই। তারা বরং চান ওবামা তার শেষ দুই বছর কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী মতা ব্যবহার করে যাবেন। সেই সাথে তিনি গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ, গুয়ানতানামো বে বন্দিশালা বন্ধ করে দেয়ার মতো প্রগতিশীল ল্য হাসিলে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এমন এক প্রোপটে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইন ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত পাস হবে বলে মনে হয় না।
আশাবাদী শিবিরের ভাষ্য হলো, রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের উভয় শাখায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠামাত্রই কেবল সাইড লাইন থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি করবে না। তারা ইতিবাচক কিছু কাজ দেখাতে না পারলে ২০১৬ সালে তাদের এই উত্থান মুখ থুবড়ে পড়বে। আর ওবামা স্মরণীয় হতে চাইলে তাকে তাদের সাথে কাজ করতে হবে। ফলে দুই পই একটা পথ বের করে নেবে।
রিপাবলিকানরা মনে করে, এমন সমঝোতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক নেতা হ্যারি রিড। পাস হয়ে যেতে পারে, এমনটি মনে করে তিনি সহজে রিপাবলিকানদের সংশোধনীগুলো ফোরে আসতে দিতে চাইবেন না। প্রতিনিধি পরিষদ নিয়েও একই ধরনের ধারণা পোষণ করেন অনেক রিপাবলিকান।
রিপাবলিকান সিনেটর বব কর্কার চমকপ্রদ দাবি করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্টের সাথে ব্যক্তিগত সাাৎ করে বলেছেন, নভেম্বরে ডেমোক্র্যাটরা হেরে গেলে তিনি আমেরিকার দীর্ঘস্থায়ী রাজস্ব জটিলতা কাটানোর কাজটি সহজ করে দেবেন। তার মতে, ওই সময় উভয় পই দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার জন্য চাপে থাকবে।
কর্কারের মতে, সিনেটে রিপাবলিকানরা জয়ী হলে অবাধ বাণিজ্য, করপোরেট ট্যাক্স সংস্কার, ঘাটতি হ্রাস, কেন্দ্রীয় মহাসড়ক তহবিল, ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধের আইনি ভিত্তি পুনর্মূল্যায়নের মতো বিষয়ে যে অচলাবস্থা চলছে, তার অবসান হতে পারে। তার সাথে মধ্যপন্থী অনেক রিপাবলিকানও একমত। সিভিল রাইটস অ্যাক্ট থেকে শুরু করে কিনটন-যুগের ওয়েলফেয়ার সংস্কারের মতো টেকসই সংস্কারগুলো তো হয়েছে উভয় দলের সম্মিলিত সমর্থনে। এক দলের সমর্থনে পাস হওয়া আইনগুলোর বৈধতা থাকে অনেক কম। আর নির্বাহী মতার প্রয়োগে যেসব আইন পাস হয়, সেগুলোর স্থায়িত্ব হয় খুবই কম।
দুই প সমঝোতায় আসতে পারবে কি না তার একটা বড় পরীা হবে বাজেট পাসের সময়। ওই সময়ে ঋণের সীমারেখা না বাড়ালে জাতীয় পর্যায়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক রিপাবলিকান মনে করছেন, গতবার তারা যে আচরণ করেছিলেন, সেটা অর্থনীতিবিদেরা তো নয়ই, ভোটাররাও পছন্দ করেনি।
পল রাইয়ানের (হাউজ বাজেট কমিটির চেয়ারম্যান ও ২০১২ সালের নির্বাচনে মিট রমনির রানিংমেট) মতো সুপরিচিত কোনো কোনো রিপাবলিকান মনে করেন, তারা দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করে লাভবান হতে পারবেন। ওবামা সই করবেন, রিপাবলিকান প্রাধান্যপূর্ণ কংগ্রেস এমন সহনীয় বিল খুব কমই পাস করবে। ফলে ওবামাকে প্রায়ই ভেটো প্রয়োগ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রিপাবলিকানরা হয়তো অনেক দিন ধরে স্থগিত হয়ে থাকা কানাডার তেল আমেরিকার শোধনাগারে আনার বিলটি পাস করতে চাইবে। কিন্তু পরিবেশবাদীদের আপত্তির মুখে ওবামা তাতে ভেটো দিতে পারেন। সে েেত্র রিপাবলিকানরা দাবি করতে পারবেন, ওবামা চাকরির সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ ওবামা সই করলেও বিপদে পড়বেন, না করলেও সমালোচনার মুখে পড়বেন।
তবে সবাই আশাবাদী নন। কট্টরপন্থী অনেকেই ওবামার সাথে কাজ করার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের মতে, ওবামা পুরোপুরি আত্মসমর্পণ না করলে এবং তার স্বাস্থ্য পরিচর্যানীতি বাতিল না করলে তারা তার সাথে কাজ করতে পারবেন না। তারা যতটা সম্ভব ওবামাকে ‘পচিয়ে’ দেয়ার কাজটি করার পপাতী।
আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনণ এগিয়ে আসায় ‘আপসহীন’ গ্র“পটি আরো সোচ্চার হচ্ছে। সিনেটর টেড ক্রুইজের মতো যারা প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তারা ওবামার ওপর নতুন করে আক্রমণ শানাতে পারেন। অনেকে এমনটাও ধারণা করেন, বিভক্ত সরকার যে কাজ করতে পারে নাÑ  এমন ধারণার সৃষ্টি এবং ওবামাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারলেই ২০১৬ সালে রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারবে।
তবে নভেম্বরের সিনেট নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরা খাতে ওবামার নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশই থাকবে। সরকারি সংস্থাগুলো কিভাবে বিধিবিধান কার্যকর করবে, সে ব্যাপারেও তিনি পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবেন। তবে বিচারক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকার নিয়োগের বিষয়গুলো রিপাবলিকান সিনেটে পাস করার বাধ্যবাধকতা থাকায় তার কপালে চিন্তার রেখা দেখা যেতে পারে। বিষয়টা নিশ্চিতভাবেই তাকে ভোগাবে। অর্থাৎ হোয়াইট হাউজে ওবামার দিনগুলো সুখকর হচ্ছে না, তা বলা যায় নিশ্চিতভাবেই। তবে তিনি দুঃসহ পরিস্থিতি কতটুকু সহনীয় করে তুলতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।
(ইকোনমিস্ট অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.